ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: ২০২৪ সালের ৫ অগস্ট— বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এমন একটি দিন, যার প্রভাব দীর্ঘ সময় ধরে অনুভূত হবে(Bangladesh Revolution)। অনেকে এই ঘটনার তুলনা টানছেন ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর (মুক্তিযুদ্ধের বিজয়) এবং ১৯৭৫ সালের ১৫ অগস্ট (শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ড)-এর সঙ্গে। কারণ, শেখ হাসিনার ১৬ বছরের শাসনের অবসান শুধু একটি সরকারের পতন নয়, বরং বাংলাদেশের রাজনৈতিক কাঠামো ও ভবিষ্যতের উপর গভীর প্রভাব ফেলেছে।
গণআন্দোলন থেকে ক্ষমতার পতন (Bangladesh Revolution)
গত বছরের জুলাই মাসের গোড়ায় শুরু হয়েছিল কোটা সংস্কার আন্দোলন, যা পরে রূপ নেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে। এই আন্দোলন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে সারাদেশে। সরকার আন্দোলন দমন করতে গেলে রক্তপাত ঘটে, যার ফলে গণঅভ্যুত্থানের পরিস্থিতি তৈরি হয়। ২০২৪ সালের ৫ অগস্ট পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় এবং শেখ হাসিনা দেশ ছাড়তে বাধ্য হন। তিনি বর্তমানে ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন।
হাসিনার অনুপস্থিতিতে তাঁর বিরুদ্ধে একের পর এক ফৌজদারি মামলা রুজু হয়েছে। প্রায় ২৫০টি মামলা দায়ের হয়েছে তাঁর নামে, যার মধ্যে ১৯৮টি খুনের অভিযোগ। হাসিনা-সহ ১৪৩ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। গত রবিবার মানবতা-বিরোধী অপরাধের মামলায় প্রথম সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়েছে, যেখানে অভিযুক্ত করা হয়েছে হাসিনাকে।
ইউনূসের উত্থান ও নতুন রাজনৈতিক সমীকরণ (Bangladesh Revolution)
হাসিনার পতনের পরে দেশের দায়িত্ব তুলে দেওয়া হয় নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের হাতে। কিন্তু তাঁর ক্ষমতায় আসা নিয়ে বিতর্ক থামছে না। অনেকে বলছেন, ইউনূস দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতিতে আসার চেষ্টা করেছেন। ২০০৭ সালে সেনা-সমর্থিত সরকারের সময়ে তিনি রাজনৈতিক দল গঠনের উদ্যোগ নিয়েছিলেন।
ইউনূসের (yunus) সঙ্গে জামায়াতে ইসলামি ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-র ঘনিষ্ঠতা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময়ে বিদেশে থাকা সত্ত্বেও ছাত্রনেতাদের সঙ্গে তাঁর নিয়মিত যোগাযোগ ছিল বলে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম দাবি করেছে।

‘মাইনাস টু’ তত্ত্বের বিতর্ক (Bangladesh Revolution)
বাংলাদেশের রাজনীতিতে এখন সবচেয়ে আলোচিত বিষয় ‘মাইনাস টু’ তত্ত্ব— আওয়ামী লীগ ও বিএনপি উভয়কেই ক্ষমতার বাইরে রাখার পরিকল্পনা। এনসিপি ইতিমধ্যেই তাদের ২৪ দফার নতুন ইশতেহার ঘোষণা করেছে, যেখানে গণতন্ত্র ও সামাজিক সুবিচারের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।
কিন্তু বিএনপি এই পরিকল্পনায় অসন্তুষ্ট। তারা অভিযোগ তুলেছে, অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচনের আয়োজন ইচ্ছাকৃতভাবে পিছিয়ে দিচ্ছে। বিএনপি-র চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া অসুস্থ থাকলেও পরবর্তী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলে ঘোষণা করেছে দলটি। তারেক রহমানও লন্ডন থেকে দেশে ফিরতে পারেন বলে খবর।

জামায়াতের প্রভাব ও মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহ্যের সঙ্কট (Bangladesh Revolution)
অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে জামায়াতে ইসলামির প্রভাব বাড়ছে, যা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী রাজনৈতিক দলগুলিকে উদ্বিগ্ন করছে। ইতিহাস বলছে, ১৯৭১ সালে জামায়াত পাকিস্তানি বাহিনীর সহযোগী ছিল। অথচ এখন অন্তর্বর্তী সরকারের একাধিক পদে জামায়াত-ঘনিষ্ঠদের উপস্থিতি স্পষ্ট।
বিএনপি এবং আওয়ামী লীগ— দুই দলের ঐতিহ্যই মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে যুক্ত। আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়েছিল, আর বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন। তাই জামায়াতের উত্থান নিয়ে রাজনৈতিক মহলে তীব্র উদ্বেগ।
আইনশৃঙ্খলা ও জনজীবনের সংকট (Bangladesh Revolution)
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার এক বছরের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসেনি। মূল্যবৃদ্ধি, রাজনৈতিক সহিংসতা এবং সংখ্যালঘুদের উপর হামলার ঘটনা উদ্বেগ বাড়াচ্ছে। এনসিপি সভায় আওয়ামী সমর্থকদের প্রতিবাদে সংঘর্ষ, গোপালগঞ্জ ও ময়নসিংহে উত্তেজনা— এগুলো প্রমাণ করছে অস্থিরতা এখনও কাটেনি।
পুলিশ-সেনার গুলিতে প্রাণহানির অভিযোগও সামনে এসেছে। সেনা হস্তক্ষেপের জল্পনা তৈরি হলেও, জেনারেল ওয়াকার উজ জামানের নেতৃত্বাধীন সেনা এখনও অন্তর্বর্তী সরকারের পাশে রয়েছে।
হাসিনার বিচার নতুন অধ্যায়ের সূচনা? (Bangladesh Revolution)
মানবতা-বিরোধী অপরাধের মামলায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে প্রথম সাক্ষ্যগ্রহণ লাইভ সম্প্রচার করা হয়েছে। প্রসিকিউশনের দাবি, প্রমাণ এতটাই শক্তিশালী যে বিচারে সন্দেহের অবকাশ থাকবে না।
বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ কোন পথে? (Bangladesh Revolution)
বাংলাদেশ এখন রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার কেন্দ্রে। নির্বাচন না হলে অস্থিরতা বাড়বে, আর জামায়াত ও এনসিপি-র প্রভাব গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎকে প্রশ্নের মুখে ফেলছে। হাসিনার বিচার ও তাঁর অনুগামীদের প্রতিরোধ নতুন সংঘাতের জন্ম দিতে পারে।
প্রশ্ন একটাই—
বাংলাদেশ কি গণতন্ত্রের পথে ফিরবে, নাকি নতুন এক অস্থির যুগের সূচনা হবে?