ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: রাশিয়ার থেকে অপরিশোধিত খনিজ তেল কেনার ফলে ভারতের উপর চড়া শুল্ক আরোপ করলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প (US Tariff On India)। তাঁর অভিযোগ, ভারত প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে রাশিয়ার তেল শিল্পকে মদত দিচ্ছে, যা আমেরিকার বিদেশনীতি ও নিষেধাজ্ঞার পরিপন্থী। এরই জেরে ভারতীয় পণ্যের উপর ২৫ শতাংশ অতিরিক্ত রফতানি শুল্ক চাপিয়েছেন ট্রাম্প (Donald J. Trump), যার সঙ্গে পূর্বঘোষিত ২৫ শতাংশ মিলিয়ে মোট শুল্ক দাঁড়িয়েছে ৫০ শতাংশ।
এই সিদ্ধান্তে কার্যত চাপে পড়েছে ভারতীয় বাণিজ্য মহল। কারণ এতটা উচ্চ হারে শুল্ক দেওয়ার ফলে ভারতের বহু পণ্যের প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা হারিয়ে যাচ্ছে মার্কিন বাজারে। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, এই শুল্ক আরও বাড়তে পারে এবং দীর্ঘমেয়াদে ভারতের আমদানি-রফতানি ভারসাম্যকে প্রভাবিত করতে পারে।
আর্থিক বোঝা কতটা বাড়বে? (US Tariff On India)
এই পরিস্থিতিতে সম্প্রতি স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার (এসবিআই) একটি গবেষণা রিপোর্ট প্রকাশ পেয়েছে, যেখানে তুলে ধরা হয়েছে রাশিয়ার বিকল্পে অন্য দেশ থেকে তেল আমদানির ক্ষেত্রে ভারতের অতিরিক্ত খরচের হিসাব(US Tariff On India)।। রিপোর্ট অনুযায়ী, ভারত যদি রাশিয়ার সঙ্গে তেল কেনাবেচা বন্ধ করে দেয়, তাহলে চলতি অর্থবর্ষ (২০২৫-২৬)-তেই অতিরিক্ত ৯০০ কোটি মার্কিন ডলার বা প্রায় ₹৭৯,০০০ কোটি খরচ করতে হবে। এই পরিমাণ ২০২৬-২৭ সালে গিয়ে দাঁড়াবে প্রায় ১,২০০ কোটি ডলার, অর্থাৎ ভারতীয় মুদ্রায় এক লক্ষ কোটি টাকারও বেশি।
এসবিআই-র প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, বিকল্প হিসাবে ভারত ইরাক, সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরশাহির মতো দেশগুলির দিকে ঝুঁকতে পারে। তবে রাশিয়ার মতো সস্তায় তেল কোথাও থেকে পাওয়া দুষ্কর, কারণ ইউক্রেন যুদ্ধের পর থেকে রাশিয়া বিশেষ ছাড়ে তেল দিচ্ছে ভারতের মতো মিত্র দেশগুলোকে।
রাশিয়ার তেল কতটা সাশ্রয়ী? (US Tariff On India)
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত রাশিয়ার কাছ থেকে ব্যারেলপ্রতি গড়ে মাত্র ৬৫.৬৬ মার্কিন ডলারে তেল কিনেছে ভারত(US Tariff On India)।। বিশ্ববাজারে যেখানে ওই সময়ের হার ছিল ৮০-৯০ ডলারের আশেপাশে, সেখানে এই দর ভারতীয় অর্থনীতিকে বড় সাশ্রয় দিয়েছে। এর ফলেই ঘরোয়া বাজারে মুদ্রাস্ফীতির হার নিয়ন্ত্রণে রাখা গেছে এবং সাধারণ মানুষের উপর জ্বালানির খরচ তেমন চাপ ফেলেনি।

আরও পড়ুন: Donald Trump : শুল্ক আরোপে ব্রাজিল ও ভারতের পাশে মার্কিন ঘনিষ্ট পাকিস্তানের ‘দাদা’ চিন!
মুদ্রাস্ফীতির ঝুঁকি বাড়বে? (US Tariff On India)
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, রাশিয়া থেকে তেল আমদানি বন্ধ হলে জ্বালানির খরচ বাড়বে, যার সরাসরি প্রভাব পড়বে মুদ্রাস্ফীতির উপর। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বাড়তে পারে এবং খুচরো বাজারে চাহিদা কমে যেতে পারে। ফলে সামগ্রিক ভাবে অর্থনীতিতে ধাক্কা লাগার আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে।
ভারতের অবস্থান কী? (US Tariff On India)
ভারতের তরফে এখনো পর্যন্ত কোনও নমনীয়তার ইঙ্গিত মেলেনি(US Tariff On India)।। বরং নয়াদিল্লি স্পষ্ট জানিয়েছে, তাদের বাণিজ্যনীতি নির্ধারণ হয় জাতীয় স্বার্থ এবং বৈশ্বিক বাজারের বাস্তবতা বিবেচনা করে। বিদেশ মন্ত্রক সূত্রে খবর, সস্তায় তেল পাওয়া গেলে ভারত তা কিনবে, কারণ এতে দেশের অভ্যন্তরীণ অর্থনীতির সুবিধা হয়।

রাশিয়ার সস্তা তেলের উপর নির্ভরতা (US Tariff On India)
রাশিয়ার সস্তা তেলের উপর নির্ভর করে ভারতের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়েছে গত কয়েক বছর ধরে(US Tariff On India)।। এই জ্বালানি নীতির মাধ্যমে মোদী সরকার যেমন অর্থনীতি সচল রাখতে পেরেছে, তেমনই সাধারণ মানুষের উপর জ্বালানির বোঝা কমাতে পেরেছে। কিন্তু ট্রাম্পের শুল্ক যুদ্ধ পরিস্থিতিকে জটিল করে তুলছে। এখন দেখার, ট্রাম্প প্রশাসন ভারতের সঙ্গে কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে কোনও সমঝোতায় পৌঁছায় কিনা, নাকি বাণিজ্য যুদ্ধ আরও তীব্র হয়।
এখনই ভারত যদি রাশিয়া থেকে তেল আমদানি বন্ধ করে, তবে তা দেশের অর্থনীতি এবং জনগণের জীবনযাত্রার উপর দীর্ঘমেয়াদে প্রভাব ফেলবে—এ বিষয়ে সন্দেহ নেই। তাই ভারতের সামনে বড় প্রশ্ন, জাতীয় স্বার্থে কী রকম পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া উচিত।