ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল : একটির পর একটি বিদ্রোহী হামলায় বিপর্যস্ত পাকিস্তান সরকার বালোচিস্তান প্রদেশে মোবাইল ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে(Balochistan Crisis)। শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের সরকার ঘোষণা করেছে, প্রাথমিকভাবে এই নিষেধাজ্ঞা তিন সপ্তাহ বলবৎ থাকবে।
মোবাইল ইন্টারনেট পরিষেবার অপব্যবহার (Balochistan Crisis)
ইসলামাবাদের (Shehbaz Sharif) সরকারি বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, মোবাইল ইন্টারনেট পরিষেবার অপব্যবহার করে ‘পাকিস্তান-বিরোধী শক্তি’ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিঘ্নিত করতে পারে—এমন আশঙ্কার ভিত্তিতে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে(Balochistan Crisis)। প্রশাসনের দাবি, এটি একটি আগাম সতর্কতামূলক ব্যবস্থা, যার লক্ষ্য বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর যোগাযোগ ব্যাহত করা।
সরকারের এই সিদ্ধান্ত আসে বালোচিস্তানের নৌশকি জেলায় বুধবার ভোরে ঘটে যাওয়া একটি প্রাণঘাতী হামলার পরপরই। ওই ঘটনায় বালোচিস্তান লিবারেশন আর্মির (বিএলএ) হামলায় এক মেজর-সহ তিন পাক সেনা নিহত হন। এই ঘটনার মাত্র দুই দিন পর, শুক্রবার ভোরে বালোচিস্তান-আফগানিস্তান সীমান্তে সংঘর্ষে ৩৩ জন বিদ্রোহী নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ দফতর (আইএসপিআর)।
একাধিক হামলার তদন্ত (Balochistan Crisis)
প্রশাসনের সূত্র অনুযায়ী, সাম্প্রতিক একাধিক হামলার তদন্তে দেখা গেছে, বিদ্রোহীরা হামলার পরিকল্পনা ও নিজেদের মধ্যে সমন্বয় করার জন্য সক্রিয়ভাবে মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহার করেছে(Balochistan Crisis)। এই প্রযুক্তিগত সুবিধা বন্ধ করে দেওয়াই সরকারের মূল উদ্দেশ্য।
এদিকে, বালোচিস্তান বিদ্রোহের পরিধি ক্রমেই বাড়ছে। চলতি বছরের শুরুতে তিনটি সশস্ত্র গোষ্ঠী—বালোচিস্তান লিবারেশন আর্মি (বিএলএ), বালোচিস্তান লিবারেশন ফ্রন্ট (বিএলএফ) ও বালোচ রিপাবলিকান গার্ডস (বিআরজি)—একত্রিত হয়ে নতুন একটি যৌথমঞ্চ গঠন করে। এই জোটে যোগ দিয়েছে সিন্ধুপ্রদেশে সক্রিয় বিদ্রোহী সংগঠন ‘সিন্ধুদেশ রেভলিউশনারি আর্মি’ (এসআরএ)। এই একত্রীকরণের পর থেকেই পাকিস্তানের সেনা ও প্রশাসনিক লক্ষ্যবস্তুতে ধারাবাহিক হামলা চালানো হচ্ছে।

আরও পড়ুন: Israel Hamas Conflict : গাজা দখল নয়, হামাস নির্মূল ও শান্তিপূর্ণ প্রশাসনের লক্ষ্য নেতানিয়াহুর
মানুষের দৈনন্দিন জীবন ক্ষতিগ্রস্ত (Balochistan Crisis)
বিশ্লেষকদের মতে, মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধের ফলে সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবন, ব্যবসা-বাণিজ্য এবং শিক্ষাক্ষেত্রও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তবে সরকারের মতে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও বিদ্রোহ দমনই এখন অগ্রাধিকার(Balochistan Crisis)।
বালোচিস্তান পাকিস্তানের বৃহত্তম প্রদেশ হলেও বহু বছর ধরে রাজনৈতিক বঞ্চনা, অর্থনৈতিক বৈষম্য ও স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে আন্দোলন চলছে সেখানে। বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো দাবি করে, প্রদেশের প্রাকৃতিক সম্পদ থেকে প্রাপ্ত আয়ের ন্যায্য অংশ তারা পাচ্ছে না এবং কেন্দ্রীয় সরকার অঞ্চলটিকে অবহেলা করছে। অপরদিকে, ইসলামাবাদ এই আন্দোলনগুলিকে ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী ও সন্ত্রাসী কার্যকলাপ’ হিসেবে আখ্যা দেয়।

আরও পড়ুন: US Tariff War : শুল্ক প্রত্যাহার করলে ক্ষতি হবে যুক্তরাষ্ট্রের! ট্রাম্পের নিশানায় মার্কিন আদালত
ইন্টারনেট নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত (Balochistan Crisis)
সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তিন সপ্তাহ পর পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে ইন্টারনেট নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে(Balochistan Crisis)। তবে অতীত অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, বালোচিস্তানে এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা প্রায়শই দীর্ঘায়িত হয়।
পর্যবেক্ষকদের মতে, সাম্প্রতিক সহিংসতার মাত্রা এবং বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর ঐক্যবদ্ধ হওয়ার প্রবণতা ইঙ্গিত দিচ্ছে, আগামী দিনে বালোচিস্তান আরও অশান্ত হতে পারে। ফলে ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রাখা হয়তো স্বল্পমেয়াদে বিদ্রোহীদের কৌশল ব্যাহত করবে, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে সমস্যার স্থায়ী সমাধান নাও দিতে পারে।