Last Updated on [modified_date_only] by Debu Das
ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল : ভারতের সামরিক ক্ষমতা সম্প্রসারণের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ হল দেশের নিউক্লিয়ার সাবমেরিন ফ্লিট(Indian Nuclear Submarine) । ভারতের ড্রাগনফ্লাই প্রজেক্ট বা ‘অ্যাটোমিক সাবমেরিন প্রোগ্রাম’ বহু বছর ধরে ধাপে ধাপে এগোচ্ছে। এই প্রোগ্রামের প্রধান দুইটি স্থলচ্যুত কৌশলগত উপাদান হল আইএনএস অরিহন্ত (INS Arihant) এবং আইএনএস আরিঘাট (INS Arighat)। এরা ভারতের প্রতিরক্ষা নীতি, সমুদ্রসীমা রক্ষা, এবং কৌশলগত আত্মনির্ভরতার প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হয়।
আইএনএস অরিহন্ত (Indian Nuclear Submarine)
আইএনএস অরিহন্ত ভারতের প্রথম স্বদেশে নির্মিত নৌ-সেনার (Indian Navy) নিউক্লিয়ার(Indian Nuclear Submarine)পাওয়ারড সাবমেরিন (SSBN)। এটি ভিকারেন্টি নৌবাহিনী নির্মাণ কেন্দ্র (Visakhapatnam)-এ তৈরি করা হয়েছিল এবং ২০১৬ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে নৌবাহিনীতে যুক্ত হয়। সাবমেরিনটির দৈর্ঘ্য প্রায় ১১১ মিটার এবং ওজন প্রায় ৬,০০০ টন (ডুবন্ত অবস্থায়)।
অরিহন্তের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল এর নিউক্লিয়ার রিয়্যাক্টর (Pressurized Water Reactor – PWR)। এটি সাবমেরিনকে দীর্ঘ সময় সমুদ্রের মধ্যে স্থিরভাবে থাকার ক্ষমতা দেয়(Indian Nuclear Submarine) । প্রতি ৩০ বছর ধরে এই রিয়্যাক্টর ব্যবহার করা সম্ভব, যা ক্রমাগত চলমান শক্তি সরবরাহ করে।
সাবমেরিনটি কৌশলগত ক্ষেপণাস্ত্র বাহিত (ballistic missile capable)। এটি কস্টাল ওফশোর ৭০০ কিমি-দৈর্ঘ্যের কেজি-২ (K-15) এবং ২০০০ কিমি-দৈর্ঘ্যের কেজি-৪ (K-4) ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করতে সক্ষম(Indian Nuclear Submarine) । এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলির মাধ্যমে অরিহন্ত প্রকৃতপক্ষে তিন স্তরের নিউক্লিয়ার প্রতিরক্ষা কাঠামোর অংশ হিসেবে কাজ করে। অর্থাৎ, যদি স্থল বা আকাশ থেকে আক্রমণ হয়, সমুদ্র থেকে ভারতের প্রতিরক্ষা নিশ্চিত করা সম্ভব।
অরিহন্তের স্টিল হালকা কংক্রিট এবং অডিও-স্টিল কনস্ট্রাকশন এটি খুব কম শব্দ সৃষ্টি করে। ফলে এটি রাডার বা সনরের চোখে পড়ে না। সাবমেরিনের ক্রুজিং স্পিড ২৪–২৫ কিলোমিটার/ঘণ্টা এবং ডুবন্ত গভীরতা প্রায় ৩০০–৩৫০ মিটার, যা এটিকে আক্রমণ থেকে রক্ষা করে।
আইএনএস অরিহন্তের অন্যতম বড় বৈশিষ্ট্য হলো এর স্টিলথ অপারেশন। এটি নিরবিচ্ছিন্নভাবে ৭০ দিনের বেশি সমুদ্রে থাকতে সক্ষম, যা দীর্ঘসীমা অভিযান এবং দ্বিপাক্ষিক উত্তেজনা মোকাবেলায় গুরুত্বপূর্ণ।
আইএনএস আরিঘাট, আধুনিক ও শক্তিশালী ভার্সন (Indian Nuclear Submarine)
অরিহন্তের সাফল্যের পর ভারতের নেক্সট জেনারেশন সাবমেরিন আইএনএস আরিঘাট নির্মাণ করা হয়। এটি অরিহন্ত ক্লাসের দ্বিতীয় সাবমেরিন, কিন্তু অনেক উন্নত প্রযুক্তি সংবলিত(Indian Nuclear Submarine) ।
আইএনএস আরিঘাটের দৈর্ঘ্য প্রায় ১২০ মিটার এবং ডুবন্ত অবস্থায় ওজন প্রায় ৭,০০০ টন। এটি নতুন K-4 এবং K-5 ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র বহন করতে সক্ষম, যার মাধ্যমে ক্ষেপণাস্ত্রের দূরত্ব ৩,৫০০ কিমি পর্যন্ত। অর্থাৎ, এটি ভারতের প্রতিরক্ষা রেডিয়াস বাড়াচ্ছে এবং দূরবর্তী অঞ্চলে স্ট্রাইক সক্ষমতা নিশ্চিত করছে।
আরিঘাটে অ্যাডভান্সড সাইলেন্ট প্রপালশন সিস্টেম (pump-jet propulsion) ব্যবহার করা হয়েছে। এটি সাবমেরিনকে আরও কম শব্দে চালাতে সাহায্য করে, ফলে শত্রু সনরকে এড়িয়ে চলা সহজ হয়। সাবমেরিনটির গোপনীয়তার মান সর্বোচ্চ পর্যায়ে রাখা হয়েছে, যা ভারতকে সমুদ্রের কৌশলগত ভারসাম্যে শক্তিশালী অবস্থানে রাখে(Indian Nuclear Submarine) ।
আরিঘাটে নিউক্লিয়ার রিয়্যাক্টর ক্ষমতা আগের চেয়ে উন্নত এবং দীর্ঘ সময় ধরে সমুদ্রের মধ্যে থাকার সক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে। এটি নিরবিচ্ছিন্নভাবে ৯০ দিন পর্যন্ত সমুদ্রে অভিযানে থাকতে পারে, যা ভারতে স্থল বা আকাশ থেকে আক্রমণ হলে প্রতিক্রিয়ার জন্য সময় বাড়ায়।

আরও পড়ুন : Indian Army Top 5 Operation : ভারতীয় সেনার ৫ নির্ভীক অভিযান!
অপারেশনাল দক্ষতা ও কৌশলগত গুরুত্ব(Indian Nuclear Submarine)
আইএনএস অরিহন্ত এবং আরিঘাটের মূল উদ্দেশ্য হলো সর্বদা কৌশলগত ডিটারেন্স নিশ্চিত করা। এই সাবমেরিনগুলো ত্রিস্তরীয় প্রতিরক্ষা নীতির অংশ(Indian Nuclear Submarine) । অর্থাৎ, ভারত স্থল, আকাশ ও সমুদ্র তিন দিক থেকেই কৌশলগত সক্ষমতা প্রদর্শন করতে সক্ষম।
- ডিটারেন্স নীতি: এটি নিশ্চিত করে যে, কোনও শত্রু ভারতীয় স্থল বা আকাশে আক্রমণ করলে সমুদ্র থেকে প্রতিরোধ সম্ভব।
- গোপন অভিযান: দীর্ঘকাল সমুদ্রে অবস্থান এবং কম শব্দের প্রযুক্তি শত্রুর নজর এড়িয়ে চলতে সহায়ক।
- নিউক্লিয়ার স্ট্রাইক ক্ষমতা: K-4 ও K-5 ক্ষেপণাস্ত্র বহন ক্ষমতা ভারতের প্রতিরক্ষা নীতি ও কৌশলগত আস্থা বাড়াচ্ছে।
ভারতের সাবমেরিনগুলো সমুদ্রের বিভিন্ন অঞ্চলে নিয়মিত পরীক্ষামূলক অভিযান চালাচ্ছে। এর মাধ্যমে প্রতিরক্ষা বাহিনী কৌশলগত পরিস্থিতি অনুযায়ী প্রস্তুত থাকে(Indian Nuclear Submarine) । এছাড়া, আন্তর্জাতিক জলসীমায় ভারতের ক্ষমতা প্রদর্শনের মাধ্যমে সমুদ্রের কৌশলগত ভারসাম্য বজায় রাখার সুযোগ তৈরি হয়।
আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট ও প্রতিরক্ষা কৌশল(Indian Nuclear Submarine)
ভারতের এই সাবমেরিন প্রোগ্রাম চীন ও পাকিস্তানের প্রতি কৌশলগত সংকেত হিসেবে বিবেচিত হয়(Indian Nuclear Submarine) । বিশেষজ্ঞদের মতে, চীনের ড্রাগন ক্লাস সাবমেরিন এবং পাকিস্তানের এসএসবিএন সক্ষমতা বিবেচনায় ভারতকে শক্তিশালী সমুদ্র সক্ষমতা তৈরি করা প্রয়োজন।
নিউজ অনুসারে, ভারত সমুদ্রের গভীরতা ও চ্যালেঞ্জিং জলবায়ুতে সাবমেরিন পরিচালনার অভিজ্ঞতা অর্জন করছে। এদের মাধ্যমে ভারত দূরবর্তী অঞ্চলে প্রতিরক্ষা শক্তি পাঠাতে সক্ষম হচ্ছে, যা জাতীয় নিরাপত্তা এবং ভূ-রাজনৈতিক প্রভাব বৃদ্ধি করছে।
আরও পড়ুন : Operation Whitewash : ভারতের রহস্যময় KALI অস্ত্রে কীভাবে ধরাশায়ী হয়েছিল পাকিস্তান?
ভবিষ্যতের পরিকল্পনা(Indian Nuclear Submarine)
ভারত আরও উন্নত সাবমেরিন তৈরির পরিকল্পনা করছে(Indian Nuclear Submarine) । বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ভবিষ্যতের আরেকটি ক্লাসের সাবমেরিন K-6 ক্ষেপণাস্ত্র বহনক্ষমতা এবং আরও দীর্ঘ সময় ধরে সমুদ্রে থাকার ক্ষমতা থাকবে। এটি ভারতের ত্রিস্তরীয় প্রতিরক্ষা নীতি এবং কৌশলগত স্বয়ংসম্পূর্ণতা নিশ্চিত করবে।
আইএনএস অরিহন্ত এবং আইএনএস আরিঘাট ভারতীয় নৌবাহিনীকে নিরাপত্তা, আত্মনির্ভরতা এবং সমুদ্রের কৌশলগত ক্ষমতা প্রদর্শনের একটি শক্তিশালী হাতিয়ার হিসেবে দাঁড় করিয়েছে। এদের মাধ্যমে ভারত ত্রিস্তরীয় প্রতিরক্ষা কাঠামোতে সমুদ্রের দিক থেকে শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করতে সক্ষম হচ্ছে, যা দেশের প্রতিরক্ষা নীতি এবং আন্তর্জাতিক কৌশলগত প্রভাবকে বহুগুণে বৃদ্ধি করছে।