Last Updated on [modified_date_only] by Debu Das
ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল : সপ্তাহ কয়েক আগে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প (Donald J. Trump) ভারতীয় পণ্যের উপর ৫০ শতাংশ শুল্ক চাপিয়ে বাণিজ্য চুক্তির আলোচনা স্থগিত করেছিলেন (India US Trade Deal)। কিন্তু শেষমেশ মনে হচ্ছে আমেরিকা নিজেই আলোচনায় ফেরার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মঙ্গলবার নয়াদিল্লিতে দুই দেশের প্রতিনিধিদলের মধ্যে সরাসরি বৈঠকে পুনরায় শুরু হলো বাণিজ্য আলোচনা।
আমেরিকার নতুন প্রস্তাব : দুধ নয়, চিজ ও ভুট্টা (India US Trade Deal)
ওয়াশিংটন এইবার দাবি কমিয়েছে। ভারতের বিশাল দুগ্ধবাজারে প্রবেশের পরিবর্তে তারা কেবল প্রিমিয়াম ‘চিজ’ বিক্রি করতে চাইছে (India US Trade Deal)। মার্কিন বাণিজ্য কর্মকর্তাদের মতে, মিল্ক বা দই নয়—উচ্চমানের ব্লু-ভেইনড, আর্টিসানাল বা পাউডার চিজ ভারতকে আমদানি করতে রাজি করানো সম্ভব।
ভারতের মাত্র ২ থেকে ৫ শতাংশ মানুষ এই ধরনের পণ্য ব্যবহার করেন। এখন পর্যন্ত ইতালি, লিথুয়ানিয়া বা যুক্তরাজ্যের মতো দেশ থেকেই তা আসে। ফলে ছোট দুগ্ধচাষিদের জন্য কোনও ঝুঁকি তৈরি হবে না বলে যুক্তি দিয়েছে মার্কিন দল।
কৃষিপণ্যের ক্ষেত্রেও ইউএস তাদের অবস্থান কিছুটা বদলেছে (India US Trade Deal)। তারা এবার জেনেটিকালি মডিফায়েড (জিএম) ভুট্টা রপ্তানি করতে আগ্রহী। মার্কিন বাণিজ্যমন্ত্রী হাওয়ার্ড লুটনিক বলেন, “ভারত যদি ১৪০ কোটি মানুষ নিয়ে গর্ব করে, তাহলে প্রত্যেকে এক বুশেল মার্কিন ভুট্টা কেনে না কেন?”
তবে ভারতের আইন জিএম ভুট্টা আমদানি বা চাষের অনুমতি দেয় না। স্বাস্থ্য ও পরিবেশগত ঝুঁকির আশঙ্কায় কেন্দ্র সতর্ক। এর সঙ্গে যুক্ত রয়েছে রাজনৈতিক সমীকরণও—কারণ বিহার ভারতের তৃতীয় বৃহত্তম ভুট্টা উৎপাদক রাজ্য, যেখানে শিগগিরি নির্বাচন আসন্ন। সমঝোতার পথ হিসেবে ভুট্টাকে মানব ভোগের বদলে ইথানল উৎপাদনে ব্যবহার করার সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা চলছে।
কেন পিছিয়ে এল আমেরিকা? (India US Trade Deal)
প্রশ্ন জাগে—হঠাৎ কেন যুক্তরাষ্ট্র নরম হল? এর উত্তর লুকিয়ে আছে তাদের নিজস্ব কৃষিক্ষেত্রের সংকটে (India US Trade Deal)।
চিনের সঙ্গে ট্রাম্পের বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে মার্কিন কৃষকদের আয়ে ধস নেমেছে। চীন আর মার্কিন সয়াবিন বা ভুট্টা কিনছে না। পরিবর্তে তারা ব্রাজিল থেকে শস্য আমদানি করছে। এর ফলে আমেরিকার গুদামঘর ভরে আছে অবিক্রীত ভুট্টা ও সয়াবিনে। দাম কমে গেছে, ক্ষতির মুখে পড়েছেন ট্রাম্পের প্রধান ভোটব্যাঙ্ক—মধ্যপশ্চিমের কৃষকরা।
ফলে ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যচুক্তিতে সামান্য ছাড় দিয়ে হলেও বাজার খোঁজা এখন ওয়াশিংটনের জন্য অপরিহার্য হয়ে উঠেছে।

আরও পড়ুন : Masood Azhar : অপারেশন সিঁদুরে নিহত মাসুদ আজহারের পরিবারের একাধিক সদস্য, স্বীকার জইশ-ই-মহম্মদের
ভারতের কৌশলগত অবস্থান (India US Trade Deal)
অন্যদিকে ভারত সবসময়েই কৃষি ও দুগ্ধখাতে বিদেশি প্রবেশাধিকারের বিরোধিতা করেছে (India US Trade Deal)। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী স্বদেশি উৎপাদনের ওপর জোর দিয়েছেন এবং কৃষকদের পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন।
ভারত যুক্তরাষ্ট্রকে কোনও সরাসরি দোষারোপ না করলেও আলোচনায় দেরি করে কার্যত আমেরিকাকেই ঝুঁকির মুখে ফেলে দিয়েছে। অবশেষে ওয়াশিংটনকেই আলোচনার টেবিলে ফিরে আসতে হয়েছে।
আরও পড়ুন : Landslide Death : উত্তর ভারতে মৌসুমী বৃষ্টিতে বন্যা-ভূমিধস, শেষ ৪ মাসে মৃত্যু ৪০০ পার
ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপট (India US Trade Deal)
বাণিজ্য আলোচনার পুনরারম্ভ শুধু অর্থনৈতিক নয়, কূটনৈতিক দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ (India US Trade Deal)। এশিয়ায় চীনের প্রভাব মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্র ভারতের মতো একটি শক্তিশালী মিত্রকে পাশে রাখতে চায়। অপরদিকে ভারতও জানে প্রযুক্তি ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র একটি অপরিহার্য সঙ্গী।
প্রিমিয়াম চিজ আর ভুট্টা দিয়ে শুরু হলেও এ আলোচনা ভারত-আমেরিকা সম্পর্কের জন্য এক মোড় ঘোরানো মুহূর্ত। ট্রাম্প প্রশাসনের নরম সুর প্রমাণ করে দিল যে, বাণিজ্যযুদ্ধে জিততে হলে শুধু হুমকি নয়, বরং সহযোগিতা ও সমঝোতাই শেষমেশ কাজ করে।