ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: এফসি চ্যালেঞ্জ লিগে পারো, বসুন্ধরা কিংস, নাজমে এফসির বিরুদ্ধে দুরন্ত খেললেও আইএসএলে আবারও ‘পুরনো ফর্মেই’ ফিরল ইস্টবেঙ্গল। শনিবার যুবভারতীতে আইএসএল-এ পয়েন্ট টেবিলের দুই ‘লাস্ট বয়’ এর ম্যাচ ছিল। তাতে মহামেডান স্পোর্টিংয়ের (EB vs MSG) সঙ্গে ‘বিতর্কিত’ ম্যাচে গোলশূন্য ড্র করে চলতি আইএসএলে প্রথমবার হার বাঁচিয়ে এক পয়েন্ট নিয়ে পয়েন্ট টেবিলে খাতা খুলল মশাল বাহিনী।
দায়ি রেফারি? (EB vs MSG)
তবে, এর জন্য কিছুটা দায়ী ম্যাচের রেফারিংও (EB vs MSG)। প্রথমার্ধে ৩৬ সেকেন্ডের ব্যবধানে লাল-হলুদের দুই মিডফিল্ডার নন্দকুমার এবং নাওরেম মহেশ সিং লালকার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন। ২৯ মিনিটে মহামেডানের অমরজিৎ সিং কিয়ামকে ঘুষি মেরে লালকার্ড দেখেন নন্দ। রেফারি হরিশ কুন্ডুর এই সিদ্ধান্তে বলে লাথি মেরে হতাশাপ্রকাশ করায় দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখে লালকার্ডের শিকার হয়ে মাঠ ছাড়েন মহেশ। প্রথমার্ধের ৭ মিনিটে বিপক্ষ ফুটবলারকে ফাউল করে প্রথম হলুদ কার্ড দেখেছিলেন মহেশ। ৩৬ সেকেন্ডের ব্যবধানে ইস্টবেঙ্গল যখন জোড়া লালকার্ড দেখল, তখন ম্যাচের বয়স ৩০ মিনিট।
আরও পড়ুন: KL Rahul: অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে উদ্ভট আউট রাহুল! অব্যাহত রানের খরা
ক্ষোভ গ্যালারিতে (EB vs MSG)
রেফারির এই সিদ্ধান্তে ক্ষোভে ফেটে পড়ে লাল হলুদ গ্যালারি। রেফারির এই সিদ্ধান্ত নিয়ে যেমন প্রশ্ন উঠছে, পাশাপাশি এই ধরনের বড় ম্যাচে নন্দ, মহেশের মতো ফুটবলারের মাথা ঠান্ডা না রাখতে পারা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। তবুও, সেখান থেকে ৬০ মিনিটেরও বেশি সময় ধরে রক্ষণ সামলে বিপক্ষের সমস্ত আক্রমণ ভোঁতা করে দলকে আইএসএলে প্রথম পয়েন্ট এনে দেন অস্কার ব্রুজোঁ। এটা ইস্টবেঙ্গলের নৈতিক জয়ও বলা যায় (EB vs MSG)। এক্ষেত্রে ইস্টবেঙ্গলের যতটা কৃতিত্ব, তার থেকেও বেশি ব্যর্থতা মহমেডানের।
কী কৌশল লাল-হলুদ কোচের?
৬০ মিনিটেরও বেশি সময়, এমনকি অতিরিক্ত দশ মিনিট ধরলে মোট ৭০ মিনিট ধরে প্রতিপক্ষকে ৯ জনে পেয়েও ইস্টবেঙ্গলের জালে বল জড়াতে পারলেন না সাদা-কালো ফুটবলাররা। সংখ্যাতত্ত্বের বিচারে এগিয়ে থাকলেও সেই সুযোগ কাজে লাগাতে ব্যর্থ কিয়াম, ফ্রাঙ্কারা। ন’জনে নেমে আসায় রক্ষণে ফুটবলার বাড়িয়ে শুধু দিমিকে উপরে রেখে ম্যাচ বাঁচানোর কৌশল নেন লাল-হলুদ কোচ।
ব্যর্থ মহমেডান
সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে মুহুর্মুহু আক্রমণ করলেও মহমেডান ফুটবলারদের সমস্ত আক্রমণই জমা পরল লাল-হলুদ ডিফেন্সে। সাদা-কালো ফুটবলারদের দুর্বল ও জঘন্য ফাইনাল পাশ তার জন্য দায়ী। ফলে জয় মাঠে ফেলেই গোল শূন্য ড্র করে এক পয়েন্ট নিয়ে মাঠ ছাড়তে হল আন্দ্রে চেরনিসভের দলকে। এছাড়া সারাক্ষণই জঘন্য ফুটবলের সাক্ষী রইল যুবভারতী। গোটা ম্যাচে দু’টো লালকার্ড ছাড়া আর উল্লেখযোগ্য কোনও মুহূর্তই তৈরি হলো না। ৭ ম্যাচে ৫ পয়েন্ট নিয়ে ১২ নম্বরে রইল মহমেডান। সমসংখ্যক ম্যাচে ১ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলে সবার শেষেই রইল ইস্টবেঙ্গল।
হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেলের মাধ্যমে যুক্ত হন আমাদের সঙ্গে। ক্লিক করুন এখানে।
হলুদ কার্ড ক্রেসপোর
ফাউল করায় হলুদ কার্ড দেখলেন ইস্টবেঙ্গলের সাউল ক্রেসপোও। চলতি মরশুমে সব থেকে বেশি অর্থাৎ ২৬টি কার্ড দেখেছে ইস্টবেঙ্গল। তার মধ্যে ২২টি হলুদ কার্ড এবং চারটি লাল কার্ড।
আইএসএল-এ টানা হার
চলতি আইএসএলে প্রথম ৬ ম্যাচে হেরেও এএফসি চ্যালেঞ্জ লিগে ছন্দে ফিরেছে ইস্টবেঙ্গল। তার মাঝেই ব্যর্থতার দায় নিয়ে কার্লোস কুয়াদ্রাত সরে যাওয়ায় লাল-হলুদের নতুন হেড কোচ হয়ে এসে দলের হাল ধরেন অস্কার ব্রুজোঁ। তার কোচিংয়ে দল অনেকটাই ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। কিন্তু শনিবার যুবভারতীতে যা ঘটল, তাতে আইএসএলে নর্থ ইস্টের বিরুদ্ধে পরের ম্যাচে আবারও নতুন করেই দলের হাল ধরতে হবে ব্রুজোঁকে, তাতে কোনও সন্দেহ নেই।
ক্ষোভ কর্তাদের
৯ জনে খেলেও ড্র তুলে নেওয়ায় দলকে কৃতিত্ব দেওয়ার পাশাপাশি ম্যাচ শেষে রেফারিং নিয়ে ক্ষোভ উগরে দিলেন ইস্টবেঙ্গলের শীর্ষকর্তা দেবব্রত সরকার। জঘন্য রেফারিং নিয়ে প্রশ্ন তুলে গোটা মরশুম ধরেই তাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে বলেই মনে করছেন তিনি। দেবব্রত সরকার বলেন, ‘প্রত্যেক ম্যাচেই আমরা এইভাবে বঞ্চিত হচ্ছেন। আমাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে। সঠিক রেফারিং হলে দল যে ভালো ফল করে, তা এএফসি চ্যালেঞ্জ লিগেই প্রমাণ হয়ে গিয়েছে।’
গ্যালারিতে প্রাক্তন তারকা
এদিন মহামেডান বনাম ইস্টবেঙ্গল ম্যাচ দেখতে যুবভারতীর গ্যালারিতে উপস্থিত ছিলেন ইস্টবেঙ্গলের প্রাক্তন ব্রাজিলিয়ান তারকা ডগলাস ডি’সিলভা। তিনিও পুরনো দলের খেলা ও লড়াইয়ের প্রশংসা করে গেলেন। কেরিয়ারে লাল-হলুদ এবং সবুজ-মেরুন জার্সিতে কোনও বড় ম্যাচে না হারা ডগলাস বলেন, ‘আমি দলের খেলায় খুশি। কঠিন পরিস্থিতি থেকে দুরন্ত লড়াই করে দলকে পয়েন্ট এনে দেওয়ায় আমি খেলোয়াড়দের কুর্নিশ জানাচ্ছি। আশা করছি এই ইস্টবেঙ্গল দল আইএসএলে দারুন ভাবে কামব্যাক করবে।’ তবে মুখে না বললেও রেফারিং নিয়ে তিনিও যে বিরক্ত, তা বুঝিয়ে দিলেন।
আরও পড়ুন: Champions Trophy: পাকিস্তান যাচ্ছেনা ভারত! বিরাটরা কোথায় খেলবেন চ্যাম্পিয়নস ট্রফির ম্যাচ?
হতাশ মহমেডান
অপরদিকে, মহমেডানের শীর্ষকর্তা রাহুল টোডিও দল না জয় পাওয়ায় কিছুটা হতাশ। দল নিয়ে যে নতুন করে ভাবনা চিন্তা করতে হবে তাও জানিয়ে দিলেন তিনি। রাহুল টোডি বলেন, ‘ম্যাচটা আমাদের জেতা উচিত ছিল। প্রতিপক্ষকে শেষ ৬০ মিনিট ৯ জনে পেয়েও আমাদের ফুটবলাররা গোল করতে পারেনি। এটা আমাদের ব্যর্থতা। দল নিয়ে আবারও আমাদের ভাবনা চিন্তা করতে হবে। দলে আরও ভালো ফুটবলার আনা যায় কিনা, সেই নিয়েও আমরা খুব শীঘ্রই আলোচনা করব এবং সিদ্ধান্ত নেব।’