কীসের অভিযোগে গ্রেফতার সন্দীপ ঘোষ?

সন্ধ্যার পর থেকেই রবীন্দ্র সদনের কাছে নিজাম প্যালেসে সিবিআইয়ের তৎপরতা দেখেই অনুমান করা যাচ্ছিল, সম্ভবত আরজি কর হাসপাতালের প্রাক্তন অধ্যক্ষকে হেফাজতে নিতে চলেছে সিবিআই। হলও তাই। জানুন বিস্তারিত...

কীসের অভিযোগে গ্রেফতার সন্দীপ ঘোষ?
CBI arrests Sandip Ghosh (File image)

অভ্রদ্বীপ দাস, কলকাতা: গ্রেফতার সন্দীপ ঘোষ। আরজি কর হাসপাতাল এবং মেডিক্যাল কলেজে তরুণী চিকিৎসককে খুন এবং ধর্ষণের ঘটনার ২৪ দিন পর গ্রেফতার প্রাক্তন অধ্যক্ষ। সরকারি হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসক খুনের ঘটনায় টানা ১৬ দিন সন্দীপ ঘোষকে জিজ্ঞাসাবাদের পর তাঁকে গ্রেফতার করেছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। কীসের অভিযোগে গ্রেফতার সন্দীপ ঘোষ? পড়ুন ট্রাইব টিভির বিশেষ প্রতিবেদন... 

সোমবার সিজিও থেকে সন্দীপ ঘোষকে নিয়ে আসা হয় নিজাম প্যালেসে। এ দিন সন্ধ্যার পর থেকেই রবীন্দ্র সদনের কাছে নিজাম প্যালেসে সিবিআইয়ের তৎপরতা দেখেই অনুমান করা যাচ্ছিল, সম্ভবত আরজি কর হাসপাতালের প্রাক্তন অধ্যক্ষকে হেফাজতে নিতে চলেছে সিবিআই। হলও তাই। আরজি কর হাসপাতালের দুর্নীতি মামলায় গ্রেফতার শাসক-ঘনিষ্ঠ হিসাবে পরিচিত আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ। শুধু সন্দীপকেই নয় সন্দীপ ঘোষ ঘনিষ্ট দুই ব্যবসায়ী বিপ্লব সিং, সুমন হাজরা এবং সন্দীপ ঘোষের অতিরিক্ত নিরাপত্তা রক্ষী আফসার আলী কেও গ্রেফতার করে সিবিআই।

আরও পড়ুন: https://tribetv.in/Due-to-urge-of-justice--WEST-BENGAL-JUNIOR-DOCTORS-FRONT-show-protest-Infront-of-kolkata-police-headquarter

আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের প্রাক্তন ডেপুটি সুপার আখতার আলি গত ১ বছর আগে স্বাস্থ্য ভবন, স্টেট ভিজিলেন্স কমিশন থেকে শুরু একাধিক জায়গায় আরজি কর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ করেছিলেন। এবছর তিনি কলকাতা আদালতে মামলা দায়ের করেন। পাশাপশি স্বাস্থ্য ভবনের এক আইএএস আধিকারিক আরজি কর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ দায়ের করেছিলেন টালা থানায়। 

পরবর্তীতে রাজ্যের তরফে ৪ আইপিএস আধিকারিকদের নিয়ে একটি স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন টিম গঠন করা হয় এই আর্থিক অনিয়মের তদন্ত করার জন্য। পরবর্তীতে কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে সেই মামলার তদন্ত শুরু করে সিবিআই। টালা থানায় যে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছিল সেই অভিযোগের ভিত্তিতে সিবিআইয়ের তরফে একটি এফআইআর রুজু করা হয় 120B IPC, 420 IPC এবং Sec 7 of Prevention of Corruption Act, 1988 (As amended by the Prevention of Corruption, Act, 2018) ধারায় । তাতে প্রথম নাম রয়েছে সন্দীপ ঘোষ সহ ৩ টি কোম্পানির মেসার্স মা তারা ট্রেডার্স অফ মধ্য ঝোরহাট, মেসার্স ঈশান ক্যাফে, মেসার্স খামা লৌহা।

আরও পড়ুন: https://tribetv.in/Sandip-Ghosh-again-enters-cbi-office-CGO-Complex-after-two-days

আখতারের আলির করা যে ১৫টি অভিযোগ খতিয়ে দেখছে সিবিআই।  

* সরকারের টাকার অনিয়ম।
* সরকারের সম্পত্তি স্বাস্থ্য ভবন এবং কলেজ কাউন্সিলের অনুমতি ছাড়াই বিভিন্ন ব্যক্তি বা সংগঠনকে দেওয়া। ফুড স্টল, ক্যাফে, ক্যান্টিনের মতো জায়গা টেন্ডার না ডেকেই বণ্টন করা হয়েছে বলে অভিযোগ।
* সরবরাহকারীদের কাজের বরাত দেওয়ার বিষয়ে স্বজনপোষণের অভিযোগ। এ ক্ষেত্রে তিন জন সরবরাহকারীর নাম করেছেন আখতার। বিপ্লব সিংহ ছাড়াও নাম করা হয়েছে সুমন হাজরা এবং আফসর খানের।
* কোটি কোটি টাকার কাজের বরাত গুটিকয়েক নির্দিষ্ট ব্যক্তিকেই দেওয়া হয়। তাঁদের বরাত পাওয়ার যোগ্যতা নেই বলেও অভিযোগ।
* আর্থিক ব্যবস্থার নিয়মকানুন ইচ্ছাকৃত ভাবে অমান্য করা হয় আরজি কর হাসপাতালে।
* অ্যাকাউন্ট আধিকারিকদের কথায় গুরুত্ব না দেওয়া এবং বিভিন্ন সময়ে পছন্দের ব্যক্তিদের জন্য নানা সুযোগসুবিধা চেয়ে নেওয়া।
* হাসপাতালের পরিকাঠামো এবং বৈদ্যুতিক বিভিন্ন কাজ রাজ্য সরকারের পূর্ত দফতরকে দিয়ে না করানোর অভিযোগ। ওই কাজের জন্য বরাত দেওয়া হয় বাইরের সংস্থাকে।
* হাসপাতালের মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষা সংক্রান্ত কাজের জন্য বরাদ্দ টাকা নিয়েও অনিয়মের অভিযোগ।
* বেআইনি ভাবে হাসপাতালের বিভিন্ন কাজের বরাত দেওয়া এবং টেন্ডার সংক্রান্ত সুবিধার জন্য মাঝপথে বরাত ভেঙে দেওয়া।
* হাসপাতালের জৈব বর্জ্য বা ‘বায়োমেডিক্যাল ওয়েস্ট’ বেআইনি ভাবে বাইরে বিক্রি করা হয় বলে অভিযোগ।
* কলকাতা পুরসভার চোখ এড়িয়ে বিভিন্ন বেনামি ব্যবসা চালানোর অভিযোগ করা হয়েছে। তার মধ্যে ছেলেদের মেন হস্টেল, মহিলাদের নতুন হস্টেলে ক্যান্টিন চালানো এবং হাসপাতালের মধ্যে ক্যাফে চালানোর কথাও রয়েছে।
* হাসপাতালের চুক্তিভিত্তিক কর্মী নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ।
* আর্থিক সুবিধা লাভের জন্য বেআইনি ভাবে হাসপাতালের মিলিটারি ইঞ্জিনিয়ার সার্ভিসের আধিকারিকদের বদলি। এই কাজের সঙ্গে আরজি করের মেডিক্যাল এডুকেশন প্রাক্তন ডেপুটি ডিরেক্টর তনুশ্রী মণ্ডলও জড়িত বলে অভিযোগ করেছেন আখতার।
* হাসপাতালের সরবরাহকারীদের কাছ থেকে ২০ শতাংশ হারে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ। এর সপক্ষে অডিয়ো প্রমাণ জমা দেওয়া হয়েছে।
* কোভিডের সময়ে সরকারের তরফে হাসপাতালের জন্য যে তহবিল তৈরি করা হয়েছিল, সেই টাকার নয়ছয় করা হয়েছে বলেও অভিযোগ। ওই টাকা দিয়ে একটি জিম তৈরি করা হয়েছে। বিভিন্ন আধিকারিকের দফতরে বিলাসবহুল আসবাবপত্রও ওই টাকায় কেনা হয়েছে বলে অভিযোগ।