লোকসভায় হতাশাজনক ফল! পুজোর আগেই ১৫ জেলার সাংগঠনিক সভাপতি পদে নতুন মুখ BJP-র

আগামী দু—তিন মাসের মধ্যে কোন কোন জেলা সভাপতির উপর খাঁড়া নামতে চলেছে, কার কার পদ যেতে পারে। বিস্তারিত খবর জানতে সম্পূর্ণ প্রতিবেদন পড়ুন...

লোকসভায় হতাশাজনক ফল! পুজোর আগেই ১৫ জেলার সাংগঠনিক সভাপতি পদে নতুন মুখ BJP-র
ফাইল চিত্র।।

ত্রয়ণ চক্রবর্তী, কলকাতা: লোকসভা ভোটে হতাশাজনক ফলের জেরে জেলাস্তরে বড়সড় সাংগঠনিক রদবদলের পথে হাঁটতে চলেছে বঙ্গ বিজেপি। পুজোর মধ্যেই বদল হতে পারে প্রায় ১৫টি সাংগঠনিক জেলার সভাপতি। এমনই খবর গেরুয়া শিবির সূত্রে। অগাস্টের আগে রাজ‌্য সভাপতি বদল হচ্ছে না। তারপরই জেলা সংগঠনে ব‌্যাপক রদবদল করা হবে। জেলা থেকে মন্ডলস্তর ঢেলে সাজানো হবে বলেই জানা গিয়েছে।

চব্বিশের লোকসভা ভোটে যেখানে যেখানে খারাপ ফল হয়েছে সেখানকার অধিকাংশ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি বদল করা হবে। একইসঙ্গে তিনশোর বেশি মন্ডল সভাপতিও বদল করা হতে পারে। সিংহভাগ বুথ কমিটির খোলনলচেও ঢেলে সাজানো হবে। ক’দিন আগেই সল্টলেক পার্টি অফিসে ভোট পরবর্তী পর্যালোচনা বৈঠকে বসেছিল রাজ‌্য বিজেপি নেতৃত্ব। সেখানেই ঠিক হয়েছিল, একেবারে জেলা থেকে রিপোর্ট নেওয়া হবে। সেই মতো বিভিন্ন জেলায় পর্য়ালোচনা বৈঠক চলছে। মন্ডল সভাপতি, জেলা ও জোন ইনচার্জ, বিধানসভা ইনচার্জদের নিয়ে এই বৈঠক হচ্ছে। চলতি জুন মাসের মধ্যেই নিচুতলার রিপোর্ট জমা পড়বে রাজ‌্য কমিটির কাছে। তারপর সেই রিপোর্ট ঘষা মাজা করে রাজ‌্য কমিটি পাঠাবে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে। কিন্তু কেন লোকসভা ভোটে এই হতাশাজনক ফলাফল? কেন নির্দিষ্ট লক্ষ‌্যমাত্রায় পৌঁছানো গেল না? উনিশের প্রাপ্ত ১৮টা আসন কেনই বা নেমে এল ১২টাতে?

এই প্রশ্নের উত্তর পেতে সংগঠনের হাল বুঝতে এখনও পর্যন্ত যে ক'টি পর্যালোচনা বৈঠক হয়েছে, সেগুলির থেকে নিচুতলার নেতা—কর্মীদের কাছ থেকে যে যে বিষয়গুলি উঠে আসছে তা হল এক, অনেক পুরনো কার্যকর্তাকে ভোটের কাজে যুক্ত করা হয়নি। দুই, বুথ সংগঠন একেবারেই ফোপরা, তিন, বুথ নিয়ে ভুল রিপোর্ট পাঠানো হয়েছিল। প্রায় সর্বত্রই বলা হয়েছিল ভালো ফল হবে। সংগঠন মজবুত। কিন্তু বাস্তবে সেটা ছিল না। চার, বাড়ি বাড়ি প্রচারেই খামতি ছিল বিজেপি সমর্থকদের। ভোটারদের কাছে সেভাবে কেউ যায়নি। পাঁচ, জেলা সভাপতিদের সঙ্গে দলের প্রার্থীদেরই সমন্বয়ের অভাব ছিল অধিকাংশ লোকসভা কেন্দ্রেই। ছয়, কেন্দ্রীয় নেতাদের ঘনঘন বৈঠক, বড় বড় সভা করতে গিয়ে জনসংযোগে ঘাটতি হয়েছিল। পাড়ায় পাড়ায় সেভাবে ভোটারদের কাছে যেতেই পারেনি দলের কর্মীরা।

আরও পড়ুন: https://tribetv.in/Calcutta-High-Court-strongly-condemns-the-state-governor-over-the-fir-issue-against-suvendu-and-bjp-supporters

এইসব কারণগুলি নিয়ে চর্চা চলবে। তবে এখন সবচেয়ে বেশি জল্পনা শুরু হয়ে গিয়েছে যে আগামী দু—তিন মাসের মধ্যে কোন কোন জেলা সভাপতির উপর খাঁড়া নামতে চলেছে, কার কার পদ যেতে পারে। হাওড়া, হুগলি, দক্ষিণ ২৪পরগনা, পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, বাঁকুড়া, বর্ধমান সহ একাধিক জেলায় সাংগঠনিক রদবদল অর্থাৎ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি বদলের পথেই হাঁটতে চলেছে গেরুয়া শিবির। হাওড়া জেলার দু'টি লোকসভা কেন্দ্রেই ভালো আশানুরূপ ফল হয়নি। হুগলি আসনটি হাতছাড়া হয়েছে। আরামবাগকে পজেটিভ সিট ধরা হলেও সেখানে হার হয়েছে। আবার বর্ধমান—দুর্গাপুর আসন হাতছাড়া হয়েছে। আসানসোল পজেটিভ হলেও সেখানে হার হয়েছে।

বর্ধমান জেলায় দলের কোন্দলও রয়েছে। কাজেই বর্ধমান জেলায় সংগঠনের খোলনলচে বদল করা হবে বলে খবর। দক্ষিণ ২৪পরগনায় অত‌্যন্ত খারাপ ফল হয়েছে, তার উপর গোষ্ঠীরকোন্দল রয়েছে। সেখানেও একাধিক সাংগঠিক জেলায় রদবদল হতে চলেছে। মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, ঘাটাল সাংগঠনিক জেলা কমিটিতেও রদবদলের প্রবল সম্ভাবনা। বাঁকুড়া আসন হাতছাড়া হয়েছে। সেখানে দলের মধ্যে কোন্দলও চরমে উঠেছিল ভোটের আগে। আবার সেই জেলারই বিষ্ণুপুর আসনে খুব কম মার্জিনে জিতেছে বিজেপি।

আরও পড়ুন: https://tribetv.in/APP-Cab-driver-allegedly-misbehave-with-passenger-at-night-in-Kolkata-areas

ফলে বাঁকুড়া ও বিষ্ণুপুর সাংগঠনিক জেলা এব বীরভূম ও বোলপুর সাংগঠনিক জেলাতেও সাংগঠনক রদবদল করা হবে। কারণ, ছাব্বিশের বিধানসভা ভোটকে সামনে রেখেই একেবারে জেলাস্তরে সংগঠনের খোলনলচে বদলানোর পরিকল্পনা রয়েছে বলে স্বীকার করেছেন রাজ‌্য বিজেপির এক নেতা। সেক্ষেত্রে ৪৩টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে অন্তত পক্ষে ১৫টি সাংগঠনিক জেলার সভাপতি বদল করা হবে। তাঁদেরকে দিয়েই ছাব্বিশের বিধানসভা ভোট যুদ্ধে জেলায় সংগঠন চলবে।