শুম্ভ ও নিশুম্ভকে বধ করতেই কৌশিকীর জন্ম! জানুন পুরাণের ইতিহাস

শুধু কোনও অ-যোনি সম্ভূত নারী তাঁদের বধ করতে পারবেন। অর্থাৎ এমন এক নারী, যিনি মাতৃগর্ভ থেকে জন্ম নেননি, তাঁর হাতেই এই দুই অসুর ভাই-এর মৃত্যু হবে।

শুম্ভ ও নিশুম্ভকে বধ করতেই কৌশিকীর জন্ম! জানুন পুরাণের ইতিহাস
ছবি সৌজন্যে:- সোশ্যাল মিডিয়া

ট্রাইব টিভি ডিজিটাল: আজ কৌশিকী অমাবস্যা। শাক্ত মতে, ভাদ্র মাসের অমাবস্যার গুরুত্ব আর পাঁচটা অমাবস্যার থেকে একটু হলেও বেশি। মার্কণ্ডেয় পূরাণের অন্তর্গত 'শ্রীশ্রী চণ্ডী' গ্রন্থানুসারে এই পুণ্য তিথিতে শুম্ভ-নিশুম্ভকে বধ করার নিমিত্ত মহামায়া পার্বতীর দেহের কোষিকা বা কোষ থেকে দেবী কৌশিকী দেবীর আবির্ভাব ঘটেছিল। তাই এই অমাবস্যা 'কৌশিকী অমাবস্যা' নামেও পরিচিত। শ্রীশ্রীচণ্ডীতে বর্ণিত মহা সরস্বতী দেবীর কাহিনীতে বলা আছে, পুরাকালে একবার শুম্ভ ও নিশুম্ভ কঠিন সাধনা করে ব্রহ্মাকে তুষ্ট করলে চতুরানন তাঁদের বর দেন, কোনও পুরুষ তাঁদের বধ করতে পারবেন না৷ 

শুধু কোনও অ-যোনি সম্ভূত নারী তাঁদের বধ করতে পারবেন। অর্থাৎ এমন এক নারী, যিনি মাতৃগর্ভ থেকে জন্ম নেননি, তাঁর হাতেই এই দুই অসুর ভাই-এর মৃত্যু হবে। পৃথিবীতে এমন নারী কোথায়? আদ্যা শক্তি মহামায়াও মেনকা রানির গর্ভে জন্ম নিয়েছেন, তাই তিনিও ওঁদের নাশ করতে পারবেন না। তা হলে উপায়? পূর্ব জন্মে পার্বতী যখন সতী রূপে দক্ষ যজ্ঞ স্থলে আত্মাহুতি দেন, তার কারণে এই জন্মে ওঁর গাত্র বর্ণ কালো মেঘের মতো। তাই ভোলানাথ তাঁকে কালিকা ডাকতেন। একদিন দানব ভাইদের দ্বারা পীড়িত ক্লান্ত দেবতারা যখন কৈলাশে আশ্রয় নিলেন, শিব সব দেবতাদের সামনেই পার্বতীকে বললেন, ''কালিকা তুমি ওদের উদ্ধার করো।'' সবার সামনে 'কালী' বলে ডাকায় পার্বতী অত্যন্ত ক্ষুব্ধ, অপমানিত ও ক্রোধিত মনে মানস সরোবরের ধারে কঠিন তপস্যা করলেন। 

অন্যদিকে, পুরাণ মতে কথিত আছে, আজকের দিনেই সাধক বামাক্ষ্যাপা মা তারার দর্শন লাভ করেছিলেন। এই কৌশিকী অমাবস্যার দিনই তপস্যায় সিদ্ধিলাভ করেন সাধক বামাখ্যাপা। তারাপীঠ শ্মশানের শ্বেত শিমূলতলায় সাধনা করেছিলেন তিনি। ভক্তকে দেখা দেন মা তারা। সেই থেকে পালিত হয় কৌশিকী অমাবস্যা। অনেকে আবার এই তিথিকে বলেন 'কৌশী অমাবস্যা'। যে কোনও শুভ কাজে ব্যবহৃত হয় কুশ। এই দিনে সেই কুশ কাটা হয়। তাই একে কৌশী অমাবস্যাও বলে। আবার মৎস পূরাণ ও মাণ্ডেয় পূরাণে বলা হয়, অসুর দ্বয় শুম্ভ ও নিশুম্ভকে বধ করতে দেবী পার্বতী সাধনা শুরু করেন। তপস্যার পর, নিজের শ্বেতশুভ্র গায়ের রঙ পরিত্যাগ করে ,উজ্জ্বল কালো বর্ণে ভয়াল রূপ ধারণ করেন দেবী। সেই রূপে দেবী পার্বতী হয়ে ওঠেন 'কৌশিকী'। আর এই কৌশিকীই অমাবস্যার এক বিশেষ কালক্ষণে, অন্ধকারে বধ করেন শুম্ভ ও নিশুম্ভ নামের দুই অসুরকে। সেই কালক্ষণকে স্মরণ করেই অনুষ্ঠিত হয় কৌশিকী অমাবস্যার পুজো।