নেশার আমদানি না করেই বাংলায় হোক পোস্ত চাষ, কেন্দ্রের কাছে আর্জি মমতার

বাঙালিদের কাছে পোস্ত অন্যতম প্রিয় খাবার। পোস্তের বড়া, আলু পোস্তের মতো পদ পাতে পড়ুক, চান প্রায় সকলেই।

নেশার আমদানি না করেই বাংলায় হোক পোস্ত চাষ, কেন্দ্রের কাছে আর্জি মমতার

ট্রাইব টিভি ডিজিটাল:  বাংলায় কেন পোস্তা চাষ করতে দেওয়া হবে না? বিধানসভায় সরব হলেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী। বললেন, 'বাঙালির খাবারের মধ্যে অন্যতম প্রিয় হল পোস্ত। কিন্তু খোলা বাজারে দাম অনেক। সরকারের নজরদারিতে সরকারি ফার্মেই পোস্ত চাষ করা হবে'। দেশের মাত্র চারটি রাজ্যে পোস্ত চাষের অনুমতি দিয়েছে কেন্দ্র। কিন্তু সেই তালিকায় নেই পশ্চিমবঙ্গ! বাজারে যে পোস্ত পাওয়া যায়, তার বেশিরভাগটাই আসে ভিন রাজ্য, এমনকী বিদেশ থেকেও। ফলে পোস্ত-র দামও কমে না, বরং সবসময়ই চড়়া থাকে। 

 বাঙালিদের কাছে পোস্ত অন্যতম প্রিয় খাবার। পোস্তের বড়া, আলু পোস্তের মতো পদ পাতে পড়ুক, চান প্রায় সকলেই। কিন্তু সাধ থাকলেও সাধ্য থাকে না অনেকেরই। ২০১৯ সালে রাজ্যে পোস্ত চাষের অনুমতি চেয়ে কেন্দ্রকে চিঠি দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। বৃহস্পতিবার বিধানসভায় সেই প্রসঙ্গ তুললেন তিনি। অধিবেশন তখন প্রায় শেষের দিকে। খাদ্য দফতরের বাজেট নিয়ে আলোচনা চলছিল। রাজভবন থেকে বিধানসভায় আসেন মুখ্যমন্ত্রী। দফতরের বাজেট নিয়ে তাঁকে কিছু বলার জন্য অনুরোধ করেন খাদ্যমন্ত্রী।

 এরপরই বিজেপি বিধায়কদের উদ্দেশ্যে মমতা বলেন, ‘আলু পোস্ত, পোস্তর বড়া খান না? তা হলে ৪টি রাজ্যে কেন চাষ হবে? আমাদের কেন চাষ করতে দেওয়া হবে না? বিরোধী বন্ধুরাও বলুন। সব পোস্তয় নেশার জিনিস তৈরি হয় না'। বস্তুত, চলতি মাসেই পোস্ত চাষের অনুমতি চেয়ে মুখ্যমন্ত্রী ফের কেন্দ্রকে চিঠিও দিয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। এরাজ্যে পোস্ত চাষ নিষিদ্ধ। বাংলার বাজারে প্রাপ্ত পোস্ত আমদানি করা হয় অন্য রাজ্য থেকে। কেন্দ্রের অনুমতি প্রাপ্ত রাজ্যেই নিয়ম মেনে পোস্ত চাষ করা হয়। এদিন বিধানসভায় সেই প্রসঙ্গ উত্থাপন করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ''এ রাজ্যেও পোস্ত চাষ করতে দিতে হবে। কেন বাইরে থেকে আনতে হবে! চারটে রাজ্যে পোস্ত চাষ হলে এখানে কেন হবে না?'' এখানেই শেষ নয়, বিরোধীদের কাছেও সমর্থনের আবেদন করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ''পোস্ত ছাড়া আমাদের চলে না। বিরোধী বন্ধুরা আপনারাও তো খান। আসুন সবাই মিলে একসঙ্গে কেন্দ্রকে বলি। পোস্ত চাষ মানেই ড্রাগস তৈরি করা নয়। অন্য রাজ্যের থেকে কেন কিনব? সব রাজ্য পোস্ত চাষের অনুমতি পেলে আমরা কেন পাব না? আমরা সরকারি ফার্মে চাষ করব।'' 

প্রসঙ্গত, পোস্ত মেলে আফিম গাছ থেকে। আফিম থেকে তৈরি হয় নেশার জিনিস। তাই পোস্ত চাষে দরকার বিশেষ। সম্প্রতি রাজ্যে একাধিক জায়গায় বেআইনি পোস্ত চাষের অভিযোগ মিলেছে। প্রশাসন ইতিমধ্যেই অভিযান চালিয়ে তা ধ্বংস করে দিয়েছে বলে খবর। এক বিঘা জমিতে কমপক্ষে ১৫০ কেজি পোস্ত উৎপাদন হয়। খোলা বাজারে বর্তমানে এক কেজি পোস্ত বিকোচ্ছে ৮০০ টাকায়। বৈধ ভাবে উৎপাদিত এক কেজি পোস্তর দাম ওঠে ১,৫০০ টাকা থেকে ২,৫০০ টাকার মধ্যে। 

অন্যদিকে, পোস্ত গাছ থেকে মেলে একধরনের আঠা। ওই আঠা থেকে মূলত আফিম, ব্রাউন সুগার, হেরোইনের মতো নেশার জিনিস তৈরি হয়। বাজারে ওই আঠার প্ৰতি কেজির দাম প্রায় এক লাখ কুড়ি হাজার টাকা। এক বিঘা জমির পোস্ত থেকে দুই বা তিন কেজি আঠা মেলে ফলে পোস্ত বাবদ এই লাভ অনুমেয়। তাই নেশার দ্রব্য উৎপাদন রুখতে পোস্ত চাষে এত কড়া নিষেধাজ্ঞা।