না ফেরার দেশে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, প্রাক্তনের প্রয়াণে শোকস্তব্ধ গোটা বাংলা

বঙ্গ বামপন্থীদের ‘শেষ আইকন’ তিনি। ব্যক্তিগত সততার নিরিখে এক বিরল রাজনীতিক। ধুতি-পাঞ্জাবি এবং কোলাপুরি চপ্পলে আপাদমস্তক বাঙালি ভদ্রলোক। পশ্চিমবঙ্গের ১১ বছরের মুখ্যমন্ত্রী। জানুন বিস্তারিত...

না ফেরার দেশে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য,  প্রাক্তনের প্রয়াণে শোকস্তব্ধ গোটা বাংলা
প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টা চার্য

ত্রয়ণ চক্রবর্তী, রিমিক মাঝি, কলকাতা: কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। বৃহস্পতিবার দীর্ঘ কয়েক দশকের রাজনৈতিক জীবন কাটিয়ে অমৃতলোকে পাড়ি দিয়েছেন রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। পাম অ্যাভিনিউ থেকে শেষ বারের মতো বেরোলেন বুদ্ধদেব। প্রবীণ সিপিএম নেতার মরদেহ রক্তপতাকায় মুড়ে তোলা হল শববাহী শকটে। কার্যতই বাংলার রাজনীতির এক যুগাবসান হল বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের প্রয়াণে।

বঙ্গ বামপন্থীদের ‘শেষ আইকন’ তিনি। ব্যক্তিগত সততার নিরিখে এক বিরল রাজনীতিক। ধুতি-পাঞ্জাবি এবং কোলাপুরি চপ্পলে আপাদমস্তক বাঙালি ভদ্রলোক। পশ্চিমবঙ্গের ১১ বছরের মুখ্যমন্ত্রী। বৃহস্পতিবার সকাল ৮:২০ মিনিটে দক্ষিণ কলকাতায় পাম অ্যাভেনিউয়ের বাড়িতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮০ বছর। দীর্ঘ দিন ধরেই গুরুতর শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা-তে ভুগছিলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। একাধিকবার হাসপাতালেও ভর্তি হয়েছেন। মরশুম বদলের সময়ই বুদ্ধবাবুর শ্বাসকষ্ট বাড়ত। গতকাল রাত থেকেও শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে শুরু হয় বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের। পরিবারের তরফে জানা গেছে, সকালেও বুদ্ধদেব প্রাতঃরাশ করেছিলেন। তার পরেই অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। 

আরও পড়ুন: https://tribetv.in/WB-CM-Mamata-Banerjee-Last-tribute-to-Buddhadeb-Bhattacharjee

বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের জন্ম উত্তর কলকাতায়। ১ মার্চ, ১৯৪৪। পূর্বপুরুষের আদি নিবাস বর্তমান বাংলাদেশ। তাঁর স্কুল জীবন কেটেছে শৈলেন্দ্র সরকার বিদ্যালয় থেকে। স্কুলের অধ্যায় শেষ করে তৎকালীন প্রেসিডেন্সি কলেজে বাংলা অনার্স নিয়ে ভর্তি হন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। কলেজ জীবনে এনসিসি-র ক্যাডেট ছিলেন। কলেজ জীবনে সিপিআই পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য হন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। এরপর সিপিআইএম কেন্দ্রীয় কমিটি ও সিপিআইএম-এর পলিট ব্যুরোর সদস্য হন। ১৯৭৭ থেকে ১৯৮২ পর্যন্ত প্রথম বাম সরকারের তথ্য ও জনসংযোগ বিভাগের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১৯৯৯-তে উপমুখ্যমন্ত্রীর হন। শারীরিক অসুস্থতার কারণে জ্যোতি বসু সরে দাঁড়ালে ২০০০-তে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। ২০০১ থেকে ২০০৬ এবং ২০০৬ থেকে ২০১১, পর পর দুবার রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হন। তবে ২০১১-তে প্রবল তৃণমূল হাওয়ায় নিজের দীর্ঘদিনের গড় যাদবপুরেই পরাজিত হন তিনি।

আরও পড়ুন: https://tribetv.in/Maa-Flyover-will-be-Closed-at-night-for-maintenance--issue

বাংলার ৩৪ বছরের বাম জমানার দ্বিতীয় তথা শেষ মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের জীবনাবসানে দলমত নির্বিশেষে শোকস্তব্ধ গোটা রাজনৈতিক মহল। পশ্চিমবঙ্গের প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের স্মরণে শোকবার্তা দিলেন দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতি থেকে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী, বিজেপি নেতা শমীক ভট্টাচার্য, সুকান্ত মজুমদারও শোকজ্ঞাপন করেছেন।  

বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের প্রয়াণে শোকপ্রকাশ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। বর্ষীয়ান বাম নেতার মৃত্যুতে শোকাহত মমতা বৃহস্পতিবার রাজ্যে সরকারি ছুটি ঘোষণা করেছেন। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর শেষযাত্রায় সব রকম সহযোগিতারও কথাও বলেছেন তিনি। এই দু’কামরার ফ্ল্যাট তিনি কখনও ছাড়তে চাননি। এই ফ্ল্যাটে ছড়িয়ে থাকা বই, বিছানা, গানের ক্যাসেটের মধ্যেই ছিল তাঁর যাপন। সেই পাম অ্যাভিনিউয়ের বাড়ি থেকে শেষ বারের মতো বেরিয়ে গেলেন বাংলার দীর্ঘ বাম জমানার দ্বিতীয় ও শেষ মুখ্যমন্ত্রী।

আরও পড়ুন: https://tribetv.in/former-Chief-Minister-of-West-Bengal-Buddhadeb-Bhattacharjee-Passes-Away

বৃহস্পতিবার পিস ওয়ার্ল্ডে রাখা হয় প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের দেহ। শুক্রবার সকাল সাড়ে দশটা থেকে সিপিএমের রাজ্য সদর দফতর আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে জনসাধারণের শ্রদ্ধার্ঘের জন্য সায়িত থাকবে দেহ। বিকেল চারটেয় শুরু হবে শেষ যাত্রা। তাঁর মরণোত্তর দেহ তিনি দান করে গিয়েছেন। পাম অ্যাভিনিউয়ের ফ্ল্যাট থেকে বেরোনোর আগে তাঁর মরদেহের চক্ষু থেকে কর্নিয়া সংগ্রহের প্রক্রিয়া সমাপ্ত হয়েছে পরিকল্পনা মতো। একমাথা সাদা চুল, ধবধবে সাদা ধুতি, ফতুয়ার কালো দাগহীন বিরাজে সেই বুদ্ধই যেন হয়ে উঠেছেন পূর্ণিমার বঙ্গ-চাঁদ! তাঁর না থাকায় একাধিক অভাব খুঁজে পেয়েছে জনতা। রাজ্যের সপ্তম মুখ্যমন্ত্রীর মৃত্যুতে শোকে, অভাবে নুইয়ে পড়েছেন বহুমানুষ।