ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: ছাব্বিশের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি ৫০-এর নীচে থেমে যাবে, এমনই আত্মবিশ্বাসী ভবিষ্যদ্বাণী করে দিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee)। বুধবার সাতগাছিয়ার জনসভা থেকে সরাসরি বিজেপিকে কটাক্ষ করে তিনি বলেন, “২০২১-এ বিজেপির চাকা ৭৭-এ আটকে গিয়েছিল। এবার ২০২৬-এ ৫০-এর নিচে আটকে যাবে। কথা দিয়ে গেলাম।” এর সঙ্গেই তিনি স্লোগান দেন “এবার বিজেপিকে বিদায় জানানোর পালা।”
‘নিঃশব্দ বিপ্লব’–এর খতিয়ান তুলে ধরলেন অভিষেক (Abhishek Banerjee)
নিজের সংসদীয় এলাকা ডায়মন্ড-হারবারের সাতগাছিয়ায় সভা করেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এ দিনের আয়োজিত সভার নাম ‘নিঃশব্দ বিপ্লব’। প্রতিবারই এই সভা করেন থাকেন তৃণমূল সাংসদ। সেই জনসভা মঞ্চ থেকেই অভিষেক তুলে ধরেন ডায়মন্ড হারবার লোকসভা কেন্দ্রে গত ১১ বছরে তাঁর সাংসদ হিসেবে কাজের পরিসংখ্যান। ‘নিঃশব্দ বিপ্লব’ নামক কর্মসূচির অধীনে এদিন প্রকাশ হয় প্রায় ৭০০ পাতার একটি পুস্তিকা, যেখানে বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হয় ৬ হাজার কোটি টাকার উন্নয়নমূলক কাজের বিবরণ। তাঁর সঙ্গে ছিলেন তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সি।
শুধু উন্নয়নই নয়, একইসঙ্গে তিনি বিজেপির নানা ব্যর্থতা, মিথ্যা প্রচার এবং বিভ্রান্তিমূলক রাজনীতিরও পাল্টা জবাব দেন। দুর্নীতি থেকে শুরু করে সীমান্ত সুরক্ষা, প্রতিটি ইস্যুতে কেন্দ্রকে একের পর এক আক্রমণ। বাংলার উন্নয়নকে রুখতেই নানা দমননীতি চালাচ্ছে বিজেপি, সভামঞ্চ থেকে দাবি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের।
‘হিন্দুত্বে’র রাজনীতি নিয়েও বিজেপিকে তোপ (Abhishek Banerjee)
বক্তৃতায় অভিষেক বলেন, “নিজেদের হিন্দুত্বের রক্ষাকারী বলে দাবি করে বিজেপি। অথচ জগন্নাথ মন্দির নিয়ে ব্যঙ্গ করে। শুভেন্দু অধিকারী বলেন, এটা মন্দির না। সুকান্ত মজুমদার বলেন, এটা সার্কাস। আমি ধন্যবাদ জানাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে, এই মন্দির না হলে এদের স্বরূপ উন্মোচিত হতো না।”
এদিনের জনসভা থেকে একের পর এক প্রসঙ্গ টেনে কেন্দ্রীয় সরকার এবং বিজেপি নেতৃত্বকে নিশানা করেন অভিষেক (Abhishek Banerjee)। তিনি প্রশ্ন তোলেন, “আরজি কর হাসপাতালের ঘটনায় রাজ্য পুলিশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি তুলছে বিজেপি ও বামেরা, অথচ পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলায় ব্যর্থতার জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ও আইবি প্রধান তপন ডেকার পদত্যাগের দাবি তারা তোলে না কেন? সীমান্তে দায়িত্ব কার?”
‘ডাবল ইঞ্জিন’ ব্যর্থ! (Abhishek Banerjee)
‘ডাবল ইঞ্জিন’ সরকারের ব্যর্থতা নিয়েও কটাক্ষ করেন তিনি। দেশের নানা প্রান্তে বিজেপি শাসিত রাজ্যে আর্থিক দুরবস্থার কথা তুলে ধরে বাংলার উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরেন অভিষেক। বলেন, “বাংলায় লক্ষ্মীর ভাণ্ডার চালু হয়েছে। বিজেপি বলেছিল, ওরাও করবে। আগে আপনাদের শাসিত রাজ্যে চালিয়ে দেখান।”
চাকরি কেলেঙ্কারি নিয়েও এদিন সুর চড়িয়েছেন তিনি। বলেন, “কিছুজনের কারণে প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষকের জীবন এখন অনিশ্চয়তায়। যারা দোষী, তারা শাস্তি পাক। কিন্তু যারা নির্দোষ, তাদের ভবিষ্যৎ কেন নষ্ট হবে? এটা কি ন্যায়?”
২০২৪-এর লোকসভা ভোটে রাজ্যে বিজেপির ভরাডুবির প্রসঙ্গ টেনে অভিষেক (Abhishek Banerjee) বলেন, “আমি ভবিষ্যদ্বাণী করি না। তবে করলে ঈশ্বরের কৃপায় অনেকটাই মিলে যায়।” তিনি কার্যত ঘোষণা করেন, “এটা শুরু মাত্র, ২০২৬-এ তৃণমূলের জয় সুনিশ্চিত।”
সাতগাছিয়া থেকে অভিষেকের কণ্ঠে শোনা গেল আগাম নির্বাচনী হুঁশিয়ারি। তাঁর স্পষ্ট বার্তা, বাংলার মানুষ উন্নয়নের পক্ষে, বিভাজনের রাজনীতি নয়। আর সেই কারণেই বিজেপির দিন গোনা শুরু হয়ে গেছে।