Last Updated on [modified_date_only] by Aditi Singha
ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: শিয়ালদহ-বনগাঁ শাখায় ভিড়ের ছবি যেন একেবারেই নতুন কিছু নয় (AC Local Train)। প্রতিদিন হাজার হাজার নিত্যযাত্রীকে গেটে ঝুলে ঝুলে, ঠাসাঠাসি ভিড়ের মধ্যে শিয়ালদহ ও বনগাঁর মধ্যে যাতায়াত করতে দেখা যায়। শিয়ালদহ-বারাসত-বনগাঁ রুটে এই ভিড় বছরের পর বছর ধরে চলেছে। বনগাঁ লোকালের নাম শুনলেই যাত্রীদের মনে আসে অতিরিক্ত ভিড়, গরম, ঘামে ভিজে যাওয়া জার্নির বিভীষিকা। কিন্তু শুক্রবার, ৫ সেপ্টেম্বর সেই দীর্ঘদিনের চেনা চিত্রটাই বদলে গেল। ইতিহাস গড়ল রেল—প্রথমবারের মতো বনগাঁ শাখায় চালু হলো এসি লোকাল ট্রেন।

এসি লোকালের শুভ সূচনা! (AC Local Train)
রানাঘাট থেকে বনগাঁ ও শিয়ালদহ হয়ে চলবে এই শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ট্রেন। শুক্রবার সকাল ৭টা ১১ মিনিটে রানাঘাট স্টেশন থেকে প্রথম যাত্রা শুরু করে এটি। ৭টা ৪৪ মিনিট নাগাদ বনগাঁ স্টেশনে পৌঁছে, সেখান থেকে সকাল ৭টা ৫২–৫৫ মিনিট নাগাদ শিয়ালদহের উদ্দেশে ছাড়ে। প্রায় ৮০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে ৯টা ৩৭ মিনিটে ট্রেনটি শিয়ালদহ স্টেশনে গিয়ে থামে। কামরাগুলি ঝকঝকে, ঠান্ডা বাতাসে আরামদায়ক, পাশাপাশি নিরাপত্তার জন্য উপস্থিত রয়েছেন সশস্ত্র রেলকর্মীরাও।
শিয়ালদহ থেকে এই ট্রেন সন্ধ্যা ৬টা ১৪ মিনিটে ছাড়ে। রাত ৮টা ৪ মিনিটে বনগাঁ এবং ৮টা ৪১ মিনিট নাগাদ রানাঘাট পৌঁছায়। অর্থাৎ প্রতিদিন আপ ও ডাউন দুই দিকেই একটি করে ট্রেন চলবে। পাশাপাশি একই দিনে শিয়ালদহ–কৃষ্ণনগর শাখাতেও এসি লোকাল চালু হয়েছে।
টিকিট ও ভাড়া! (AC Local Train)
এই ট্রেনে সাধারণ লোকালের তুলনায় ভাড়া কিছুটা বেশি। শিয়ালদহ থেকে বনগাঁ পর্যন্ত ভাড়া ১২০ টাকা। সর্বনিম্ন ভাড়া ৩৫ টাকা এবং সর্বোচ্চ ১৫০ টাকা। স্টেশনভেদে ভাড়া নিম্নরূপ—
- শিয়ালদহ – বিধাননগর রোড ৩৫ টাকা
- শিয়ালদহ – দমদম জংশন ৩৫ টাকা
- শিয়ালদহ – দমদম ক্যান্টনমেন্ট ৩৫ টাকা
- শিয়ালদহ – মধ্যমগ্রাম ৬০ টাকা
- শিয়ালদহ – বারাসত ৬০ টাকা
- শিয়ালদহ – দত্তপুকুর ৮৫ টাকা
- শিয়ালদহ – হাবরা ৯০ টাকা
- শিয়ালদহ – গোবরডাঙা ১০৫ টাকা
- শিয়ালদহ – ঠাকুরনগর ১০৫ টাকা
- শিয়ালদহ – বনগাঁ ১২০ টাকা
- শিয়ালদহ – মাঝেরগ্রাম ১৩০ টাকা
- শিয়ালদহ – রানাঘাট ১৫০ টাকা
যাত্রীদের উচ্ছ্বাস ও অভিজ্ঞতা (AC Local Train)
প্রথম দিন থেকেই বনগাঁ স্টেশনে টিকিট কাউন্টারে দীর্ঘ লাইন পড়ে। অনেকেই এই ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাক্ষী হতে চেয়েছিলেন। গোবরডাঙার রত্না চৌধুরী প্রথম টিকিট কেটে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে বলেন, “প্রথম টিকিট প্রাপক হয়ে দারুণ লাগছে, তবে ভাড়াটা যদি কিছুটা কম হত ভালো হতো। বনগাঁ শাখার বহু মানুষ গ্রামীণ এলাকা থেকে যাতায়াত করেন, তাঁদের জন্য টিকিট অনেকটা বেশি।”
বারাসত থেকে যাত্রী সোহন মণ্ডল বলেন, “৬০ টাকা দিয়ে টিকিট কাটার পরে ভেবেছিলাম পয়সা উসুল হবে তো? কিন্তু এই ঠান্ডা, আরামদায়ক যাত্রা সত্যিই চমৎকার।” বেলঘরিয়ার প্রভাত কুমার চট্টোপাধ্যায় প্রথম টিকিট কেনার আনন্দে জানান, নতুন রুট বা নতুন পরিষেবা শুরু হলে প্রথম দিন টিকিট সংগ্রহ করা তাঁর নেশার মতো। কৃষ্ণনগরের চম্পা নন্দী বলেন, “মেয়ের ইচ্ছেতেই ৮৫ টাকা দিয়ে টিকিট কেটে এসি লোকালে বনগাঁ এলাম। সত্যিই আরামদায়ক।”
ভাড়া নিয়ে দ্বিমত? (AC Local Train)
যদিও যাত্রীদের বড় একটি অংশ মনে করছেন প্রতিদিন এত টাকা খরচ করে যাতায়াত করা কঠিন হবে। বনগাঁ শাখায় অধিকাংশ যাত্রী নিত্যপ্রয়োজনে ট্রেনে ওঠেন, তাই সাধারণ লোকালের তুলনায় অনেকটাই বেশি ভাড়া দেওয়া তাঁদের পক্ষে সবসময় সম্ভব নয়। অনেকেই রেলের কাছে দাবি জানিয়েছেন, ভাড়া কিছুটা কমানো হলে এই ট্রেনের জনপ্রিয়তা আরও বাড়বে।

ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা কী! (AC Local Train)
শিয়ালদহ–বনগাঁ রুটে এসি লোকালের সূচনা নিঃসন্দেহে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। বহু বছর ধরে এই রুটের যাত্রীদের একটাই আক্ষেপ ছিল—অতিরিক্ত ভিড় ও অস্বস্তিকর জার্নি। এবার সেই চিত্র পাল্টানোর সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। আরামদায়ক ও নিরাপদ ভ্রমণের জন্য এসি লোকাল একটি বড় বিকল্প। তবে এর সাফল্য অনেকটাই নির্ভর করছে ভাড়া কাঠামো ও যাত্রীদের আর্থিক সক্ষমতার উপর।

আরও পড়ুন: Durga Puja 2025 Weather: পুজোয় ভাসবে বাংলা? নিম্নচাপের ঘনঘটা দেখে চিন্তায় বাঙালী!
৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫ বনগাঁ শাখার ইতিহাসে এক মাইলফলক হয়ে রইল। দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে, গরম-ভিড়ের যন্ত্রণা ভুলিয়ে বনগাঁ–শিয়ালদহ শাখায় যাত্রা শুরু করল এসি লোকাল। নিত্যযাত্রীদের কাছে এটি যেন হাতের নাগালে স্বপ্নের মতো। যদিও ভাড়া কিছুটা বেশি হওয়ায় প্রতিদিন ব্যবহার করা নিয়ে সংশয় আছে, তবু যাত্রীদের আশা—রেল কর্তৃপক্ষ ভাড়ার বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করবে এবং এই আরামদায়ক যাত্রা আরও বেশি মানুষের নাগালে পৌঁছবে।