ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: গভীর রাতে রাজ্যসভাতেও মিলল ফল। ১২ ঘণ্টার ম্যারাথন আলোচনার পাশ ওয়াকফ বিল লোকসভার পর রাজ্যসভাতেও পাশ হয়ে গেল ওয়াকফ সংশোধনী বিল(Waqf Amendment Bill)। এই বিলের পক্ষে পড়ল ১২৮টি ভোট। বিপক্ষে ভোট পড়ল ৯৫টি। নতুন আইন প্রণয়ন হতে আর কোনও সমস্যা রইল না। বিলটির আইনে পরিণত হওয়া শুধু এখন সময়ের অপেক্ষা। রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু সই করলেই বদলে যাবে ৭০ বছরের পুরনো আইন।
রাজ্যসভায় পাশ ওয়াকফ সংশোধনী বিল(Waqf Amendment Bill)
সমস্ত বিতর্ক এবং সংশোধনী নিয়ে ভোটাভুটি শেষে বৃহস্পতিবার রাত ২টো ১৯ মিনিটে ‘ওয়াকফ (সংশোধনী) বিল(Waqf Amendment Bill), ২০২৫’ পাশ করানোর প্রস্তাব পেশ করেন সংসদীয় বিষয়ক এবং সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রী কিরেন রিজিজু। ধ্বনিভোটের ফলাফলে বিরোধী শিবির সন্তুষ্ট হয়নি। তারা বিভাজন (ডিভিশন) চায়। ভোটাভুটি শেষে রাত ২টো ৩৪ মিনিটে ফল ঘোষিত হয়। তাতে দেখা যায় বিলের পক্ষে পড়েছে ১২৮টি ভোট। আর বিপক্ষে পড়েছে ৯৫টি ভোট। ৩৩ ভোটের ব্যবধানে ওয়াকফ বিল রাজ্যসভায় পাশ হয়ে যায়। বিতর্ক চলে ১২ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে।
মন্ত্রী কিরণ রিজিজুর জবাব(Waqf Amendment Bill)
রাজ্যসভায় কেন্দ্রীয় সংসদীয় বিষয়ক মন্ত্রী কিরণ রিজিজু বলেন, “ওয়াকফ বোর্ড একটি বিধিবদ্ধ সংস্থা। সমস্ত সরকারি সংস্থার ধর্মনিরপেক্ষ হওয়া উচিত”। কেন্দ্রের তরফে জানানো হয়েছে, ওয়াকফে ২২ জন সদস্যের মধ্যে মাত্র ৪ জন অ-মুসলিম প্রতিনিধি থাকবে। কংগ্রেস সহ বিরোধীদলগুলিকে আক্রমণ করে রিজিজু বলেন, “আপনারা (বিরোধী) মুসলিমদের সমাজের মূলস্রোত থেকে সরিয়ে দিয়েছেন। ৬০ বছর ধরে কংগ্রেস ও অন্যান্য দল দেশ শাসন করেছে, কিন্তু তারা মুসলিমদের জন্য কিছু করেনি। মুসলিমরা গরিব, এর জন্য দায়ী কে? আপনারা (কংগ্রেস)। মোদী সরকার এখন তাদের তুলে ধরার প্রচেষ্টা করছে।”
আরও পড়ুন: Air Pollution: আকাশছোঁয়া দূষণে বিষ বাতাসের কবলে রাজধানী, দিল্লিতে দূষণ রুখতে নতুন পন্থা সরকারের
কী কী পরিবর্তন হবে ওয়াকফ আইনে?
১.ওয়াকফ বোর্ড চাইলেই কোনও সম্পত্তিকে ওয়াকফের সম্পত্তি বলে দাবি করতে পারবে না।
২. বদলাবে ওয়াকফে সম্পত্তি দানের নিয়মও । অন্তত পাঁচ বছর ইসলাম ধর্মাচরণ করলে তবেই ওয়াকফে ব্যক্তিগত সম্পত্তি দান করা যাবে।
৩. যে ওয়াকফ প্রতিষ্ঠানগুলির আয় ১ লাখ টাকার উপরে, রাজ্য তাদের অডিট করবে।
৪. এবার থেকে রাজ্য ও কেন্দ্রের ওয়াকফ বোর্ডে অ-মুসলিম প্রতিনিধিত্ব থাকা বাধ্যতামূলক।
আরও পড়ুন: Lion In Kitchen: ভেবেছিলেন বেড়াল কিন্তু রান্নাঘরে লুকিয়ে সিংহ, আতঙ্কে গ্রামবাসী!
৫. মুসলিম মহিলাদের সম্পত্তিতে কোনও অধিকার ছিল না। এই সংশোধনী বিলে বলা হয়েছে, ওয়াকফে সম্পত্তি দানের আগে পরিবারের মহিলাদের তাদের নায্য উত্তরাধিকার দিতে হবে। বিশেষ ধারা রয়েছে বিধবা, বিবাহ বিচ্ছিন্না ও অনাথদের জন্য।
৬. ওয়াকফ বোর্ডকে যে বাধ্যতামূলক অনুদান দিতে হত ওয়াকফ প্রতিষ্ঠানগুলিকে, তাও ৭ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হয়েছে।
৭. ওয়াকফ সম্পত্তি ম্যানেজমেন্টের জন্য একটি কেন্দ্রীয় পোর্টাল চালু করা হবে।
রাষ্ট্রপতির সইয়ে বদলে যাবে পুরনো আইন
রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু সই করলেই বদলে যাবে পুরনো আইন। ১৯৫৪ সালের আইনকে সংশোধন করে ১৯৯৫ সালে ওয়াকফ বোর্ডের ক্ষমতা অনেকটাই বাড়িয়েছিল ভারত সরকার। কিন্তু ৩০ বছর পরে যে সংশোধনে সিলমোহর দিল ভারতীয় সংসদ, তাতে বোর্ডের ক্ষমতা এবং কার্যকারিতার খোলনলচে বদলে যেতে চলেছে। সব ক’টি বিরোধী দলেরই দাবি, ওয়াকফ আইনের(Waqf Amendment Bill)এই সংশোধন ওয়াকফ বোর্ডের ক্ষমতাকে বেনজির ভাবে খর্ব করে দিচ্ছে।