ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: দীর্ঘ ১৫ মাসের অপেক্ষার পর অবশেষে মার্কিন মুলুক থেকে ভারতে এসে পৌঁছেছে অত্যাধুনিক অ্যাপাচে এএইচ-৬৪ই কমব্যাট হেলিকপ্টার(AH 64e Apache Helicopter)। ভারতীয় স্থলসেনার হাতে প্রথম ব্যাচের তিনটি অ্যাপাচে হেলিকপ্টার আনুষ্ঠানিকভাবে যুক্ত হয়েছে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রক জানিয়েছে, এই তিনটি হেলিকপ্টার ইতিমধ্যেই পশ্চিম ফ্রন্টের গুরুত্বপূর্ণ ঘাঁটি যোধপুরে মোতায়েন করা হয়েছে। পাক সীমান্ত লাগোয়া এই ঘাঁটি থেকেই অ্যাপাচের ‘ট্যাঙ্ক কিলার’ শক্তি ও নিখুঁত নিশানা ভারতীয় সেনার নতুন অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হবে। প্রতিরক্ষা সূত্রে খবর, আগামী নভেম্বরেই আরও তিনটি অ্যাপাচে হাতে পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, ফলে মোট ছয়টি ইউনিট নিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ স্কোয়াড্রন গঠিত হবে স্থলসেনার জন্য(AH 64e Apache Helicopter)।
ভারতীয় প্রতিরক্ষা শক্তির নতুন অধ্যায় (AH 64e Apache Helicopter)
২০১৯ সাল থেকেই ভারতীয় বায়ুসেনার হাতে রয়েছে ২২টি অ্যাপাচে হেলিকপ্টার(AH 64e Apache Helicopter)। সেগুলি বর্তমানে পাঠানকোট এবং জোরহাট ঘাঁটিতে মোতায়েন আছে। কিন্তু স্থলসেনার জন্য আলাদা করে অ্যাপাচে কেনা একেবারেই নতুন উদ্যোগ। ২০২০ সালে স্থলসেনার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে ৬টি অ্যাপাচে কেনার জন্য ৬০ কোটি ডলারের চুক্তি করে ভারত। এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল, কারণ অ্যাপাচে এএইচ-৬৪ই কেবল একটি আক্রমণাত্মক হেলিকপ্টার নয়, এটি আধুনিক যুদ্ধক্ষেত্রে এককভাবে একাধিক মিশন সম্পন্ন করার সক্ষমতা রাখে।
স্থলসেনার নতুন আর্মি এভিয়েশন কোর-এর জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণ নিয়েছেন পাইলটরা(AH 64e Apache Helicopter)। বায়ুসেনার বিদ্যমান অ্যাপাচের অপারেশনাল অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে স্থলসেনার জন্য আলাদা টিম গড়ে তোলা হয়েছে। যদিও এই হেলিকপ্টারগুলির ডেলিভারি হওয়ার কথা ছিল ২০২৪ সালের মার্চে, কিন্তু তা বিলম্বিত হয়ে ২০২৫ সালের জুলাইয়ে এসে পৌঁছায়। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বর্তমান মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের টানাপোড়েন এই বিলম্বের অন্যতম কারণ হতে পারে।
কেন এত উত্তেজনা অ্যাপাচে নিয়ে? (AH 64e Apache Helicopter)
অ্যাপাচে আসার খবর প্রকাশ্যে আসার পর থেকেই এটি সংবাদমাধ্যম ও সামরিক মহলে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে(AH 64e Apache Helicopter)। এর মূল কারণ এর প্রযুক্তিগত ক্ষমতা এবং যুদ্ধক্ষেত্রে বহুমুখী ব্যবহারের সুবিধা।
অ্যাপাচে এএইচ-৬৪ই বিশ্বের অন্যতম অত্যাধুনিক মাল্টিরোল কমব্যাট হেলিকপ্টার। প্রায় ৫৮ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৪৮ ফুট রোটর ব্যাস বিশিষ্ট এই কপ্টার শক্তিশালী টার্বোশ্যাফ্ট জিই-৭০১ ইঞ্জিন দ্বারা চালিত। এর রয়েছে স্বতন্ত্র ট্যান্ডেম-সিট ককপিট, যেখানে পাইলট এবং গানার পৃথকভাবে বসে অপারেশন চালান।
প্রধান বৈশিষ্ট্যসমূহ:
- ঘণ্টায় ১৮২ মাইল গতি এবং ২০ হাজার ফুট উচ্চতায় উড্ডয়নের ক্ষমতা।
- মিনিটে ২,৮০০ ফুট উঁচুতে ওঠার সক্ষমতা।
- প্রতিপক্ষের ট্যাঙ্ক, সাঁজোয়া গাড়ি, রাডার পোস্ট, বাঙ্কার এবং জঙ্গি শিবির ধ্বংসে অতুলনীয় দক্ষতা।
- আনম্যানড এরিয়াল ভেহিকল (ড্রোন) ধ্বংস করতেও সমান কার্যকরী।
- রাতের অন্ধকার বা প্রতিকূল আবহাওয়াতেও শত্রুর অবস্থান নির্ণয়ে দক্ষ।
- Longbow Fire Control Radar যা একসঙ্গে ১২৮টি লক্ষ্যবস্তু স্ক্যান করতে পারে এবং ১২টিতে একযোগে আঘাত হানতে পারে।
- রিয়েল-টাইম ডেটা শেয়ারিং ও নেটওয়ার্কিং ক্ষমতা।
- আকাশ থেকে ভূমি ‘হেলফায়ার’ ক্ষেপণাস্ত্র এবং আকাশ থেকে আকাশে স্টিংগার মিসাইল সংযুক্ত।
- ৩০ এমএম এম২৩০ অটোক্যানন, যা থেকে প্রতি মিনিটে প্রায় ১,২০০ রাউন্ড গুলি ছোড়া যায়।
- ১০,৪৩২ কেজি ওজন বহনে সক্ষম এবং ২ জন ক্রু বহনের ক্ষমতা।

আরও পড়ুন: Thailand Cambodia Border Dispute : থাইল্যান্ড-কাম্বোডিয়া সীমান্ত বিরোধের শুরু কীভাবে?
‘উড়ন্ত ট্যাঙ্ক’ – শক্তি ও বুদ্ধির মিশ্রণ (AH 64e Apache Helicopter)
অ্যাপাচে শুধু শক্তিশালী অস্ত্রই নয়, বুদ্ধিমত্তার দিক থেকেও এটি অনন্যঅ্যাপাচে শুধু শক্তিশালী অস্ত্রই নয়, বুদ্ধিমত্তার দিক থেকেও এটি অনন্য(AH 64e Apache Helicopter)। এর মাথার ওপর বসানো মাস্ট-মাউন্টেড মিলিমিটার-ওয়েভ লংবো রেডার সিস্টেম যুদ্ধক্ষেত্রে শত্রুর গতিবিধি নজরে রাখে। এটি একসঙ্গে ১২৮টি টার্গেট শনাক্ত করতে পারে এবং মুহূর্তের মধ্যে প্রাধান্য অনুযায়ী ২৮টিতে নিশানা করতে পারে। এর ফলে প্রতিপক্ষকে আক্রমণের আগেই অসহায় করে ফেলা যায়।
। এর মাথার ওপর বসানো মাস্ট-মাউন্টেড মিলিমিটার-ওয়েভ লংবো রেডার সিস্টেম যুদ্ধক্ষেত্রে শত্রুর গতিবিধি নজরে রাখে। এটি একসঙ্গে ১২৮টি টার্গেট শনাক্ত করতে পারে এবং মুহূর্তের মধ্যে প্রাধান্য অনুযায়ী ২৮টিতে নিশানা করতে পারে। এর ফলে প্রতিপক্ষকে আক্রমণের আগেই অসহায় করে ফেলা যায়।
শুধু আক্রমণ নয়, এর প্রতিরক্ষা ক্ষমতাও বিস্ময়কর(AH 64e Apache Helicopter)। অ্যাপাচের এয়ারফ্রেম তৈরি করা হয়েছে দুর্ঘটনা-প্রতিরোধী বর্ম দিয়ে। রোটর ব্লেড অত্যন্ত শক্তপোক্ত, যা শত্রুর গুলিকেও সহ্য করতে পারে। এই কারণে একে অনেক সময় ‘উড়ন্ত ট্যাঙ্ক’ বলা হয়।

ভারতের প্রতিরক্ষা কৌশলে অ্যাপাচের তাৎপর্য (AH 64e Apache Helicopter)
অপারেশন সিঁদুরে পাকিস্তানকে সামরিকভাবে বড় ধাক্কা দেওয়ার পর ভারতীয় সেনা (INDIAN ARMY) আরও প্রস্তুত থাকতে চাইছে(AH 64e Apache Helicopter)। সীমান্তে সন্ত্রাসবাদী শিবির ও জঙ্গি মডিউল ধ্বংসের জন্য দ্রুত এবং নিখুঁত আক্রমণ চালাতে অ্যাপাচের মতো হেলিকপ্টার অমূল্য সম্পদ।
প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অ্যাপাচে যোগ দেওয়ায় ভারতীয় সেনা পশ্চিম সীমান্তে “হট স্ট্যান্ডবাই” মোডে থাকবে। অর্থাৎ যে কোনও সময় শত্রুর নড়াচড়ায় দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানানো সম্ভব হবে। পাকিস্তানের কৌশলগত পরিকল্পনা এই হেলিকপ্টারের নজরদারির বাইরে থাকবে না(AH 64e Apache Helicopter)।

ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট (AH 64e Apache Helicopter)
ভারতের প্রতিরক্ষা আধুনিকীকরণের এই পদক্ষেপ শুধু পাকিস্তানের জন্য বার্তা নয়, বরং বৈশ্বিক কূটনৈতিক সমীকরণের দিক থেকেও তাৎপর্যপূর্ণ(AH 64e Apache Helicopter)। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের প্রতিরক্ষা সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে, যদিও সাম্প্রতিক সময়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে কিছুটা অম্লমধুর সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, অ্যাপাচের ডেলিভারি বিলম্বে এরও প্রভাব থাকতে পারে।
তবে শেষমেশ অ্যাপাচের আগমন প্রমাণ করেছে যে মার্কিন প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি নিয়ে ভারত এখনও এক গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। বিশ্বজুড়ে ইজরায়েল, যুক্তরাজ্য সহ ১৭টি দেশ এই হেলিকপ্টার ব্যবহার করে।
পাকিস্তানের ওপর প্রভাব (AH 64e Apache Helicopter)
অ্যাপাচের যুদ্ধক্ষমতা পাকিস্তানের জন্য এক বড় হুমকি(AH 64e Apache Helicopter)। প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকদের মতে, পাকিস্তান এখন থেকে সীমান্তে তার প্রতিটি পদক্ষেপের আগে একাধিকবার ভাববে। কারণ ভারতের হাতে এসেছে এক ‘নিঃশব্দ ঘাতক’, যা রাতের অন্ধকারে হঠাৎ আক্রমণ করে শত্রুকে ছারখার করতে পারে।
অ্যাপাচে যুক্ত হওয়ার ফলে ভারতীয় সেনা ট্যাঙ্ক ফর্মেশন কিংবা সন্ত্রাসী ঘাঁটি ধ্বংসে এক ধাপ এগিয়ে যাবে। এর রিয়েল-টাইম ডেটা শেয়ারিং ও ড্রোন নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা পাকিস্তানের নজরদারি ব্যবস্থাকেও চ্যালেঞ্জ করবে।
ভবিষ্যতের পরিকল্পনা (AH 64e Apache Helicopter)
ভারতীয় সেনার আধুনিকীকরণ পরিকল্পনার অন্যতম লক্ষ্য হলো সীমান্তে দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানানোর সক্ষমতা বাড়ানো(AH 64e Apache Helicopter)। প্রতিরক্ষা সূত্রে খবর, আগামী কয়েক বছরের মধ্যে অ্যাপাচে স্কোয়াড্রন আরও বাড়ানো হতে পারে। পাশাপাশি, দেশীয় প্রযুক্তির উন্নতির জন্য ‘মেড ইন ইন্ডিয়া’ আক্রমণাত্মক হেলিকপ্টার প্রকল্পে গতি আনার চেষ্টা চলছে।
সর্বোপরি, অ্যাপাচে এএইচ-৬৪ই-এর যোগদান ভারতীয় স্থলসেনার ক্ষমতাকে বহুগুণে বাড়িয়ে দিল। পশ্চিম সীমান্তে যুদ্ধ পরিস্থিতি বা বিশেষ অভিযানে এখন ভারতীয় সেনার হাতে রয়েছে এক ‘অ্যাপেক্স প্রিডেটর’, যা নিখুঁত নিশানায় শত্রুকে ধ্বংস করতে সক্ষম। এর আগমনে পাকিস্তান শুধু সামরিকভাবে নয়, কৌশলগত দিক থেকেও আরও চাপে পড়ল(AH 64e Apache Helicopter)।