ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: সিরিয়ার বিদ্রোহী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শাম (HTS)-এর প্রাক্তন নেতা আহমেদ আল-শারা-কে (Ahmed al-Sharaa) দেশের অন্তর্বর্তীকালীন রাষ্ট্রপতি হিসাবে নিয়োগ করা হয়েছে।
গত মাসে সিরিয়ার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য HTS সামরিক অভিযান চালিয়েছিল।
শারা (Ahmed al-Sharaa) ডিসেম্বরের শুরু থেকেই দেশের প্রকৃত শাসক হিসেবে কাজ করছিলেন। বুধবার এক বিদ্রোহী গোষ্ঠীর বৈঠকের পর তাঁকে সরকারিভাবে অন্তর্বর্তীকালীন রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করা হয়।
সংবিধান বাতিল, পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়া (Ahmed al-Sharaa)
সিরিয়ার সামরিক মুখপাত্র এক বিবৃতিতে জানান (Ahmed al-Sharaa), দেশের সংসদ বিলুপ্ত করা হয়েছে এবং নতুন একটি নিযুক্ত আইনসভা গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ২০১২ সালে প্রণীত সংবিধান বাতিল করা হয়েছে। পাশাপাশি সিরিয়ার সামরিক ও নিরাপত্তা সংস্থাগুলি ভেঙে নতুন সেনাবাহিনী ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠান গঠন করা হবে। দেশের সব বিদ্রোহী গোষ্ঠী বিলুপ্ত করা হবে এবং তাদের সদস্যদের নতুন জাতীয় সেনাবাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
যদিও HTS-এর অস্তিত্ব নিয়েই প্রশ্ন উঠছে, কারণ আদেশে সরাসরি HTS-এর নাম উল্লেখ করা হয়নি।
আরও পড়ুন: Awami League: ইউনূসের ইস্তফার দাবি, বাংলাদেশে ধর্মঘটের ডাক আওয়ামী লীগের
নতুন সরকারের অগ্রাধিকার কী? (Ahmed al-Sharaa)
আহমেদ আল-শারা (Ahmed al-Sharaa) জানান, দেশের ক্ষমতার শূন্যতা পূরণ করা হবে নতুন সরকারের অগ্রাধিকার। পাশাপাশি নাগরিক শান্তি বজায় রাখা এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান গঠন করাও তাদের দায়িত্ব হবে।
আগামীতে কী হবে?
এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার মার্চ মাসে ক্ষমতা হস্তান্তর করবে বলে ঘোষণা করেছে।
কিন্তু এই পরিবর্তন কীভাবে হবে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। একটি সাক্ষাৎকারে শারা বলেছিলেন, দেশে নতুন নির্বাচন করতে চার বছর লেগে যেতে পারে। নতুন সংবিধান তৈরি করতে তিন বছর সময় লাগতে পারে।
তিনি একটি “জাতীয় সংলাপ সম্মেলন” আয়োজনের প্রতিশ্রুতি দিলেও, বারবার তা পিছিয়ে দিচ্ছেন।
HTS ও বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর ভবিষ্যৎ কী?
HTS মূলত সিরিয়ার আল-কায়েদার একটি শাখা ছিল। এটি বর্তমানে দেশটির সবচেয়ে শক্তিশালী বিদ্রোহী গোষ্ঠী। গত বছর, HTS-র নেতৃত্বেই আসাদ সরকারকে উৎখাত করা হয়।
এখন প্রশ্ন উঠেছে, HTS কী জাতীয় সেনাবাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত হবে? এছাড়া অন্য ইসলামপন্থী বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর কী হবে?
সিরিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রক জানিয়েছে, তারা বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে আলোচনা করবে। একটি একত্রীকৃত সামরিক বাহিনী গঠন করা হবে।
কিন্তু সমস্যা হলো, অন্যান্য বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলি HTS-এর মতো শৃঙ্খলাবদ্ধ নয়। তাদের মতাদর্শও HTS-এর থেকে ভিন্ন। আসাদ সরকার পতনের পর দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রচুর অস্ত্র, ট্যাঙ্ক এবং কামান ছড়িয়ে পড়েছে। অনেক বিদ্রোহী সেই অস্ত্র দখল করে নিয়েছে।
শারা এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী প্রায় প্রতিদিন বিদ্রোহী কমান্ডারদের সঙ্গে বৈঠক করছেন।
বিদেশি শক্তিগুলোর প্রতিক্রিয়া কী?
আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা সিরিয়ার ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত। সেখানে লিবিয়ার মতো অরাজকতা তৈরি হবে কি না, তা নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে। লিবিয়ায় দীর্ঘদিনের শাসক মুয়াম্মার গাদ্দাফির পতনের পর দেশটি দফায় দফায় গৃহযুদ্ধের শিকার হয়। সিরিয়ার অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এখন আঞ্চলিক শক্তিগুলোর সমর্থন চাইছে। তারা ইতিমধ্যে সৌদি আরব ও তুরস্ক সফর করেছে।
এই সফরে ছিলেন বিদেশ মন্ত্রী, প্রতিরক্ষা মন্ত্রী এবং গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান। এই সফরে তাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল বিদেশি তহবিল সংগ্রহ করা ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাওয়া।
কুর্দি গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে আলোচনা
সিরিয়ার নতুন সরকার এখন আমেরিকা সমর্থিত কুর্দি গোষ্ঠী “সিরিয়ান ডেমোক্র্যাটিক ফোর্সেস” (SDF)-এর সঙ্গে আলোচনায় বসেছে।
SDF দেশের এক-তৃতীয়াংশ নিয়ন্ত্রণ করে। তাদের দাবি, তারা স্বাধীন সামরিক বাহিনী হিসেবে কাজ চালিয়ে যাবে। কিন্তু সিরিয়ার অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তা মানতে রাজি নয়। অন্যদিকে, SDF ও তুরস্ক সমর্থিত “সিরিয়ান ন্যাশনাল আর্মি” (SNA)-র মধ্যে সংঘর্ষ চলছে। সিরিয়ার উত্তরে এই লড়াই ক্রমশ তীব্র হয়ে উঠছে।