ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: তৃণমূল সরকার একাধিকবার তুলেছেন কেন্দ্রীয় বঞ্চনার অভিযোগ। তোপ দেগেছেন নরেন্দ্র মোদিকে। এবার উপনির্বাচনের আগেই রাজ্য সরকার আবাস যোজনার টাকা দিতে শুরু করেছে। ঠিক তখনই ফের শাসক দলের বিরুদ্ধে উঠল আবাস যোজনার লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ। উপভোক্তার নাম ও ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নম্বর পরিবর্তন করে আবাস যোজনার টাকা হাতানোর অভিযোগ উঠল প্রাক্তন পঞ্চায়েত প্রধানের বিরুদ্ধে।
দুর্নীতির শিকার হয়েছেন শারিরীক প্রতিবন্ধী থেকে ভিক্ষুক। ইতিমধ্যেই তেহট্টের পাথরঘাটা ১ পঞ্চায়েতের মালিয়াপোতা গ্রামের ২১ জন উপভোক্তা লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন। প্রায় ২৫ লক্ষ ২০ হাজার টাকার দুর্নীতি হয়েছে বলে অভিযোগ। যা নিয়ে রীতিমত আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে এলাকায়।
আরও পড়ুন: থানায় ঢুকে পুলিশকে মারধরের অভিযোগ, উত্তেজনা ক্যানিং থানায়
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মালিয়াপোতার বাসিন্দা নওশাদ মণ্ডল একজন শারিরীক প্রতিবন্ধী। বিড়ি বেঁধে চলে দিন গুজরান। তার অভিযোগ, আবাস যোজনায় আবেদন করার পর ২০২১ সালে তার ছেলে সেলিম মণ্ডলের নামে পঞ্চায়েত থেকে আবাস যোজনার ঘরের অনুমোদন মেলে। এরপর তিনি পঞ্চায়েতে যোগাযোগ করলে পঞ্চায়েত প্রধান তাকে জানান, ঘর নির্মাণের টাকা পেতে হলে ৩০ হাজার টাকা তাকে অগ্রিম দিতে হবে। তিনি তা দিতে অসমর্থ হওয়ায় ঘর মেলেনি। এতদিন ধরে তিনি আশায় ছিলেন হয়তো বা ঘর মিলবে। কিন্তু এখন নতুন করে আবাস যোজনার সমীক্ষা শুরু হওয়ার পর তিনি জানতে পারেন সেই তালিকায় তার বা তার ছেলের নাম নেই।
এরপর তিনি পঞ্চায়েতে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন ২০২১ সালেই তার ছেলের নামে ঘরের টাকা বরাদ্দ হয়ে গিয়েছে। সেই টাকা তুলে ঘর নির্মাণ সম্পন্ন করা হয়েছে। বাস্তবে তিনি বা তার ছেলে একটি টাকাও পাননি এবং তিনি ঘর নির্মাণও করেননি। এখনও কুঁড়ে ঘরেই বসবাস করছেন। এরপর তিনি আরও খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন আবাস যোজনার তার ID নম্বর (WB2661340) ব্যবহার করে শ্যামলী মণ্ডল নামে এক মহিলার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে তিন দফায় ঘরের জন্য অনুমোদিত ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। তাঁর অভিযোগ তৎকালীন পঞ্চায়েত প্রধান এই দুর্নীতি করেছে।
আরও পড়ুন: ‘প্রবীণদের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী’, আয়ুষ্মান ভারত নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে পাল্টা খোঁচা তৃণমূলের
আরও পড়ুন: দীপাবলিতে বামেদের ‘দ্রোহকালের বইঘর’, বুকস্টলেও আরজি করের বিচারের দাবি
একই অভিযোগ করেছেন আহারণ বিবি, তার স্বামী ভিন দেশে ভিক্ষাবৃত্তি করে জীবিকা নির্বাহ করে। তার স্বামীর নামেও আবাস যোজনার ঘরের অনুমোদন মিললেও একটি টাকাও তিনি পাননি। তাদের টাকাও একই ভাবে আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে অভিযোগ। দুর্নীতির শিকার হয়েছেন আকবর মণ্ডল, সৈফুদ্দিন মণ্ডল সহ প্রায় ২১ জন।
পঞ্চায়েত সূত্রে জানা গিয়েছে আবাস যোজনার ঘর নির্মাণের জন্য ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা বরাদ্দ করা হয়। তিনটি কিস্তিতে এই টাকা দেওয়া হয়। প্রথম কিস্তিতে দেওয়া হয় ৬০ হাজার টাকা। দ্বিতীয় কিস্তিতে দেওয়া হয় ৫০ হাজার টাকা ও তৃতীয় কিস্তিতে ১০ হাজার টাকা। প্রথম কিস্তির টাকা পাওয়ার পর ঘরের নির্দিষ্ট অংশ নির্মাণ করতে হয়। সেই অংশ নির্মাণ হলে পঞ্চায়েত থেকে সমীক্ষা করে ফের রিপোর্ট দেওয়ার পর পরের কিস্তির অনুমোদন দেওয়া হয়। সেক্ষেত্রে যে সময় লাগার কথা এক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে তার অনেক কম সময়ের মধ্যেই তিন কিস্তির টাকা প্রদান করে হয়েছে। যা দুর্নীতির তত্ত্বকেই প্রতিষ্ঠা করে।
আরও পড়ুন: ‘দলের কিছু গদ্দার টাকা খেয়ে আমাকে হারিয়েছে’ বিস্ফোরক সুজাতা মণ্ডল
অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে নিয়েছেন ওই পঞ্চায়েতের বর্তমান উপ-প্রধান। তার দাবি প্রাক্তন পঞ্চায়েত প্রধানের আমলে এই দুর্নীতি হয়েছে। তদন্ত চেয়ে বিডিয়োর দ্বারস্থ হয়েছেন তিনি। যদিও অভিযোগ করে প্রাক্তন পঞ্চায়েত প্রধান জানিয়েছেন বিডিও অফিসের কর্মীরা এই দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত। তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন তেহট্ট ১ ব্লকের বিডিও।