ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: দেশে যাঁরা ইংরেজিতে কথা বলেন, তাঁদের লজ্জিত হতে হবে। এমনই মন্তব্য করেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ(Amit Shah)। তাঁর এই মন্তব্যের ব্যাখ্যাও দিয়েছেন শাহ। জানিয়েছেন, ভারতের ভাষাতাত্ত্বিক ঐতিহ্যকে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করার সময় এসেছে। সে ক্ষেত্রে এমন একটি সমাজ গড়ে উঠবে, যেখানে কেউ ইংরেজিতে কথা বলতে লজ্জা পাবেন।দেশজুড়ে ভাষা-রাজনীতির পারদ যখন চড়চড় করে চড়ছে, তখন কেন্দ্রের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য বিতর্ক তৈরি করল।
অমিত শাহের বক্তব্য (Amit Shah)
বৃহস্পতিবার একটি বইপ্রকাশ অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ(Amit Shah)।সেখানে মাতৃভাষার প্রচলন এবং প্রসারের উপর জোর দেওয়ার কথা বলেন শাহ। জানান, দেশের আঞ্চলিক ভাষাগুলি রত্নবিশেষ। সেই সূত্রেই তিনি বলেন, ‘এই দেশে যাঁরা ইংরেজিতে কথা বলেন, তাঁদের খুব শীঘ্রই লজ্জিত হতে হবে। অচিরেই এই ধরনের সমাজ গঠিত হবে। আমাদের ভাষাগুলি ছাড়া প্রকৃত ভারতবাসী হয়ে উঠতে পারব না।’ একই সঙ্গে শাহের সংযোজন, ‘আমাদের দেশ, সংস্কৃতি, ইতিহাসকে বুঝতে কোনও বিদেশি ভাষা সহায়ক হতে পারে না। আমি জানি লড়াইটা কত কঠিন। কিন্তু আমি এটাও জানি, ভারতীয় সমাজ এটা জিতবে। আমরা আমাদের ভাষাতেই দেশ চালাব।’ মন্ত্রীর বক্তব্যে উঠে এসেছে, ইংরেজিকে তিনি ‘ঔপনিবেশিক দাসত্বের প্রতীক’ হিসেবে অভিহিত করেছেন এবং বিশ্বব্যাপী এর গ্রহণযোগ্যতা কমবে বলে ভবিষ্যদ্বাণী করেন।

প্রধানমন্ত্রীর ‘পঞ্চপ্রাণ’ (Amit Shah)
ভাষার সূত্রেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ‘পঞ্চপ্রাণ’ বা পাঁচ শপথের কথা উল্লেখ করেন অমিত শাহ। তিনি বলেন, ‘অমৃতকালে মোদীজি ‘পঞ্চপ্রাণ’-এর শিলান্যাস করেছেন(Amit Shah)। উন্নত ভারত গড়ে তুলতে সব ধরনের দাসত্ব থেকে মুক্ত হতে হবে। নিজেদের ঐতিহ্য সম্পর্কে গর্বিত হতে হবে। একতা এবং সৌভ্রাতৃত্ব রক্ষায় দৃঢ়প্রতিজ্ঞ থাকতে হবে। কর্তব্যবোধ সম্পর্কে প্রতিটি নাগরিকের মধ্যে চেতনা জাগাতে হবে। ১৩০ কোটি ভারতীয় এই শপথ নেবে।’ তারপরেই শাহ জানান, ২০৪৭ সালে উন্নত ভারত গড়ে তুলতে ভারতের ভাষাগুলি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে।অমিত শাহের এই মন্তব্য দেশে নতুন শিক্ষা ব্যবস্থাকে সকলের নজরে এনে দিয়েছে। সেখানে কেন্দ্রীয় সরকার যে হিন্দিকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছে সেকথা সকলেই জানেন। এই বিষয়টি নিয়ে তামিলনাড়ু সবথেকে বেশি প্রতিবাদ করেছে।তারা দাবি করেছে বিজেপি দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে পাল্টে দেওয়ার কাজটি করতে চাইছে।

ভাষা বিতর্ক (Amit Shah)
অমিত শাহের এই মন্তব্য সেই সময় এলো, যখন দক্ষিণ ভারতের কয়েকটি রাজ্য ও বিরোধী দল কেন্দ্রের বিরুদ্ধে ‘হিন্দি চাপানোর’ অভিযোগ তুলছে(Amit Shah)। নতুন শিক্ষা নীতি-এর তিন-ভাষা নীতি নিয়ে বিশেষ করে তামিলনাড়ু সরকার সরব হয়েছে, তারা বলছে, শিক্ষার উন্নতির পেছনে নয়, হিন্দি ভাষা চাপানোর পরিকল্পনা চলছে। পশ্চিমবঙ্গ-সহ অন্যান্য রাজ্যও কেন্দ্রকে এই ইস্যুতে তীব্র সমালোচনা করেছে।এর আগে এই বছরই অমিত শাহ ঘোষণা করেছিলেন, ডিসেম্বর থেকে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের যোগাযোগ রাজ্যগুলোর মাতৃভাষায় করা হবে। তিনি ভাষার নামে বিভাজনকে শেষ করার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, দেশের মানুষ যেন আর ভাষার ভেদাভেদে বিভক্ত না হয়।

আরও পড়ুন- Uttar Pradesh: প্রেমিকের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ অবস্থায় স্ত্রী, তারপর স্বামী যা করলেন…
অমিত শাহের রাজনৈতিক বার্তা (Amit Shah)
অমিত শাহের সাম্প্রতিক মন্তব্য যে একপ্রকার রাজনৈতিক বার্তা, তা বলাই যায়(Amit Shah)। ২০২৪ লোকসভা ভোটের আগে জাতীয়তাবাদ, সংস্কৃতি এবং ভাষার ইস্যুকে সামনে রেখে বিজেপি যে নিজেদের সমর্থনঘাঁটি শক্ত করতে চাইছে, তা পরিষ্কার। তবে শাহের এই মন্তব্য দেশে নতুন করে ভাষা ভিত্তিক উত্তেজনা বাড়াতে পারে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।সংক্ষেপে, অমিত শাহের এই বক্তব্য দেশের ভাষা সংক্রান্ত বিতর্ককে নতুন করে জ্বালিয়ে দিয়েছে। একদিকে ভাষাগত ঐতিহ্যের সংরক্ষণ, অন্যদিকে ‘হিন্দি চাপানো’ ইস্যু তুমুল রাজনৈতিক রূপ নিচ্ছে। এই মূহুর্তে ভারতের ভাষা রাজনীতিতে উত্তেজনা ক্রমেই বাড়ছে, যার প্রভাব আগামী দিনের রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিসরেও পড়তে পারে।