Last Updated on [modified_date_only] by Aditi Singha
ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল : দুর্গাপূজা আজ বিশ্ববন্দিত উৎসব হলেও এর মূল শিকড় বহু প্রাচীন কাল থেকে চলে আসছে (Beginning of Durga Puja)। ষোড়শ শতাব্দীর মঙ্গলকাব্যে দুর্গার পূজার উল্লেখ পাওয়া যায়। সে সময় দুর্গাপূজা ছিল মূলত জমিদার ও রাজপরিবারের বিশেষ আচার। সাধারণ মানুষ সেখানে দর্শক মাত্র, পূজার আয়োজনের সঙ্গে তাদের প্রত্যক্ষ সম্পৃক্ততা ছিল না।
কার প্রথম উদ্যোগ (Beginning of Durga Puja)
ঐতিহাসিক দলিলে পাওয়া যায়, ১৫৮০ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ নদীয়ার ভক্তকুলের রাজা কংসনারায়ণ প্রথমবার দুর্গাপূজার মহাযজ্ঞ আয়োজন করেন। এটি বাংলার ইতিহাসে অন্যতম প্রাচীন দুর্গাপূজা বলে ধরা হয়। এই পূজাই পরবর্তীকালে অন্যান্য বনেদি জমিদারদের অনুপ্রেরণা জোগায়।
পূজার জাঁকজমক? (Beginning of Durga Puja)
১৭৫৭ সালের পলাশীর যুদ্ধের পর বাংলায় ইংরেজ শাসন কায়েম হয়। তখন জমিদার ও নবাবপন্থী অনেকেই নতুন শাসকদের খুশি করতে দুর্গাপূজাকে ব্যবহার করতে শুরু করেন।
কবে শোভাবাজার রাজবাড়ীর সূচনা? (Beginning of Durga Puja)
কলকাতার রাজা নবকৃষ্ণ দেব ১৭৫৭ সালেই শোভাবাজার রাজবাড়িতে দুর্গাপূজার সূচনা করেন। এই পূজায় ইংরেজ সাহেবদের বিশেষভাবে আমন্ত্রণ জানানো হত। ভোজ, মদ্যপান ও সাংস্কৃতিক আসরের মাধ্যমে সাহেবদের আপ্যায়ন করা হত। মেতে উঠতো সমস্ত বাবু কালচারের বাবুরা। এতে রাজা নবকৃষ্ণ দেবের ইংরেজদের সঙ্গে সম্পর্ক সুদৃঢ় হয়। সেই থেকেই কলকাতার বনেদি বাড়ির দুর্গাপূজা খ্যাতি পেতে শুরু করে।

বনেদি পূজার ঐতিহ্য (Beginning of Durga Puja)
শোভাবাজার রাজবাড়ি ছাড়াও লাহা বাড়ি, ঠাকুরবাড়ি, মল্লিক বাড়ি প্রভৃতি বনেদি পরিবারে দুর্গাপূজা জমকালো আয়োজনে শুরু হয়। প্রতিটি বাড়ির পূজার নিজস্ব রীতি ছিল—কোথাও আলাদা ধরনের সজ্জা, কোথাও বিশেষ ভোগ, আবার কোথাও ঐতিহ্যবাহী ঢাক বা নাচের আয়োজন। আজও এসব বনেদি বাড়ির পূজা ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক।

বারোয়ারি পূজার জন্ম (Beginning of Durga Puja)
দুর্গাপূজার গণরূপ নিতে শুরু করে আঠারো শতকের শেষ ভাগে। শোনা যায়, কলকাতায় বারো জন বন্ধু মিলে দুর্গাপূজা শুরু করেছিলেন সেখান থেকেই “বারোয়ারি পূজা” নামের উৎপত্তি। উনিশ শতকের শেষ ও বিশ শতকের গোড়ার দিকে এই বারোয়ারি পূজা ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। পরবর্তীতে একে বলা হয় “সার্বজনীন পূজা”। এতে সাধারণ মানুষও সমানভাবে অংশগ্রহণ করতে পারে। এভাবেই দুর্গাপূজা এলিট শ্রেণির অনুষ্ঠান থেকে গণউৎসবে রূপান্তরিত হয়।

সার্বজনীন পূজার বিকাশ (Beginning of Durga Puja)
বিশ শতকের শুরুতে পাড়ায় পাড়ায় দুর্গাপূজা শুরু হয়। সাধারণ মানুষ চাঁদা তুলে প্রতিমা গড়ায়, প্যান্ডেল সাজায়, আলোকসজ্জা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এতে পূজা হয়ে ওঠে মানুষের আনন্দ, সামাজিক বন্ধন ও সাংস্কৃতিক অভিব্যক্তির মাধ্যম। কলকাতার বিভিন্ন পাড়ার পূজা ক্রমে আন্তর্জাতিক খ্যাতি অর্জন করে।
আজকের দুর্গাপূজা স্বীকৃতি! (Beginning of Durga Puja)
দুর্গাপূজা শুধু ধর্মীয় উৎসব নয়, এটি বাংলার সবচেয়ে বড় সামাজিক ও সাংস্কৃতিক মিলনমেলা হয়ে উঠেছে। বনেদি বাড়ির ঐতিহ্যবাহী পূজা এখনও ঐতিহ্যের স্মারক হয়ে টিকে আছে, তবে সার্বজনীন পূজাই আজকের মূল আকর্ষণ, সারা বছর মানুষ অপেক্ষা করে পুজোর এই ৫ দিনের জন্য। কলকাতা থেকে মফস্বলসর্বত্র দুর্গাপূজা এক অনন্য শিল্প প্রদর্শনী, যেখানে প্যান্ডেল, আলোকসজ্জা, প্রতিমা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান মিলেমিশে যায়।
আরও পড়ুন : Temple Bell: মন্দিরে ঘণ্টা কখন বাজাবেন?
মানুষের উৎসবে পরিণত
২০১৯ সালে ইউনেস্কো দুর্গাপূজাকে “ইন্ট্যাঞ্জিবল কালচারাল হেরিটেজ অব হিউম্যানিটি” হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে যা প্রমাণ করে এই উৎসব আজ বিশ্ব জুড়ে জড়িয়ে গেছে। দুর্গাপূজার পথচলা শুরু হয়েছিল রাজা-জমিদারের ব্যক্তিগত আচার থেকে। ইংরেজ আমলে এটি রাজনৈতিক ও সামাজিক হাতিয়ার হয়েছিল। এরপর বারোয়ারি পূজা হয়ে এটি মানুষের উৎসবে পরিণত হয়।