ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: বেঙ্গালুরুর বিখ্যাত চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে এক অনুষ্ঠানে প্রবল ভিড়ের চাপে পদপিষ্ট হয়ে ১১ জনের মৃত্যুর ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে কর্নাটক জুড়ে(Bengaluru Stampede)। ঘটনায় শোকস্তব্ধ জনতা, ক্ষুব্ধ বিরোধীরা, আর চাপে কর্নাটকের সিদ্দারামাইয়া সরকার। এই মর্মান্তিক বিপর্যয়ের পরই শুরু হয়েছে কড়া প্রশাসনিক পদক্ষেপ এবং একের পর এক রদবদল। ঘটনার জেরে মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়ার (Siddaramaiah) অফিস থেকে জানানো হয়েছে, রাজ্যের গোয়েন্দা শাখার প্রধান হেমন্ত নিম্বলকরকে তাঁর পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর রাজনৈতিক সচিব কে গোবিন্দরাজকেও পদ থেকে সরানো হয়েছে। শুক্রবার এই নির্দেশ কার্যকর হওয়া মাত্রই রাজ্য প্রশাসনে শোরগোল পড়ে যায়।
কেন এই রদবদল? (Bengaluru Stampede)
এই রদবদলের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামের ভয়াবহ পদপিষ্ট হওয়ার ঘটনা(Bengaluru Stampede)। বুধবার সন্ধ্যায় আরসিবি (রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু) দলের এক ফ্যান মিট-সংক্রান্ত অনুষ্ঠানে ব্যাপক জনসমাগম হয় স্টেডিয়ামের বাইরে। প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার সম্পূর্ণ ঘাটতি, নিয়ন্ত্রণহীন জনতা, ও সংস্থাপনগত গাফিলতির জেরে মাত্র কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই ঘটে যায় ভয়াবহ দুর্ঘটনা। প্রাণ হারান ১১ জন সাধারণ মানুষ। আহত হন আরও বহু মানুষ।এই ঘটনার পরে রাজ্য সরকারের তরফে কড়া পদক্ষেপ নেওয়া শুরু হয়। মুখ্যমন্ত্রী নিজে স্পষ্ট বলেন, “এই ঘটনায় কোনও রকম গাফিলতি বরদাস্ত করা হবে না। কাউকেই রেহাই দেওয়া হবে না।” সরকারের তরফ থেকে আরসিবি ও কর্নাটক স্টেট ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন (KSCA)-এর বিরুদ্ধে FIR দায়ের করে তদন্ত শুরু করেছে বেঙ্গালুরু পুলিশ।
হাই কোর্টের হস্তক্ষেপ ও SIT গঠন (Bengaluru Stampede)
চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামের ঘটনায় স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মামলা গ্রহণ করেছে কর্নাটক হাই কোর্ট। রাজ্য সরকারকে ১৫ দিনের মধ্যে বিস্তারিত রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্তের জন্য সিআইডি (CID)-কে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে এবং তৈরি করা হয়েছে একটি বিশেষ তদন্তকারী দল (SIT)।

একাধিক গ্রেফতারি ও হানা (Bengaluru Stampede)
পুলিশ ইতিমধ্যেই চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামের অনুষ্ঠানের আয়োজনকারী সংস্থা তথা ‘ইভেন্ট ফার্ম’-এর তিন আধিকারিক কিরণ, সুমন্ত ও সুনীল ম্যাথিউকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে(Bengaluru Stampede)। শুক্রবার বেঙ্গালুরুর আরসিবির বিপণন বিভাগের প্রধান (Marketing Head)-কে গ্রেফতার করা হয়েছে। এছাড়াও কেএসসিএ-র সচিব ও কোষাধ্যক্ষের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়েছে পুলিশ। যদিও তাঁরা দু’জনেই তখন বাড়িতে ছিলেন না বলে খবর।

আরও পড়ুন: Elon musk On Trump : “আমার সাহায্য না পেলে ট্রাম্প জিততেই পারতেন না!” ট্রাম্পের পাল্টা দাবি মাস্কের
বিরোধীদের তীব্র আক্রমণ (Bengaluru Stampede)
ঘটনার দায় নিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে শুরু হয়েছে তীব্র বাক্যুদ্ধ। বিরোধী দল বিজেপি সরকারের অব্যবস্থাপনা নিয়ে সরব হয়েছে। অভিযোগ, নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং জন নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের চূড়ান্ত ব্যর্থতার ফলেই এই ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটেছে।
জনরোষ ও আস্থা সংকট (Bengaluru Stampede)
ঘটনার পর থেকে জনতার মধ্যে ক্ষোভ প্রবল(Bengaluru Stampede)। প্রশ্ন উঠছে—একটি আন্তর্জাতিক মানের স্টেডিয়ামে, যেখানে প্রায় প্রতিদিনই নানা অনুষ্ঠান হয়, সেখানে জন নিয়ন্ত্রণ এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থায় কীভাবে এত বড় ত্রুটি থেকে যায়?এই ঘটনার প্রেক্ষিতে মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া রাজ্যের একের পর এক শীর্ষ আধিকারিককে বদলি ও বরখাস্ত করে স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন যে, সরকারের শীর্ষ স্তর থেকে নিচের স্তর পর্যন্ত কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। গোয়েন্দা প্রধান হেমন্ত নিম্বলকর ও রাজনৈতিক সচিব কে গোবিন্দরাজের অপসারণ সেই কঠোর অবস্থানেরই প্রমাণ।
কঠোর শাস্তির দাবি (Bengaluru Stampede)
চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামের এই দুর্ঘটনা শুধু একটি প্রশাসনিক ব্যর্থতার উদাহরণ নয়, বরং সাধারণ মানুষের নিরাপত্তার বিষয়ে সরকারের দায়বদ্ধতা কতটা বাস্তব, তা নিয়েও বড় প্রশ্ন তুলে দিয়েছে(Bengaluru Stampede)। মুখ্যমন্ত্রীর কড়া পদক্ষেপ প্রশংসিত হলেও, সাধারণ মানুষের মধ্যে আস্থা ফেরাতে এখন সরকারের সামনে কঠিন লড়াই। তদন্তে প্রকৃত দোষীদের চিহ্নিত করে কঠোর শাস্তি দেওয়া না হলে, এই ক্ষোভ ভবিষ্যতে আরও বড় রাজনৈতিক বিপর্যয়ের জন্ম দিতে পারে।