ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল : ভারতের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে টি-৯০এস ভীষ্ম (Bhishma T-90S Tank) ট্যাঙ্ক। যুদ্ধক্ষেত্রে শত্রুকে ধূলিসাৎ করতে যে সমস্ত মারণাস্ত্র ভারতের হাতে রয়েছে, তাদের মধ্যে অন্যতম শক্তিশালী হল এই প্রধান যুদ্ধট্যাঙ্কটি। রাশিয়ান টি-৯০ প্ল্যাটফর্মের উপর ভিত্তি করে তৈরি হলেও, ভারতীয় প্রতিরক্ষা গবেষণা সংস্থা (DRDO)-র সহযোগিতায় ট্যাঙ্কটিকে আরও উন্নত করা হয়েছে ভারতীয় পরিবেশ ও যুদ্ধক্ষেত্রের প্রেক্ষাপটে।
উৎপত্তি ও নামকরণ (Bhishma T-90S Tank)
২০০১ সালে ভারতের সেনাবাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত হয় রাশিয়ার তৈরি টি-৯০ ট্যাঙ্ক (Bhishma T-90S Tank)। পরে এই ট্যাঙ্ককে দেশীয় প্রযুক্তি ও যুদ্ধকৌশলের সঙ্গে খাপ খাইয়ে তৈরি করা হয় ‘টি-৯০এস ভীষ্ম’, যার নাম রাখা হয়েছে মহাভারতের অন্যতম প্রজ্ঞাবান ও যোদ্ধা চরিত্র ‘ভীষ্ম’-এর নামে। বর্তমানে ভারতীয় সেনার প্রায় ১,২০০-র বেশি টি-৯০এস ভীষ্ম ট্যাঙ্ক মোতায়েন রয়েছে, যা প্রধানত পশ্চিম সীমান্ত অর্থাৎ পাকিস্তান সীমান্তে ব্যবহার করা হয়।
টি-৯০এস ভীষ্মের প্রযুক্তিগত বৈশিষ্ট্য (Bhishma T-90S Tank)
- গোলন্দাজ শক্তি:
ভীষ্ম ট্যাঙ্কের মূল অস্ত্র একটি ১২৫ মিমি স্মুথবো’র গান, যা হাই-এক্সপ্লোসিভ অ্যান্টি-ট্যাঙ্ক (HEAT), ফিন-স্ট্যাবিলাইজড অ্যামুনিশন (FSAPDS) এবং গাইডেড মিসাইল ছুড়তে সক্ষম। এটি একইসঙ্গে ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণেও পারদর্শী(Bhishma T-90S Tank)। - দূরবর্তী আক্রমণ ক্ষমতা:
প্রায় ৩-৫ কিলোমিটার দূরত্বে থাকা লক্ষ্যবস্তুকে নির্ভুলভাবে আঘাত করতে সক্ষম। লেজার গাইডেড ইনফ্রারেড সিস্টেম ও আধুনিক ফায়ার কন্ট্রোল ব্যবস্থায় এটি রাত্রিকালীন যুদ্ধেও কার্যকর। - গতিশক্তি ও কৌশলগত সাড়া:
৪৬ টনের এই ট্যাঙ্কটি একটি ১,০০০ হর্সপাওয়ারের ডিজেল ইঞ্জিন দ্বারা চালিত। রাস্তার উপর এটি সর্বোচ্চ ৬০ কিমি/ঘণ্টা এবং দুর্গম ভূখণ্ডে ৪৫ কিমি/ঘণ্টা বেগে চলতে পারে। - প্রতিরক্ষা ও সুরক্ষা ব্যবস্থা:
এটি ‘কন্টাক্ট-৫’ র্যাক্টিভ আর্মার এবং ‘শোরা’ অ্যাকটিভ প্রোটেকশন সিস্টেম দিয়ে সজ্জিত, যা এটিকে শত্রু ট্যাঙ্কের কামানের পাশাপাশি ড্রোন ও অ্যান্টি-ট্যাঙ্ক মিসাইল থেকেও রক্ষা করে। এছাড়া ট্যাঙ্কটি NBC (Nuclear-Biological-Chemical) সুরক্ষা ব্যবস্থা দিয়েও সজ্জিত, ফলে পরমাণু বা রাসায়নিক আক্রমণেও এটি সচল থাকতে পারে।

আরও পড়ুন: Indian Top 5 Missiles : ভারতের যে পাঁচ অস্ত্রের ভয়ে ‘‘ত্রহি মাম’’ বলছে পাকিস্তান!
যুদ্ধক্ষেত্রে ভীষ্মের বাস্তব প্রয়োগ (Bhishma T-90S Tank)
- কার্গিল যুদ্ধের পরে ভারত যখন ট্যাঙ্ক সংগ্রহের বিষয়ে নতুনভাবে ভাবতে শুরু করে, তখন টি-৯০এস ভীষ্মকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে ভারতের প্রধান যুদ্ধট্যাঙ্ক বাহিনী(Bhishma T-90S Tank)।
- ২০২০ সালে চিনা আগ্রাসনের সময় পূর্ব লাদাখে ১৪,০০০ ফুট উচ্চতায় এই ট্যাঙ্ক মোতায়েন করে ভারত, যা এক চ্যালেঞ্জিং ভূপ্রকৃতিতে এর সক্ষমতা প্রমাণ করে।
- একাধিক আন্তর্জাতিক সামরিক মহড়া ও প্রশিক্ষণে এই ট্যাঙ্কের সফল অংশগ্রহণ তার কার্যক্ষমতার প্রমাণ দিয়েছে।

আরও পড়ুন: India Pak Tension : পাক সেনাপ্রধানের পর জয়শঙ্করকে ফোন রুবিয়োর! সংযমের বার্তা মার্কিন বিদেশসচিবের
ঘরোয়া উৎপাদনে জোর (Bhishma T-90S Tank)
প্রথম পর্যায়ে রাশিয়া থেকে আমদানি করা হলেও বর্তমানে এই ট্যাঙ্কগুলি চেন্নাইয়ের হেভি ভেহিকল ফ্যাক্টরি (HVF), অব্দিতে নির্মাণ করা হচ্ছে (Bhishma T-90S Tank)। এর ফলে ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ উদ্যোগের অংশ হিসেবে স্বনির্ভরতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ভারতীয় সেনার আগামী লক্ষ্য ২,০০০-এর বেশি টি-৯০ ভীষ্ম বাহিনী গঠন করা।
ভারতীয় প্রতিরক্ষায় এক গেম-চেঞ্জার (Bhishma T-90S Tank)
সামরিক বিশ্লেষকদের মতে, পাকিস্তানের T-80 এবং চিনের Type-96/99 ট্যাঙ্কগুলোর তুলনায় টি-৯০এস ভীষ্ম প্রযুক্তি, অস্ত্র ও সুরক্ষা ব্যবস্থার দিক থেকে অনেক এগিয়ে (Bhishma T-90S Tank)। এর বহুমুখিতা ও উচ্চ গতিশক্তি এটিকে ভারতের সীমান্ত প্রতিরক্ষায় অন্যতম অস্ত্র করে তুলেছে।ভারতের সামরিক শক্তিকে আধুনিকীকরণের পথে টি-৯০এস ভীষ্ম ট্যাঙ্ক এক নিঃসন্দেহে মাইলফলক। শুধু পশ্চিম সীমান্তেই নয়, উচ্চ হিমালয়ের যুদ্ধক্ষেত্রেও এই ট্যাঙ্কের কৌশলগত গুরুত্ব অপরিসীম। যুদ্ধের সময় দ্রুত মোতায়েন, আক্রমণ এবং আত্মরক্ষার ক্ষমতায় টি-৯০এস ভীষ্ম ভারতীয় বাহিনীর ‘মরু-অগ্নিদেবতা’ হিসেবে পরিচিতি পাচ্ছে।