ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: ভারতে ভোপাল গ্যাস দুর্ঘটনার (Bhopal Gas Tragedy) পর ৪০ বছর ধরে পড়ে থাকা বিষাক্ত বর্জ্য সরানোর কাজ শুরু হয়েছে। এই কারখানা থেকে ১৯৮৪ সালের ডিসেম্বরে বিষাক্ত গ্যাস লিক হয়ে বিশ্বের অন্যতম ভয়াবহ শিল্প দুর্ঘটনা ঘটে।
হাজার হাজার মানুষ ভোপালের ইউনিয়ন কার্বাইড কারখানার গ্যাস লিকের (Bhopal Gas Tragedy) কারণে মারা যান। সেই ঘটনার পর থেকে কারখানার বিষাক্ত বর্জ্য সেখানেই পড়ে ছিল। এটি আশপাশের এলাকার ভূগর্ভস্থ জলে দূষণ ছড়াচ্ছিল।
গত মাসে মধ্যপ্রদেশ হাইকোর্ট কর্তৃপক্ষকে চার সপ্তাহের মধ্যে এই বর্জ্য অপসারণের নির্দেশ দেয়। এরপর বুধবার ৩৩৭ টন বিষাক্ত বর্জ্য ভোপালের কারখানা থেকে প্রায় ২৩০ কিলোমিটার দূরের একটি ইনসিনারেটর প্ল্যান্টে পাঠানো হয়।
কী ধরণের বর্জ্য সরানো হয়েছে? (Bhopal Gas Tragedy)
এই বর্জ্যের (Bhopal Gas Tragedy) মধ্যে কীটনাশকের অবশিষ্টাংশ এবং “ফরএভার কেমিক্যালস” রয়েছে। এই রাসায়নিকগুলি বিষাক্ত বৈশিষ্ট্য চিরকাল ধরে রাখতে পারে।
পরিবেশবিদদের মতে, কারখানায় পড়ে থাকা এই রাসায়নিক দীর্ঘ চার দশক ধরে মাটিতে এবং জলে মিশে আশপাশের মানুষের জন্য স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি করেছে।
২০১৮ সালের একটি গবেষণায় জানা গেছে, কারখানার আশপাশের ৪২টি আবাসিক এলাকার ভূগর্ভস্থ জলে উচ্চ মাত্রার ধাতু এবং রাসায়নিক দূষণ হয়েছে।
বর্জ্য অপসারণের প্রক্রিয়া (Bhopal Gas Tragedy)
রবিবার থেকে বর্জ্য (Bhopal Gas Tragedy) প্যাকেটবন্দি করার কাজ শুরু হয়। পরে বুধবার ১২টি সিল করা ট্রাকে করে এই বর্জ্য সরানো হয়। বর্জ্য পরিবহনের সময় পুলিশ, অ্যাম্বুলেন্স এবং ফায়ার সার্ভিসসহ একটি নিরাপত্তা বাহিনী উপস্থিত ছিল।
পিটিআইকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ভোপাল গ্যাস দুর্ঘটনা ত্রাণ বিভাগ-এর প্রধান স্বতন্ত্র কুমার সিং বলেন, প্রথমে কিছু বর্জ্য পিতম্পুরের ডিসপোজাল প্ল্যান্টে পোড়ানো হবে এবং এর অবশিষ্টাংশ পরীক্ষা করা হবে।
আরও পড়ুন: Child Marriage: আজও বাল্য বিবাহ প্রথা চলছে গোটা গ্রামে, শৈশব হারাচ্ছে মেয়েরা!
তবে পরিবেশবিদ ও স্থানীয় বাসিন্দারা এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। ২০১৫ সালে একই প্ল্যান্টে পরীক্ষামূলকভাবে কিছু বর্জ্য পোড়ানো হলে তা মাটির পাশাপাশি পানীয় জলে দূষণ সৃষ্টি করেছিল বলে অভিযোগ ওঠে।
বহু বছর ধরে প্রতিবন্ধকতা
বহুবার বর্জ্য অপসারণের চেষ্টা হলেও আন্দোলনের মুখে পরিকল্পনা বাতিল করা হয়। ২০০৫ সালে গুজরাটে এটি পুড়িয়ে ফেলার পরিকল্পনা করা হলেও প্রতিবাদের কারণে তা স্থগিত হয়।
বিশ্বের অন্যতম বড় শিল্প দুর্ঘটনা
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, দুর্ঘটনার প্রথম কয়েকদিনে প্রায় ৩,৫০০ জন মারা যান। এরপর বছরগুলিতে মৃত্যুর সংখ্যা ১৫,০০০ ছাড়ায়। তবে আন্দোলনকারীদের মতে, এই সংখ্যা আরও বেশি।
২০১০ সালে একটি আদালত কারখানার সাত প্রাক্তন ম্যানেজারকে সামান্য জরিমানা ও স্বল্প মেয়াদের জেলের সাজা দিলেও ভুক্তভোগীরা এখনও সুবিচার পাননি।
১৯৮৯ সালে ইউনিয়ন কার্বাইড ভারত সরকারকে ৪৭০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিয়েছিল। তবে আন্দোলনকারীরা বলছেন, এই ক্ষতিপূরণ এত বড় ক্ষতির জন্য যথেষ্ট নয়।