Last Updated on [modified_date_only] by Aditi Singha
ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: প্রতিটি কাজের জন্য নির্দিষ্ট সময় থাকলেও কিছু বিশেষ সময় মানুষের শরীর (Brahma Muhurta), মন এবং আত্মার ওপর গভীর প্রভাব ফেলে। প্রাচীন ভারতীয় শাস্ত্র, যোগ ও আয়ুর্বেদের শিক্ষায় এমন এক সময়ের কথা বলা হয়েছে, যা আধ্যাত্মিক সাধনা, পড়াশোনা ও আত্মোন্নয়নের জন্য সবচেয়ে উৎকৃষ্ট বলে বিবেচিত হয়। এই সময়টি হলো ব্রহ্ম মুহূর্ত।
“ব্রহ্ম” শব্দের অর্থ হলো সৃষ্টিশক্তি, জ্ঞান ও চেতনা, আর “মুহূর্ত” মানে হলো ক্ষণ বা সময়। তাই ব্রহ্ম মুহূর্তকে বলা যায়, জ্ঞান ও চেতনার জাগরণের সময়। আজকের দিনে, যখন মানুষ অস্থিরতা, মানসিক চাপ ও ব্যস্ততায় জর্জরিত, তখন ব্রহ্ম মুহূর্তে অধ্যয়ন বা ধ্যান মানুষের জীবনে প্রশান্তি, সাফল্য ও ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে।

ব্রহ্ম মুহূর্ত কী? (Brahma Muhurta)
হিন্দু শাস্ত্র অনুসারে, ভোর রাতের শেষ প্রহর অর্থাৎ সূর্যোদয়ের আগে প্রায় ১ ঘণ্টা ৩৬ মিনিট সময়কে ব্রহ্ম মুহূর্ত বলা হয়। সময় হিসেবে এটি সাধারণত রাত ৩টা ৩০ মিনিট থেকে ভোর ৫টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত হয়ে থাকে।
এ সময় প্রকৃতির পরিবেশ নিস্তব্ধ থাকে, বাতাস বিশুদ্ধ হয় এবং মানুষের মন শান্ত থাকে। এই বিশেষ মুহূর্তে জপ, ধ্যান, যোগব্যায়াম বা অধ্যয়ন করলে তা অন্য সময়ের তুলনায় বেশি কার্যকর হয়।
মানসিক ও আধ্যাত্মিক উপকারিতা (Brahma Muhurta)
১. মনোযোগ ও একাগ্রতা বৃদ্ধি
ব্রহ্ম মুহূর্তে চারপাশের পৃথিবী শান্ত থাকে। কোনও শব্দ বা কোলাহল থাকে না। ফলে মন সহজে একাগ্র হয়। পড়াশোনা বা সাধনায় মনোযোগ ধরে রাখা যায় দীর্ঘ সময়।
২. মানসিক প্রশান্তি
এই সময়ে ধ্যান বা যোগব্যায়াম করলে মানসিক চাপ অনেকটা কমে যায়। আধুনিক মনোবিজ্ঞানীরা বলেন, ভোরবেলা শরীরের হরমোন ব্যালান্স এমনভাবে কাজ করে যে মন শান্ত ও স্থির থাকে।
৩. ইতিবাচক শক্তি
আধ্যাত্মিক গুরুদের মতে, ভোরের এই সময় প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের সখ্য বাড়ে। ফলে মন ইতিবাচক চিন্তায় ভরে ওঠে। যা পড়া বা শেখা হয়, তা গভীরভাবে মনের মধ্যে গেঁথে যায়।

মস্তিষ্কের কার্যকারিতা (Brahma Muhurta)
১. স্মৃতিশক্তি সক্রিয় থাকে
ঘুম ভাঙার পর মস্তিষ্ক সতেজ থাকে। বিশেষ করে হিপোক্যাম্পাস অংশ সক্রিয় হয়, যা নতুন তথ্য সংরক্ষণ করে। তাই ভোরে পড়াশোনা করলে শেখা বিষয় দীর্ঘদিন মনে থাকে।
২. সৃজনশীল চিন্তার বিকাশ
গবেষণায় দেখা গেছে, ভোরবেলার নীরব পরিবেশে মস্তিষ্কে আলফা ব্রেইন ওয়েভ বেশি সক্রিয় থাকে। এটি কল্পনাশক্তি বাড়ায় এবং সৃজনশীল কাজের জন্য উপযোগী পরিবেশ তৈরি করে। লেখক, গবেষক বা শিল্পীদের জন্য এই সময় সবচেয়ে উপকারী।
৩. যুক্তি বিশ্লেষণ ও সমস্যা সমাধান ক্ষমতা বৃদ্ধি
জটিল গণিত, বিজ্ঞান বা বিশ্লেষণধর্মী বিষয় বোঝার জন্য ভোরের সময় আদর্শ। কারণ বিশ্রামপ্রাপ্ত মস্তিষ্ক তখন দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
শারীরিক উপকারিতা (Brahma Muhurta)
১. বিশুদ্ধ অক্সিজেন গ্রহণ
আয়ুর্বেদ মতে, ভোরের বাতাসে অক্সিজেনের পরিমাণ তুলনামূলক বেশি থাকে। সেই বিশুদ্ধ অক্সিজেন শরীরে প্রবেশ করলে রক্ত পরিষ্কার হয় এবং শরীর শক্তি পায়।
২. শরীর-মন ভারসাম্য
ভোরে যোগব্যায়াম বা প্রণায়াম করলে শরীর সতেজ থাকে এবং মন প্রশান্ত হয়। এই ভারসাম্য পড়াশোনা বা অন্যান্য কাজে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
৩. সারাদিন উদ্যম বজায় রাখা
ব্রহ্ম মুহূর্তে জেগে পড়াশোনা বা ধ্যান করলে সারাদিন উদ্যম বজায় থাকে। মন খারাপ বা ক্লান্তি সহজে গ্রাস করে না।
আরও পড়ুন: Language: বলা ও লেখার ভাষা গুলিয়ে ফেলছেন না তো ?
পড়াশোনার ক্ষেত্রে ব্রহ্ম মুহূর্তের বিশেষ ভূমিকা (Brahma Muhurta)
- বাইরের বিভ্রান্তি নেই, ফলে পড়াশোনায় মনোযোগ বাড়ে।
- শেখা বিষয় দীর্ঘ সময় ধরে মনে থাকে।
- সৃজনশীল চিন্তাভাবনা জন্ম নেয়।
- পরীক্ষার ভয় বা দুশ্চিন্তা দূর হয়।
- আত্মবিশ্বাস ও ইতিবাচক মানসিকতা তৈরি হয়।
- শিক্ষাবিদরা মনে করেন, বিশেষত গণিত, বিজ্ঞান বা বিশ্লেষণধর্মী বিষয় ভোরে পড়লে সবচেয়ে বেশি উপকার হয়।
- মনোবিজ্ঞানীরা বলেন, এ সময়ে পড়াশোনা করলে মানসিক চাপ কমে এবং স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পায়।