ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: ব্রাজিলের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট জাইর বোলসোনারোকে গৃহবন্দি করার নির্দেশ দিল সে দেশের সুপ্রিম কোর্ট(Jair Bolsonaro)। বিচারপতি আলেকজান্দ্রে ডে মরিয়াস সোমবার জানিয়েছেন, বোলসোনারো আদালতের নির্দেশ অমান্য করেছেন। তাই তাঁকে অবিলম্বে গৃহবন্দি করা হচ্ছে। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী, গৃহবন্দি অবস্থায় বোলসোনারো মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে পারবেন না এবং তাঁর সঙ্গে দেখা করার অনুমতি থাকবে কেবল আইনজীবী ও আদালত-অনুমোদিত ব্যক্তিদের।
নির্বাচন থেকে গৃহবন্দি,কী ঘটেছিল? (Jair Bolsonaro)
২০২২ সালের ব্রাজ়িলের সাধারণ নির্বাচনে বামপন্থী নেতা লুইস ইনাসিয়ো লুলা দ্য সিলভার কাছে পরাজিত হন বোলসোনারো(Jair Bolsonaro)। ভোটের ফল মেনে নিতে অস্বীকার করে তিনি নির্বাচনী প্রক্রিয়ার বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।
এর পর তাঁর সমর্থকেরা ব্রাজিলের সংসদ ভবনে হামলার চেষ্টা করেন, যা ২০২১ সালে মার্কিন ক্যাপিটল হিল হামলার পুনরাবৃত্তি বলেই মনে করা হয়েছিল। এই ঘটনার পর বোলসোনারোর বিরুদ্ধে ‘ক্ষমতার অপব্যবহার’-এর অভিযোগ ওঠে।
২০২৩ সালের জুলাইয়ে ব্রাজ়িলের সুপ্রিম ইলেকটোরাল কোর্ট রায় দেয়, আগামী আট বছর তিনি কোনো নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন না। তবে এখানেই শেষ হয়নি আইনি প্রক্রিয়া। অভিযোগ ছিল, তিনি আদালতের নির্দেশ অমান্য করে প্রকাশ্যে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছিলেন।
ট্রাম্পের হস্তক্ষেপ ও নতুন শুল্ক হুমকি (Jair Bolsonaro)
বোলসোনারোর সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের (Donald J. Trump) সম্পর্ক বরাবরই ঘনিষ্ঠ। কয়েক দিন আগেও বোলসোনারোর বিরুদ্ধে চলা বিচারপ্রক্রিয়া নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন ট্রাম্প(Jair Bolsonaro)।
গত ৯ জুলাই তিনি ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলাকে চিঠি পাঠিয়ে ব্রাজিল থেকে আমেরিকায় রফতানি হওয়া পণ্যে ৫০ শতাংশ শুল্ক চাপানোর ঘোষণা করেন। ওই চিঠিতে ট্রাম্পের অভিযোগ—“ব্রাজিলে স্বাধীন নির্বাচনের উপর বার বার আঘাত করা হচ্ছে। বাক্স্বাধীনতার অধিকার খর্ব করা হচ্ছে।”
তাঁর কথায়, বোলসোনারোর সঙ্গে “অন্যায্য আচরণ” করা হচ্ছে। তিনি সরাসরি দাবি করেন,“এই বিচারপ্রক্রিয়া চলতে পারে না। এটা এখনই বন্ধ হওয়া উচিত।”
অর্থাৎ, শুল্ক আরোপের হুমকির মূল কারণ ছিল বোলসোনারোর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ।

আরও পড়ুন: India US Tarif War : ট্রাম্পের শুল্ক হুঁশিয়ারি উপেক্ষা করেই রাশিয়া থেকে তেল কেনায় অনড় ভারত!
ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ (Jair Bolsonaro)
বোলসোনারোকে গৃহবন্দি করার সিদ্ধান্ত প্রকাশ্যে আসতেই মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর ব্রাজিলের বিচারপতি মরিয়াসকে নিশানা করে বিবৃতি দেয়। অভিযোগ, তিনি “প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিরোধীদের কণ্ঠস্বর দমন করছেন(Jair Bolsonaro)।”
যদিও হোয়াইট হাউস এখনো পর্যন্ত নতুন শুল্ক বৃদ্ধির বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করেনি, কিন্তু কূটনৈতিক মহলে জোর জল্পনা— ট্রাম্প প্রশাসন ব্রাজিলের উপর বাণিজ্যিক চাপ আরও বাড়াতে পারে।

আরও পড়ুন: Bangladesh Revolution : বাংলাদেশের ক্ষমতার পালাবদলের এক বছর! কোন পথে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ?
বোলসোনারো-ট্রাম্প সম্পর্ক (Jair Bolsonaro)
ট্রাম্পের সঙ্গে বোলসোনারোর সম্পর্ক অতি ঘনিষ্ঠ এবং রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী। নির্বাচনী প্রচার থেকে শুরু করে শাসনকালে নানা ক্ষেত্রে তাঁরা একে অপরকে সমর্থন করেছেন। ব্রাজ়িলে সংসদ ভবন আক্রমণের ঘটনায়ও ট্রাম্পের ক্যাপিটল হিল হামলার ছায়া স্পষ্ট ছিল(Jair Bolsonaro)।
তবে এখন পরিস্থিতি পাল্টে গেছে। লুলা প্রশাসন ক্ষমতায় আসার পর ব্রাজ়িল আবার বামপন্থী জোট ও বহুপাক্ষিক কূটনীতির দিকে ঝুঁকছে, যা ওয়াশিংটনের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ।
সম্ভাব্য প্রভাব (Jair Bolsonaro)
১. অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে উত্তেজনা বাড়বে: আমেরিকা যদি নতুন শুল্ক চাপায়, তবে ব্রাজ়িলের স্টিল, কৃষি এবং ম্যানুফ্যাকচারিং রপ্তানিতে বড় ধাক্কা লাগবে।
২. কূটনৈতিক সম্পর্কের অবনতি: বোলসোনারো ইস্যু নিয়ে ওয়াশিংটন-ব্রাসিলিয়ার সম্পর্কের দূরত্ব আরও বাড়তে পারে।
৩. আভ্যন্তরীণ অস্থিরতা বৃদ্ধি: বোলসোনারোর সমর্থকেরা ইতিমধ্যেই রাস্তায় নামার হুঁশিয়ারি দিয়েছে। ব্রাজ়িলে নতুন করে রাজনৈতিক সহিংসতা দেখা দিতে পারে।
ব্রাজিলের সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্ত স্পষ্ট করেছে— আইন অমান্য করলে প্রাক্তন প্রেসিডেন্টও ছাড় পাবেন না(Jair Bolsonaro)। কিন্তু এই পদক্ষেপে আন্তর্জাতিক রাজনীতির অঙ্ক আরও জটিল হয়ে গেল। ওয়াশিংটন কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানায়, সেটাই এখন নজরের কেন্দ্রে। শুল্ক চাপানো হলে শুধু ব্রাজিল নয়, লাতিন আমেরিকার অর্থনীতিতেও বড় প্রভাব পড়তে পারে।