Last Updated on [modified_date_only] by Debu Das
ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: ৫ বছর পর অবশেষে সুবিচার পেলেন করোনাকালে বিনা চিকিৎসায় প্রাণ হারানো শুভ্রজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের বাবা ও মা (Calcutta High Court)। চিকিৎসায় গাফিলতির জন্য বেলঘড়িয়ার বেসরকারি নার্সিংহোমকে পাঁচ লক্ষ টাকা আর্থিক ক্ষতি পূরণের কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গেল বেঞ্চের নির্দেশই বহাল রাখল বিচারপতি তপব্রত চক্রবর্তীর ডিভিশন বেঞ্চ। আদালতের এই রায়ে খুশি শুভ্রজিতের বাবা-মা। তবে এই আর্থিক ক্ষতিপূরণের টাকা তাঁরা নেবেন না, দুস্থ-অসহায় শিশুদের সাহায্যার্থে এই টাকা দান করবেন বলেই জানিয়ে দিলেন সন্তানহারা বাবা-মা। ‘আমরা সন্তানকে হারিয়েছি। কিন্তু সন্তানকে বিক্রি করতে আসিনি। সুবিচার চাইতে এসেছিলাম। আদালতের রায়ে আমরা খুশি’- জানালেন নিহতের মা। ওই বেসরকারি হাসপাতালের চরম শাস্তির জন্য আইনি লড়াই চালিয়ে যাবেন বলেও জানিয়ে দিলেন শুভ্রজিতের বাবা-মা।
কী ঘটেছিল? (Calcutta High Court)
২০২০ সালের ১০ জুলাই। গোটা রাজ্য সাক্ষী থেকেছিল এক অমানবিক চিত্রের(Calcutta High Court)। বিশ্ব, দেশের সঙ্গে এ রাজ্যেও কাভিড তখন মহামারীর রূপ নিয়েছে। করোনা আক্রান্ত সন্তানকে নিয়ে অসহায় বাবা-মা সরকারি হাসপাতাল থেকে শুরু করে বেসরকারি নার্সিংহোমের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও ভর্তি করাতে পারেননি। চরম শ্বাসকষ্টেও অক্সিজেন পর্যন্ত পাননি। কোনও হাসপাতালই অসহায় বাবা-মায়ের করুন আর্তনাদ কানে তোলেনি। চোখের সামনে সন্তানকে প্রায় বিনা চিকিৎসায় হারাতে দেখেছেন উত্তর ২৪ পরগনার ইছাপুরের বাসিন্দা শ্রাবণী চট্টোপাধ্যায়।
হাসপাতালে কী ঘটেছিল?(Calcutta High Court)
২০২০ সালের ৯ জুলাই রাতে প্রবল শ্বাসকষ্ট শুরু হলে শুভ্রজিৎকে কামারহাটি ইএসআই হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়(Calcutta High Court)। সেখানে আইসিসিইউ ফাঁকা না থাকায় তাঁকে বেলঘড়িয়া মিডল্যান্ড নার্সিংহোমে রেফার করে দেন কামারহাটি ইএসআই হাসপাতালের ডাক্তাররা। এদিকে মিডল্যান্ড নার্সিংহোমে নিয়ে যাওয়া হলে যুবকের শরীরে করোনা ধরা পড়ে, তখন নার্সিংহোম জানিয়ে দেয়, এটা কোভিড হাসপাতাল নয়, আপনারা অন্য কোথাও নিয়ে যান।যদিও শুভ্রজিতের পরিবারের দাবি ছিল, তাঁদের সন্তান করোনা পজেটিভ না হওয়া সত্ত্বেও বেলঘরিয়ার ওই বেসরকারি নার্সিংহোম তাকে করোনা পজেটিভ বলে অন্যত্র রেফার করে দেয়। তারপর তাকে নিয়ে ফের কামারহাটি ইএসআই হাসপাতালে ফিরে আসেন। সেখানে চিকিৎসকরা পাশ্ববর্তী কোভিড হাসপাতাল সাগরদত্তে তাঁকে ভর্তি করানোর নির্দেশ দেন। এদিকে সাগরদত্ত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে বলা হয়, বেড নেই। একটু অক্সিজেনও ওই অসুস্থ যুবকের জন্য চাইলেও দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ বাবা-মায়ের। স্বাস্থ্যভবনের হেল্পলাইনে তাঁরা ফোন করেন। সেখান থেকে জানানো হয়, কেউ কোভিড আক্রান্ত হয়েছেন বলে হাসপাতাল থেকে জানানো হয়নি। সেই রিপোর্ট না পেলে তারা কিছু করতে পারবেন না(Calcutta High Court)।

পুলিশের হেল্পলাইনে ফোন (Calcutta High Court)
শেষপর্যন্ত কলকাতা পুলিশের হেল্পলাইনে ফোন করে যুবকের পরিবার(Calcutta High Court)। সেখান থেকে বেলঘড়িয়া থানার সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেওয়া হয় তাঁদের। বেলঘড়িয়া থানা থেকে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় ওই যুবককে। কিন্তু অভিযোগ, সেখানেও ভর্তি না নিয়ে ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছিল। তারপরেই মায়ের ধৈর্যের বাঁধ ভাঙে। ওয়ার্ডে ঢুকে ছেলেকে বাঁচানোর কাতর আর্তি নিয়ে চিৎকার শুরু করেন শুভ্রজিতের মা। ছেলেকে ভর্তি না নিলে আত্মহত্যার হুমকি দেন। তারপরেই স্ট্রেচারে করে ওই যুবককে ওয়ার্ডের ভিতরে নিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়। কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছিল। প্রায় বিনা চিকিৎসায় প্রাণ হারান শুভ্রজিৎ(Calcutta High Court)।
শুভ্রজিতের বাবা-মার অভিযোগ(Calcutta High Court)
এরপরই বেলঘড়িয়ার ওই বেসরকারি নার্সিংহোমের বিরুদ্ধে ওয়েস্ট বেঙ্গল হেলথ রেগুলেটরি কমিশনে অভিযোগ জানান শুভ্রজিতের বাবা-মা(Calcutta High Court)। অভিযোগ খতিয়ে দেখে বেলঘরিয়ার ওই নার্সিংহোমকে পাঁচ লক্ষ টাকা আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দেয় কমিশন। কিন্তু সেই ক্ষতিপূরণ দিতে রাজি হয়নি বেলঘড়িয়ার ওই নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ। মামলা গড়ায় কলকাতা হাইকোর্টে। কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্য্য পশ্চিমবঙ্গ হেলথ রেগুলেটরি কমিশনের পাঁচ লক্ষ টাকার ক্ষতিপূরণের নির্দেশই বহাল রাখেন। হাইকোর্টের সিঙ্গেল বেঞ্চের সেই নির্দেশও মানতে রাজি হয়নি নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ। তারা সিঙ্গেল বেঞ্চের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে ডিভিশন বেঞ্চের দ্বারস্থ হয়। বুধবার বিচারপতি তপব্রত চক্রবর্তী এবং বিচারপতি ঋতব্রত কুমার মিত্রের ডিভিশন বেঞ্চে সেই মামলার শুনানি হয়। এবং কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ সিঙ্গেল বেঞ্চের দেওয়া সমস্ত নির্দেশ বহাল রেখে নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষের আবেদন খারিজ করে দিলেন। দীর্ঘ প্রায় পাঁচ বছর ধরে মামলা চলার পর অবশেষে বিচার পেল শুভ্রজিতের পরিবার(Calcutta High Court)।

আরও পড়ুন:US Protest : অভিবাসন নীতির বিরুদ্ধে বিক্ষোভে অগ্নিগর্ভ আমেরিকা, টেক্সাসেও নামানো হল সেনা!
নার্সিংহোমের কড়া শাস্তির দাবি(Calcutta High Court)
বেলঘড়িয়ার ওই নার্সিংহোমের কড়া শাস্তির দাবিতে শুভ্রজিতের বাবা মায়ের দায়ের করা মামলা নিম্ন আদালতে এখনও চলছে(Calcutta High Court)। যে সমস্ত সরকারি হাসপাতাল শুভ্রজিৎকে ফিরিয়ে দিয়েছিল, তাদের বিরুদ্ধেও যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদন জানিয়েছেন পরিবার। তবে বুধবার কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের এই রায়ে কিছুটা হলেও খুশি শুভ্রজিতের বাবা ও মা। *আদালতের রায়ের পর শুভ্রজিতের মা শ্রাবণী চট্টোপাধ্যায় রীতিমতো কেঁদে ফেলেন। সন্তান হারানোর যন্ত্রণাকে সঙ্গী করে তিনি জানান, আদালতের রায়ে তাঁরা খুশি। তবে ওই বেসরকারি নার্সিংহোম ও সরকারি হাসপাতাল গুলোর শাস্তির দাবিতে তিনি আইনি লড়াই চালিয়ে যাবেন। তবে পাঁচ লক্ষ টাকা আর্থিক ক্ষতিপূরণ তিনি নেবেন না। কারণ তিনি ছেলেকে বিক্রি করতে আসেননি। সুবিচার চাইতে এসেছিলেন। বুধবার সেটা তিনি পেয়েছেন। আর্থিক ক্ষতিপূরণের টাকা তিনি গরীব-অসহায় শিশুদের সাহায্যে দান করতে চান বলেও জানান শ্রাবণী দেবী(Calcutta High Court)।