রিমিক মাঝি, কলকাতা: এসএসসি ২৬ হাজার চাকরি বাতিলে আদালত অবমাননা মামলায় কলকাতা হাইকোর্টের (Calcutta High Court) এক্তিয়ার নিয়ে প্রশ্ন তুলল রাজ্য ও পর্ষদ। সুপ্রিম কোর্টে মামলা বিচারাধীন, তাই আদালত অবমাননা মামলা শোনার এক্তিয়ার সুপ্রিম কোর্টেরই আছে, হাইকোর্টের নেই- সওয়াল রাজ্য ও পর্ষদের। যদিও আবেদনকারী চাকরি প্রার্থীদের আইনজীবীর দাবি, এই ধরণের কোনও নির্দেশিকা সুপ্রিম কোর্টের নেই । স্বপক্ষে যুক্তি দিতে চায় তারা। তাই সময় দিল আদালত। আগামী ২৮ এপ্রিল পরবর্তী শুনানি। সেদিন অবমাননার মামলায় হাইকোর্ট কীভাবে হস্তক্ষেপ করতে পারে, মূল মামলাকারীদের তা জানাতে নির্দেশ হাইকোর্টের। আইনি জটিলতায় ঝুলে রইল মূল মামলা। তাই এখনই প্রকাশ করতে হচ্ছে না ওএমআর শিট। আপাতত স্বস্তি কমিশনের। অযোগ্যদের বেতন ফেরত নিয়েও কাটলো না জটিলতা ।
কলকাতা হাইকোর্টে সাময়িক স্বস্তি স্কুল সার্ভিস কমিশন এবং মধ্যশিক্ষা পর্ষদের। ২২ লক্ষ ওএমআর শিট এখনই প্রকাশ করতে হচ্ছে না কমিশনকে। অযোগ্যদের বেতন ফেরতের বিষয়টিও ঝুলে রইল হাইকোর্টে৷ আইনি প্রশ্নে ঝুলে রইল আদালত অবমাননার মামলা। আদালত অবমাননার মামলার শুনানি কোন আদালতে হবে- হাইকোর্ট না সুপ্রিম কোর্টে?এই আইনি প্রশ্নের নিষ্পত্তি আগে চায় বিচারপতি দেবাংশু বসাকের ডিভিশন বেঞ্চ। তারপরেই আদালত অবমাননা শুনানি হবে বলে জানিয়ে দিলেন বিচারপতি দেবাংশু বসাকের ডিভিশন বেঞ্চ।
মামলা শোনার এক্তিয়ার সুপ্রিম কোর্টেরই আছে! (Calcutta High Court)
কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি দেবাংশু বসাক এবং বিচারপতি মহম্মদ শব্বর রশিদির ডিভিশন বেঞ্চে এসএসসি ২৬ হাজার চাকরি বাতিলে আদালত অবমাননার মামলার শুনানি ছিল বুধবার। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পরও কেন ওএমআর শিট প্রকাশ করা হচ্ছে না, চিহ্নিত অযোগ্যদের নাম এখনও কেন বেতন তালিকায় রয়েছে, কেন গত ৩ এপ্রিল দেওয়া সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ কার্যকর করতে এত দেরি হচ্ছে, এই প্রশ্ন তুলে কলকাতা হাইকোর্টে (Calcutta High Court) আদালত অবমাননার মামলা করেছিলেন বৈশাখী ভট্টাচার্য, নসরিন খাতুন, লক্ষ্মী তুঙ্গারা৷ বুধবার এই বিষয়ে পর্ষদ এবং কমিশনের উত্তর জানতে চেয়েছিল হাইকোর্ট।
আজ এসএসসির তরফ থেকে আইনজীবীরা ওএমআর শিটের মিরর ইমেজ বা যোগ্য অযোগ্যদের তালিকা সামনে আনার পরিবর্তে আজ আদালতে এসএসসি’র আইনজীবীরা সওয়াল করেন এই মামলা যেহেতু সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন, তাই হাইকোর্টে এই মামলায় আদালত অবমাননার শুনানি হতে পারে না। মধ্যশিক্ষা পর্ষদের আইনজীবী পার্থসারথি সেনগুপ্তের আদালতে সওয়ালে বলেন, যদি হাইকোর্টের নির্দেশ সুপ্রিম কোর্ট কোনও পরিবর্তন করে তাহলে আদালত অবমাননার মামলা সুপ্রিমকোর্টেই হওয়া উচিত। হাইকোর্টের রায়ের বেশকিছু অংশ পরিবর্তন করেছে সুপ্রিম কোর্ট। পর্ষদের আইনজীবীর যুক্তি এসএলপি (স্পেশাল লিভ পিটিশন) দাখিল না হলে হাইকোর্টে আদালত অবমাননার মামলা করা যেত। কিন্তু যেহেতু এসএলপি দায়ের হয়েছে এবং হাইকোর্টের রায়ের অনেক অংশ পরিবর্তন করেছে সুপ্রিমকোর্ট তাই হাইকোর্টের আদালত অবমাননার মামলার শুনানি করার এক্তিয়ার নেই। তাই মধ্যশিক্ষা পর্ষদ অবমাননার মামলার ক্ষেত্রে কোনও অবস্থান জানাতে পারছে না।

স্কুল সার্ভিস কমিশনের আইনজীবী সপ্তাংশু বসুও এদিন শুনানিতে আদালতকে জানান, ওএমআর শিট প্রকাশের নির্দেশ অমান্যর মামলাও একমাত্র শুনতে পারে সুপ্রিম কোর্ট। হাইকোর্টের এই মামলা শোনার এখতিয়ার নেই। আদালতে মামলা গ্রাহ্য না হওয়ায় তাদেরও হাইকোর্টে এই বিষয়ে অবস্থান জানানোর কোনও সুযোগ নেই। চিহ্নিত অযোগ্যদের বেতন ফেরতে কী পদক্ষেপ করেছে পর্ষদ? সেক্ষেত্রে অবশ্য সুপ্রিম কোর্ট হাইকোর্টের (Calcutta High Court) রায়ের এই অংশ বহাল রেখেছে হাইকোর্টের বিচারপতি দেবাংশু বসাক ডিভিশন বেঞ্চ। কিন্তু কমিশনের আইনজীবী এক্ষেত্রেও জানিয়ে দেন, মামলা আদালতে গ্রাহ্য না হওয়ায় তারা কোনও অবস্থান জানাতে পারছে না।
আরও পড়ুন: Kalighater kaku: আরও ২ মাস স্বস্তি কালিঘাটের কাকুর, ১৬ জুন জামিনের মেয়াদ বৃদ্ধি করল হাইকোর্ট
বিচারপতি দেবাংশু বসাক তখন মামলাকারীদের আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যের উদ্দেশ্যে জিজ্ঞাসা করেন বলেন, কোন আইনি যুক্তিবলে কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশ বহাল রাখল সুপ্রিম কোর্ট? কেন হাইকোর্টে এই মামলা হতে পারে না? সেটা বোঝানো হোক। চাকরিপ্রার্থীদের আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য তখন বলেন, যেহেতু হাইকোর্ট (Calcutta High Court) থেকে সুপ্রিম কোর্টে এই মামলা যায়। এবং সেখানে হাইকোর্টের পুরো নির্দেশে পাল্টে দেওয়া হয়নি। শুধুমাত্র সংস্কার করা হয়েছে, তাই আদালত অবমাননা মামলা হাইকোর্টে সম্ভব। আদালতের নির্দেশ অমান্যের প্রশ্নে সংবিধানের ২১৫ ধারা অনুযায়ী ক্ষমতা দেওয়া আছে হাইকোর্টকে।
এই নিয়ে বিস্তারিত তথ্য দিতে আদালতের কাছে সময় চেয়ে নেন বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য। আদালত সেই সময় দিয়েছে। এসএসসি আদালত অবমাননার মামলায় হাইকোর্ট কীভাবে হস্তক্ষেপ করতে পারে, মূল মামলাকারীদের তা জানাতে নির্দেশ দেন বিচারপতি দেবাংশু বসাক। পরবর্তী শুনানি ২৮ এপ্রিল জানিয়ে দেন।
পর্ষদ ও কমিশনের দাবি, যেহেতু কলকাতা হাইকোর্টের (Calcutta High Court) ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশে কিছু সংস্কার করেছে সুপ্রিম কোর্ট, তখন কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের রায়টা আর কার্যকর হচ্ছে না। দেশের সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশই কার্যকর হবে। তাছাড়া, সর্বোচ্চ আদালতেই যখন লিভ পিটিশন দাখিল করতে হচ্ছে, তাহলে কলকাতা হাইকোর্টে আদালত অবমাননার শুনানি হতে পারে না। তাই তারা তাদের অবস্থান এখনই আদালতে জানাতে পারবে না। আগে ফয়সালা হোক যে আদালত অবমাননার শুনানি হাইকোর্ট করতে পারে, তারপরেই মূল শুনানিতে তারা সমস্ত জবাব দেবে।