ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: কেন্দ্রের ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পে রাজ্যের প্রাপ্য বকেয়া টাকা মিলবে কবে? এখনও পর্যন্ত ১০০ দিনের কাজের দুর্নীতিতে উদ্ধার হওয়া ২ কোটি ২০ লক্ষ টাকা কেন্দ্রকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে, নাকি প্রকল্পের মাধ্যমে মানুষকে দেওয়া হয়েছে? আগামী ১৫ মে পরবর্তী শুনানি।
তার আগে এই জবাব চেয়ে কেন্দ্রের গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের কাছে রিপোর্ট তলব কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম এবং বিচারপতি চৈতালী চট্টোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চের। কেন জব কার্ড হোল্ডারদের বেকার ভাতা দেওয়া হবে না? তাও রাজ্যকে আদালতে জানানোর নির্দেশ কলকাতা হাইকোর্টের (Calcutta High court)।
দীর্ঘদিন ধরেই রাজ্যের শাসক দল ও রাজ্য সরকার অভিযোগ করে আসছে যে ১০০ দিনের কাজ অর্থাৎ মনরেগা প্রকল্পে রাজ্যের প্রাপ্য বকেয়া টাকা আটকে রেখেছে কেন্দ্র। ২০২১ সালের পর থেকে আর সেই টাকা মেলেনি বলে দাবি করে কলকাতায় রাজভবনের পাশাপাশি দিল্লিতে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে প্রতিবাদ কর্মসূচিও হয়েছে। বহু চিঠি লেখালেখিও হয়েছে। কিন্তু তাতেও রাজ্যের প্রাপ্য বকেয়া দেয়নি কেন্দ্র (Calcutta High court)। উল্টোদিকে, কেন্দ্রের পাল্টা দাবি, একশো দিনের কাজের টাকায় ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে বলেই রাজ্যের টাকা আটকে দেওয়া হয়েছে।
রাজ্যে ১০০ দিনের কাজের টাকায় দুর্নীতি! (Calcutta High court)
রাজ্যে ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পের টাকায় দুর্নীতির অভিযোগ তুলে কলকাতা হাইকোর্টের জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয়। তদন্তে রাজ্যে এসেছিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী দল। মোট ৫ কোটি ৩৭ লক্ষ টাকা বন্টনের ক্ষেত্রে দুর্নীতি করা হয়েছিল বলে আদালতে জানান কেন্দ্রের এডিশনাল সলিসিটর জেনারেল অশোক চক্রবর্তী। মনরেগায় আর্থিক দুর্নীতির তদন্তের জন্য একটি চার সদস্যের কমিটিও তৈরি করে দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট (Calcutta High court)। গত ২০ মার্চ নোডাল অফিসার রিপোর্ট দিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে জানান, হাইকোর্ট নিযুক্ত চার সদস্যের কমিটি বিভিন্ন সময় রাজ্যের মোট চারটি জেলা- পূর্ব বর্ধমান, হুগলি, মালদহ এবং দার্জিলিং জিটিএ- এরিয়া পরিদর্শন করে একশো দিনের কাজের টাকা বন্টনের ক্ষেত্রে দুর্নীতির প্রমাণ পেয়েছে। এই চার জেলা থেকে মোট ২ কোটি ২০ লক্ষ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: Fire at High Court: হাইকোর্ট চত্বরেই আগুন! আতঙ্কে আইনজীবীদের দৌড়, নিয়ন্ত্রণে আগুন
বৃহস্পতিবার কলকাতা হাইকোর্টের (Calcutta High court) প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে এই মামলার শুনানিতে কেন্দ্রের অ্যাডিশনাল সলিসিটর জেনারেল বলেন, ২০২২ সাল থেকে দূর্নীতির কারণেই কেন্দ্র মনরেগা প্রকল্পে রাজ্যের বকেয়া টাকা দেওয়া বন্ধ রেখেছে। গত জানুয়ারি মাসে প্রাপ্য বকেয়া টাকা চেয়ে রাজ্য সরকার কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রককে আবারও চিঠি দিয়েছিল, যা এখন বিবেচনার পর্যায়ে রয়েছে।
এসজির এই বক্তব্য শুনে প্রধান বিচারপতি তাঁর তাৎপর্যপূর্ণ পর্যবেক্ষণে বলেন, ‘যদি সত্যিই দুর্নীতি হয়ে থাকে তাহলে কেন্দ্রীয় সংস্থা যে কোনও পদক্ষেপ করতে পারে। এ ব্যাপারে কেন্দ্রকে কেউ আটকে রাখেনি, আটকাতে পারে না। এই অর্থ প্রকৃত প্রাপ্যদের অবিলম্বে বন্টনের নির্দেশ দিচ্ছে আদালত (Calcutta High court)।’ প্রধান বিচারপতি আরও বলেন, ‘এই প্রকল্পের বকেয়া টাকা কেন্দ্র কবে রিলিজ করবে, তা কেন্দ্রকে দ্রুত জানাতে হবে আদালতে। মামলার পরবর্তী শুনানি আগামী ১৫ মে। তার আগে কেন্দ্রের গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রককে আদালতে এই সংক্রান্ত রিপোর্ট জমা দিতে হবে।’ পাশাপাশি, কেন জব কার্ড হোল্ডারদের বেকার ভাতা দেওয়া হবে না, তা পরবর্তী শুনানির দিন রাজ্যকে জানানোরও নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ।
বৃহস্পতিবার শুনানিতে রাজ্যের আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় আদালতে সওয়ালে বলেন, ‘কেন্দ্রীয় সরকার যথেষ্ট ঔদ্ধত্য দেখাচ্ছে। তারা কোনও প্রস্তাব গ্রহণ করছে না। অথচ অন্য কেউ কিছু না করলে ব্যবস্থা নিচ্ছে। তিন বছর হয়ে গেল, কেন্দ্রের অনেক প্রকল্পের টাকাই আসেনি রাজ্যে। প্রতিবছরই কোনও না কোনও নির্বাচন থাকছে। আগামী বছর নির্বাচন বলে সব টাকা দেওয়া বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। এটা কী ধরনের রাজনীতি?’
মামলাকারীর আইনজীবী বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য্য এদিন আদালতে (Calcutta High court) বলেন, ‘কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে লড়াই হচ্ছে। আর ভুক্তভোগী কারা? সাধারণ মানুষ।’ সেই শুনে প্রধান বিচারপতি প্রশ্ন করেন, ‘কোনও দুর্নীতি হয়ে থাকলে সেই নিয়ে পদক্ষেপ করতে বলা হয়েছিল। সেই ধরনের পদক্ষেপ কি এখনও পর্যন্ত করা হয়েছে?’ কেন্দ্রের অ্যাডিশনাল সলিসিটর জেনারেল তখন আদালতকে জানান, ‘এই প্রকল্পে ১২ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছিল রাজ্যকে।
রাজ্য সরকার দুর্নীতির টাকা উদ্ধারও করেছে। কিন্তু সেই টাকা ফেরত দেয়নি।’ তখনই কেন্দ্রীয় আধিকারিকদের প্রধান বিচারপতি প্রশ্ন করেন, ‘টাকা উদ্ধারের পর আপনারা কী করেছেন? টাকা কি কেন্দ্রকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে? নাকি স্কিমের মাধ্যমে প্রকৃত প্রাপকদের দিয়েছেন?’ তার উত্তরে এএসজি আদালতকে জানান, ‘কেন্দ্রীয় সরকার যা বলবে আমরা তাই করব। কিন্তু এই টাকা সরাসরি সাধারণ মানুষের অ্যাকাউন্টে দিতে পারবো না।’
আরও পড়ুন: Teachers Protest: ‘আমার বাবা যোগ্য শিক্ষক’—কোলের শিশুর হাতে প্ল্যাকার্ড, বাবার হাতে ওএমআর শিট
সব পক্ষের বক্তব্য শুনে প্রধান বিচারপতি নির্দেশ দিয়েছেন, রাজ্যের মানুষ যাতে ১০০ দিনের কাজের মনরেগা প্রকল্পের সুবিধা পান, তা কেন্দ্রকে নিশ্চিত করতে হবে এবং আইন অনুযায়ী রাজ্যকে তাদের বকেয়া প্রাপ্য টাকা দিতে হবে। সেই টাকা কবে দেবে কেন্দ্র? তাও জানতে চায় প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ (Calcutta High court)। আগামী ১৫ মে পরবর্তী শুনানির আগে এই রিপোর্ট আদালতে দিতে হবে কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রককে। সেইসঙ্গে কেন জব কার্ড হোল্ডারদের বেকার ভাতা দেওয়া হবে না, তাও আদালতে জানাতে হবে রাজ্যকে। নির্দেশ কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম এবং বিচারপতির চৈতালী চট্টোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চের। আগামী ১৫ মে এই মামলার পরবর্তী শুনানি।