ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: দু’দিনের ব্রিটেন সফর শেষে মলদ্বীপে পৌঁছলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী(Indian Tourists)।শুক্রবার মলদ্বীপের রাজধানী মালেতে তাঁকে স্বাগত জানাতে হাজির ছিলেন প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুইজ্জু নিজে। সঙ্গে ছিলেন সে দেশের বিদেশমন্ত্রী, প্রতিরক্ষামন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্র নিরাপত্তা বিষয়ক মন্ত্রীরা। পুরো প্রশাসনিক শীর্ষ স্তরের এই উপস্থিতি দুই দেশের মধ্যে কূটনীতির সম্পর্কে একটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের চিহ্ন বলে মনে করা হচ্ছে।
মলদ্বীপের পর্যটন হ্রাস (Indian Tourists)
২০২৩ সালে মলদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মহম্মদ মুইজ্জু ক্ষমতায় আসার পরেই ‘ইন্ডিয়া আউট’ প্রচার তীব্রতর হয়েছিল(Indian Tourists)। যা প্রাথমিকভাবে শুরু করেছিলেন প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট আবদুল্লাহ ইয়ামিনের। মলদ্বীপে ভারতীয় প্রভাব হ্রাস করার জন্য এই আন্দোলনটি মুইজ্জুর নির্বাচনী কৌশলের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছিল।কিন্তু নির্বাচনী প্রচার শেষ এবং ক্ষমতায় আসার পর মুইজ্জুর সুর বদলে যেতে শুরু করে। সেই পরিবর্তনের প্রথম লক্ষণ দেখা যায় দুবাইতে রাষ্ট্রসংঘের সিওপি২৮ জলবায়ু শীর্ষ সম্মেলনের সময়। সেখানে তিনি প্রধানমন্ত্রী মোদীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন। সেই বৈঠকটি এই বর্তমান সফরের ভিত্তি স্থাপন করেছিল এবং সম্ভবত ভারত-মলদ্বীপ সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছিল।কিন্তু কূটনৈতিক আলোচনার আগে সোশ্যাল মিডিয়া এক্স-এ একটি ঝড় উঠেছিল যার ফলে মলদ্বীপের পর্যটন ৪২ শতাংশ হ্রাস পেয়েছিল।

#বয়কটমলদ্বীপ (Indian Tourists)
২০২৪ সালের জানুয়ারিতে লাক্ষাদ্বীপ নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রধানমন্ত্রীর একটি মনোরম পোস্ট দিয়ে এর সূত্রপাত(Indian Tourists)। ভারতীয় উপমহাদেশের অন্তর্গত, লাক্ষাদ্বীপ মলদ্বীপের মতোই লাক্ষাদ্বীপ সাগরের দ্বীপপুঞ্জের অংশ।সেই পোস্টে প্রধানমন্ত্রী ভারতীয়দের ‘দেখো আপনা দেশ’ এবং ভারতের নিজস্ব জায়গা অন্বেষণ করতে উৎসাহিত করেছিলেন। কিন্তু এই সহজ বার্তাটি অন্য দিকে মোড় নেয়। মলদ্বীপের নেতাদের কিছু অপ্রাসঙ্গিক মন্তব্য বিতর্ক তৈরি করে। এরপরেই ভারতীয়রা #বয়কটমলদ্বীপ এবং #ভিজিটলাক্ষাদ্বীপ সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রেন্ডিং করে তোলেন। সোশ্যাল মিডিয়ার বাইরেও এই ট্রেন্ড ছড়িয়ে পড়ে। ইজমাইট্রিপ, মেকমাইট্রিপ, ইক্সিগো-র মতো ভ্রমণকারী সংস্থাগুলি মলদ্বীপের বুকিং নেওয়া বন্ধ করে দেয়। অন্যদিকে, লাক্ষাদ্বীপের পর্যটনস্থলের খোঁজ ৩৪০০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়ে যায় অ্যাপগুলিতে। এছাড়াও, ইন্ডিয়ান চেম্বার অফ কমার্স ভারতীয় সংস্থাগুলির কাছে আবেদন করে যাতে তারা মলদ্বীপের প্রচার বন্ধ করে এবং লাক্ষাদ্বীপ প্রচারে জোর দেওয়া হয়।
আরও পড়ুন-Central Government Employees: বৃদ্ধ মা-বাবার দেখভালের জন্য ৩০ দিনের ছুটি! বড় ঘোষণা কেন্দ্রের
মলদ্বীপে আগ্রহ হারাচ্ছেন ভারতীয়রা (Indian Tourists)
২০২৪ সালে, মলদ্বীপে ভারতীয় পর্যটকদের আগমন ২০২৩-এর তুলনায় প্রায় ৪২ শতাংশ কমেছে(Indian Tourists)। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে মালদ্বীপের পর্যটনের শীর্ষ উৎস হিসেবে ভারত পঞ্চম স্থানে নেমে এসেছে।এর আগে ২০১৭ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত, পর্যটন বিপণন, বিমানের বিকল্প বৃদ্ধি এবং সেলিব্রিটিদের প্রচারের কারণে ভারতীয় পর্যটকদের আগমন বৃদ্ধি পেয়েছিল। ২০২২ সালে প্রায় আড়াই লক্ষ পর্যটক মলদ্বীপে ঘুরতে গিয়েছিলেন। যা সর্বকালের সর্বোচ্চ ভারতীয় পর্যটকের রেকর্ড।কিন্তু ২০২৪ সালের গোড়ার দিকে, মলদ্বীপের মোট পর্যটকে মধ্যে ভারতীয় পর্যটকের সংখ্যা মাত্র ৫ শতাংশে নেমে আসে। কূটনৈতিক উত্তেজনা, অনলাইন বিতর্ক এবং লাক্ষাদ্বীপকে ঘিরে বিকল্প প্রচার এই পতনের নেপথ্যে অবদান রেখেছিল।

আরও পড়ুন-CDS: ‘শস্ত্র’ ও ‘শাস্ত্র’-র যুগে ভারত! পাকিস্তানকে বিশেষ বার্তা সিডিএস চৌহানের
প্রধানমন্ত্রীর সফরে আশার আলো (Indian Tourists)
তবে এই মুহূর্তে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সফর এবং সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য উভয় দেশের নতুন প্রচেষ্টার ফলে আশার আলো তৈরি হয়েছে(Indian Tourists)। মলদ্বীপের পর্যটন মন্ত্রক উচ্চাভিলাষী বিপণনের মাধ্যমে ভারতীয় ভ্রমণকারীদের আকৃষ্ট করার চেষ্টা করে চলেছে। নতুন বিমান রুট নিয়ে আবারও আলোচনা হচ্ছে। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে এয়ার ইন্ডিয়া মুম্বই এবং দিল্লি থেকে মলদ্বীপে প্রতিদিনের ফ্লাইট চালু করেছে।কিছু ভারতীয় ভ্রমণ সংস্থা আবারও আক্রমণাত্মক প্রচার শুরু করেছে। মলদ্বীপে তিন রাত থাকার জন্য ৩৮ হাজার টাকা থেকে শুরু করে বিশেষ প্যাকেজও দেওয়া হচ্ছে। তবে, পর্যটকদের সংখ্যা পুরনো ছন্দে ফিরতে সময় লাগবে। যদিও মালদ্বীপ ২০২৫ সালের জন্য তিন লক্ষেরও বেশি ভারতীয় পর্যটক আকর্ষণের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিল। বর্তমান প্রবণতা ইঙ্গিত দিচ্ছে যে সেই লক্ষ্যের অর্ধেকও ফিরে পেতে কয়েক বছর সময় লাগতে পারে।
