ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: স্বামীকে খুনের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয় মধ্যপ্রদেশের এক প্রৌঢ়াকে(Chemistry Professor)। সেই মামলায় মধ্যপ্রদেশ হাইকোর্টে আইনজীবী ছাড়াই নিজের পক্ষে নিজেই সওয়াল করে সোশ্যাল মিডিয়ায় আলোচনার কেন্দ্রে উঠে এসেছিলেন প্রাক্তন রসায়নের অধ্যাপিকা। চেষ্টা করেছিলেন, ‘বৈজ্ঞানিকভাবে’ তাঁর স্বামীর মৃত্যুর কারণ ব্যাখ্যা করতে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে পারলেন না। স্বামীকে খুনের অপরাধে যাবজ্জীবন তাঁকে কারাদণ্ড দিল আদালত।
স্বামীর রহস্যজনক মৃত্যু ও মামলা (Chemistry Professor)
এক সময় মধ্যপ্রদেশের ছাতারপুর জেলার এক কলেজে রসায়ন পড়াতেন মমতা পাঠক(Chemistry Professor)।তাঁর স্বামী নীরজ পাঠক ছিলেন একজন প্রাক্তন সরকারি চিকিৎসক। ২০২১ সালে নিজের বাড়িতেই রহস্যজনকভাবে মৃত্যু হয় নীরজ পাঠকের। সেই সময় পুলিশের প্রাথমিক রিপোর্টে জানানো হয়েছিল, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু হয়েছে তাঁর। কিন্তু পরে ময়নাতদন্ত এবং ফরেনসিক রিপোর্টে উঠে আসে অন্য তথ্য। সেই সূত্র ধরেই পুলিশের সন্দেহ গড়ায় মমতার দিকে। পরে তদন্তে উঠে আসে আরও কিছু তথ্য এবং স্বামীকে খুনের অভিযোগে মমতার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে পুলিশ।এরপর ২০২২ সালে জেলার একটি আদালত তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করে যাবজ্জীবন সাজা দেয়। কিন্তু এরপর এক মানবিক কারণে তাঁকে অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দেওয়া হয়, কারণ তাঁর মানসিক প্রতিবন্ধী সন্তানের যত্ন নেওয়ার কেউ ছিল না।

জেলা আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আবেদন (Chemistry Professor)
জামিনে মুক্ত থাকার সময়েই মমতা মধ্যপ্রদেশ হাইকোর্টে জেলা আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আবেদন করেন(Chemistry Professor)। তবে কোনও আইনজীবীর সাহায্য না নিয়ে, নিজেই নিজের পক্ষে সওয়াল করেন মমতা। এই দৃশ্য আদালতে উপস্থিত সকলকে যেমন অবাক করে, তেমনই সোশ্যাল মিডিয়াতেও ছড়িয়ে পড়ে তাঁর সওয়ালের ভিডিও।আদালত কক্ষে দাঁড়িয়ে অত্যন্ত ধীরস্থির ভঙ্গিতে মমতা জানান, বৈদ্যুতিক শক এবং তাপঘাত-এর মধ্যে পার্থক্য বোঝা কঠিন। শুধুমাত্র রাসায়নিক বিশ্লেষণেই সঠিক কারণ নির্ধারণ সম্ভব। সেই যুক্তির পর বিচারপতি তাঁকে জিজ্ঞেস করেন, ‘আপনি কি রসায়নের অধ্যাপিকা?’ জবাবে তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ।’ মমতার বৈজ্ঞানিক যুক্তি, চাপের মুখে পড়েও আত্মবিশ্বাস এবং খুনের বিচারের সময়ও ভেঙে না পড়ার মনোভাবের দৃশ্য সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝড় তোলে। অনেকেই তাঁকে সমর্থন করতে থাকেন। তবে সামাজিক সহানুভূতি বা ভাইরাল উপস্থিতি বিচারকে প্রভাবিত করতে পারেনি। হাইকোর্ট মমতার যাবজ্জীবন সাজা বহাল রেখেছে।
আরও পড়ুন-Dinner Date: কানাডায় একান্তে ডিনার ডেটে ক্যাটি পেরি ও ট্রুডো, প্রেমের গুঞ্জনে সরগরম
আদালতে রসায়ন ক্লাস (Chemistry Professor)
বিচারপতি বিবেক আগরওয়াল এবং বিচারপতি দেবনারায়ণ মিশ্রের ডিভিশন বেঞ্চের সামনে আদালত যেন পরিণত হয় সংক্ষিপ্ত এক রসায়ন ক্লাসে(Chemistry Professor)। অভিযুক্ত মমতা পাঠক, যিনি এক বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক, জটিল একটি বিষয়কে ব্যাখ্যা করে জানিয়েছিলেন, কীভাবে বৈদ্যুতিক প্রবাহ শরীরের কোষের সঙ্গে বিক্রিয়া করে, কোন কোন কণার জমাট বাঁধার লক্ষণ দেখা যায়। কীভাবে বিক্রিয়া ভিত্তিক পরীক্ষা থেকেই একমাত্র বোঝা সম্ভব কী কারণে মৃত্যু হয়েছে। শুধুমাত্র ক্ষতস্থান চোখে দেখে নয়, পরীক্ষাগারে সেই প্রতিক্রিয়াগুলোর বিশ্লেষণই সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে সাহায্য করে।আদালত প্রায় ৯৭ পাতার রায়ে জানায়, সমস্ত প্রমাণ ও পরিস্থিতিগত তথ্য মমতা পাঠকের দিকেই স্পষ্ট ইঙ্গিত করছে।

আরও পড়ুন-Army: ‘সুড়ঙ্গ-সন্ত্রাসবাদ’ ব্যর্থ! কেন কাশ্মীর ছাড়তে পারেনি পহেলগাঁওয়ের জঙ্গিরা?
দোষ প্রমাণিত (Chemistry Professor)
সরকারি আইনজীবী মানস মণি ভর্মা এনডিটিভিকে জানান, ‘মামলাটিকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে দেখা হয়েছে(Chemistry Professor)। আদালতের পক্ষ থেকে প্রবীণ আইনজীবী সুরেন্দ্র সিংকে ‘অ্যামিকাস কিউরি’ (আদালতের বন্ধু হিসেবে নিযুক্ত আইনজীবী) হিসেবে নিয়োগ করা হয়, যাতে মমতা সুবিচার পান।’দীর্ঘ শুনানি শেষে আদালত জানায়, উপস্থাপিত প্রমাণ ও ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে মমতা পাঠকের দোষ প্রমাণিত হয়েছে। বিচারপতির বেঞ্চ বলেন, ‘এটি একটি গুরুতর অপরাধ, যা সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি রাখে।’ সেই সঙ্গে মমতা পাঠককে অবিলম্বে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেন বিচারক।
