ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: এই ২০২৫ সালেও একটা গোটা গ্রামে প্রচলিত বাল্যবিবাহ (Child Marriage)! এই গ্রামে রয়েছে এক অদ্ভুত প্রথা। এখানে চলে শিশুদের শৈশব কেনাবেচা। সন্তান জন্ম নেওয়ার সাথে সাথেই এই গ্রামের মেয়েদের পায়ে পরিয়ে দেওয়া হয় বিবাহ নামক সামাজিক বেড়ি, যা আমৃত্যু বয়ে নিয়ে চলতে হয় এই গ্রামের প্রত্যেক মহিলাকে।
কোথায় রয়েছে এই প্রথা? (Child Marriage)
ভারতে আইন করে বাল্যবিবাহ (Child Marriage) বন্ধ করা হয়েছে! মেয়েদের জন্য এসেছে বহু আইন। কিন্তু, এসব আইনের বিন্দুমাত্র প্রভাব পরেনি মধ্যপ্রদেশ্যের এই গ্রামগুলিতে। স্বাধীনতার ৭৭ বছর পরেও মধ্যপ্রদেশের রাজগড় জেলার দুর্গম ভূখণ্ডে এসব আইনের একটুও আঁচ লাগেনি। এখানকার রুক্ষ ঢেউ খেলানো প্রত্যন্ত গ্রামগুলির মেয়েদের জন্য সময়ও যেন থমকে গেছে। বাল্যবিবাহের মতো সামাজিক প্রথা এখনো নিয়ম মেনে পালন করা মধ্যপ্রদেশের রাজগড় জেলার জৈতপুরা নামে একটি গ্রামে। মধ্যপ্রদেশের এই একটি গ্রাম নয়, এরকমই আরও ৫০টির বেশি গ্রাম রয়েছে, যেখানে মেয়েদের জন্মের সাথে সাথেই বিয়ে ঠিক হয়ে যায়। এই গ্রামগুলিতে কন্যা সন্তানদের শৈশব বলে কিছু নেই। একেবারে সামাজিক নিয়ম মেনে শৈশবের টুঁটি চেপে যে বয়সে বালিকা ও কিশোরীদের পুতুল খেলার কথা সেই বয়সেই তাদের বসিয়ে দেওয়া হয় বিয়ের পিঁড়িতে।
কেন এই প্রথা? (Child Marriage)
এই গ্রামের বাসিন্দাদের আর্থিক অবস্থা বেশ খারাপ। আর সেই দারিদ্রের হতাশা থেকে মুক্তি পেতেই নিজেদের কন্যা সন্তানদের শৈশবকেই বলি দেয় পরিবারের সদস্যরা। মধ্যপ্রদেশের এই গ্রামে বাল্য বিবাহের (Child Marriage) মতো প্রথা আজকের নয়।এখানকার বাল্য বিবাহের এই প্রথা চলে আসছে যুগের পর যুগ ধরে।এই সামাজিক নিয়মের অন্ধকার থেকে বেরিয়ে আসা তো দূর, এই সামাজিক নিয়মের চোরাবালিতে একটু একটু করে ডুবে যাচ্ছে জৈতপুরা গ্রামের সবকটি পরিবার।
আরও পড়ুন: Kejriwal Letter to Bhagwat: বিজেপিকে সমর্থন করেন মোহন ভাগবত? চিঠি লিখে প্রশ্ন কেজরিওয়ালের!
সামাজিক ভাবে বাল্য বিবাহ
শুধুমাত্র এই গ্রামেরই প্রায় ৭০০-র বেশি মেয়ের জীবন নষ্ট হয়েছে এই বাল্যবিবাহ নামক অভিশাপের কারণে। এই গ্রামে কন্যা সন্তান জন্মের এক বা দু’বছর পর, এমনকি কোনও কোনও সময় মাতৃগর্ভে থাকাকালীন সময়েই কন্যা সন্তানদের বিয়ে ঠিক করে ফেলেন তার মা-বাবা। এখানকার যে পরিবারে যত বেশি অর্থের প্রয়োজন সেই পরিবারে তত তাড়াতাড়ি মেয়েদের বিয়ের ঠিক করা হয়। এই গ্রামের মহিলারা গর্ভবতী হলে পরিবারের মধ্যে এই নিয়ে আলোচনা শুরু হয়ে যায়, সন্তান যদি কন্যা হয় তাহলে তাকে কার সঙ্গে বিয়ে দেওয়া হবে। এমনকি অনেক সময়ই পুরুষেরা মদ্যপ অবস্থায় বাড়ির কন্যা সন্তানদের বিয়ে ঠিক করে ফেলেন।

কী এই প্রথা?
মধ্যপ্রদেশের এই গ্রামের অদ্ভুত সামাজিক রীতি হল, জন্মানোর ২ বছরের মধ্যেই বাগদান করতে হয় কন্যা সন্তানকে।আর বয়স ১৮ পেরনোর আগেই বিয়ে সেরে ফেলতে হয়। এই অবশ্য শুধুমাত্র কন্যা সন্তানদের জন্য নয়। সেখানকার পুত্র সন্তানদের এই সামাজিক নিয়মে বাঁধা পরতে হয়। আর একবার কারোর সঙ্গে বাগদান সম্পন্ন হলে সামাজিক নিয়ম অনুযায়ী কেউ চাইলেও বেরিয়ে আসতে পারে না এই নিয়ম থেকে। যদি কেউ সেই বিয়ে ভাঙতে চায়, তাহলে তাকে বড়সড় জরিমানা এবং শাস্তি পেতে হয়।
আরও পড়ুন: RBI Governor Sanjay Malhotra: ভারতের অর্থনীতি নিয়ে আশাবাদী নতুন আরবিআই গভর্নর সঞ্জয় মালহোত্রা
প্রথা ভাঙলে কী হয়?
জাতীয় পরিবার স্বাস্থ্য সমীক্ষার দেওয়া তথ্য বলছে, মধ্যপ্রদেশের এই রাজগড় জেলায় ২০-২৪ বছর বয়সি মহিলাদের মধ্যে ৪৬ শতাংশ মহিলার সাবালক হওয়ার আগেই বিয়ে হয়ে গেছে। অর্ধেকেরও বেশি মহিলা নিরক্ষর। তারা চাইলেও এই সামাজিক রীতি ভাঙতে পারছে না। এই সামাজিক প্রথা ভাঙলে তাদের পরিবারকে মোটা অঙ্কের জরিমানা দিতে হয়। এমনকি সেখানকার পঞ্চায়েতের সামনে হাজির হয়ে জবাবদিহিও করতে হয়।

মহিলারা কী চাইছেন?
এই গ্রামের বহু মহিলা চান তাদের মতো তাদের সন্তানদের শৈশব যেন নষ্ট না হয়। তারা চান এই গ্রামের এই সামাজিক প্রথা থেকে বেরিয়ে আসতে। কিন্তু, তাদের চাইলেও অনেক মহিলা এই প্রথার বিরোধ করে বেরিয়ে আসতে পারছেন না। শুধু যে মহিলারা এই প্রথার বন্ধনে রয়েছেন তা নয়। বহু বালক রয়েছে যারা চাইছে ভালো পড়াশোনা করে ভালো ভবিষ্যৎ গড়তে। কিন্তু এই সামাজিক নিয়মের কারণে ১৮ বছরের মধ্যেই বিয়ের করে নিতে হচ্ছে। এতে তাদের সেই স্বপ্ন পূরণ করতে পারছেন না। ভারতে এত আইন করেও যে মধ্যেপ্রদেশের এই গ্রামটিতে তার একটু প্রভাব পরেনিও তা এই গ্রামটিতে না গেলে বোঝা যাবে না। আজও বহু কন্যা সন্তানকে অল্প বয়সেই ভারী গহনা পরিয়ে বিয়ের পিঁড়িতে বসানো হচ্ছে জোর করে। নষ্ট করা হচ্ছে বহু শিশুর শৈশব।