ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: চিনের শ্যানডং প্রদেশের ওয়েইফ্যাং শহরে একটি রাসায়নিক কারখানায় মঙ্গলবার ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে, যা ঘিরে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে গোটা এলাকায় (China Chemical Factory Blast)। বিস্ফোরণের তীব্রতা এতটাই ভয়ঙ্কর ছিল যে, তিন কিলোমিটার দূর পর্যন্ত তার প্রভাব অনুভূত হয়েছে। বহু বাড়ির জানালার কাচ ভেঙে যায়, বহু মানুষ ঘর ছেড়ে রাস্তায় নেমে আসেন আতঙ্কে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, এমন কম্পন তাঁরা ভূমিকম্প ছাড়া কখনও অনুভব করেননি।বিস্ফোরণের স্থান ওয়েইফ্যাং শহরটি একটি গুরুত্বপূর্ণ শিল্পাঞ্চল হিসেবে পরিচিত, যেখানে একাধিক বড় কারখানা রয়েছে। প্রাথমিকভাবে জানা গিয়েছে, শহরের একটি রাসায়নিক উৎপাদনকারী কারখানায় এই বিস্ফোরণ ঘটে। বিস্ফোরণের সময় কারখানাটিতে ঠিক কতজন কর্মী উপস্থিত ছিলেন, তা এখনও স্পষ্ট নয়।
ঘটনাস্থলে বিশাল উদ্ধারকারী দল ও দমকল (China Chemical Factory Blast)
খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ঘটনাস্থলে পৌঁছায় বিশাল উদ্ধারকারী দল ও দমকল বাহিনী(China Chemical Factory Blast)। প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, প্রায় ২৩০টি দমকল ইঞ্জিন ও বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে আগুন নিয়ন্ত্রণ ও উদ্ধারকাজের জন্য। তবে বিস্ফোরণ এতটাই প্রবল ছিল যে, দমকলের কর্মীদের আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রচণ্ড বেগ পেতে হচ্ছে।প্রত্যক্ষদর্শীদের অনেকেই দাবি করেছেন, বিস্ফোরণের শব্দ এতটা জোরালো ছিল যে, মনে হয়েছিল যুদ্ধবিমান বোমা ফেলেছে। এলাকার বাসিন্দা লি ঝাও বলেন, “আমি আমার বসার ঘরে ছিলাম। হঠাৎ এমন একটি বিকট শব্দ শুনলাম, ঘর কেঁপে উঠল। জানলার কাচ ছিঁড়ে পড়ে গেল। আমরা প্রথমে ভাবলাম ভূমিকম্প হয়েছে। পরে খবর পাই, পাশের রাসায়নিক কারখানায় বিস্ফোরণ ঘটেছে।”
বহু মানুষ আহত (China Chemical Factory Blast)
এই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত কোনও মৃত্যুর খবর সরকারিভাবে নিশ্চিত করা হয়নি(China Chemical Factory Blast)। তবে স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বহু মানুষ আহত হয়েছেন এবং অনেকে এখনও কারখানার ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে রয়েছেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। উদ্ধারকার্য চলছে, তবে ধোঁয়া ও রাসায়নিক গ্যাসের কারণে উদ্ধারকাজ ব্যাহত হচ্ছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।বিস্ফোরণের কারণ নিয়ে এখনো পর্যন্ত কিছু জানা যায়নি। কারখানায় কী ধরনের রাসায়নিক উৎপাদিত হত, তা নিয়েও প্রশাসন কোনো বিস্তারিত তথ্য দেয়নি। নিরাপত্তা সংক্রান্ত কোনো গাফিলতির জন্যই কি এই বিস্ফোরণ ঘটেছে, নাকি কোনো প্রযুক্তিগত ত্রুটির কারণে এই বিপর্যয়, তা খতিয়ে দেখতে ইতিমধ্যেই একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

আরও পড়ুন:Bomb Explosion : অমৃতসরে বোমা বিস্ফোরণ! খলিস্তানপন্থী যুবক নিহত, বড় ষড়যন্ত্রের সন্দেহ তদন্তকারীদের
বিষাক্ত গ্যাস ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা (China Chemical Factory Blast)
বিশেষজ্ঞদের মতে, রাসায়নিক কারখানাগুলিতে এমন দুর্ঘটনা ঘটলে তা শুধু স্থানীয় মানুষ নয়, পরিবেশের ওপরও দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলে(China Chemical Factory Blast)। বিষাক্ত গ্যাস ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকায় আশেপাশের বাসিন্দাদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। কিছু এলাকা আংশিকভাবে খালি করে দেওয়া হয়েছে বলেও খবর পাওয়া গিয়েছে।উল্লেখ্য, চিনে (Xi Jinping) অতীতেও বেশ কয়েকটি বড় রাসায়নিক বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে, যার মধ্যে অন্যতম ছিল ২০১৫ সালের তিয়ানজিন বিস্ফোরণ। এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে প্রশাসন নানা সতর্কতা নেওয়ার কথা বললেও বাস্তবে তার প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

আন্তর্জাতিক মহলের উদ্বেগ প্রকাশ (China Chemical Factory Blast)
এই ঘটনায় আন্তর্জাতিক মহল থেকেও উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে(China Chemical Factory Blast)। মানবাধিকার সংগঠন ও পরিবেশ সংস্থাগুলি দ্রুত তদন্ত ও দায়ীদের শাস্তির দাবি জানিয়েছে।বর্তমানে গোটা ওয়েইফ্যাং শহরে চরম আতঙ্কের পরিবেশ। সাধারণ মানুষ জানতে চাইছেন—এই বিস্ফোরণ থেকে তারা কতটা নিরাপদ, এবং আবার কবে এমন দুর্ঘটনা ঘটতে পারে না, তার নিশ্চয়তা কে দেবে?প্রশাসনের পক্ষ থেকে দ্রুত ও স্বচ্ছ তদন্তের আশ্বাস দেওয়া হলেও স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক এখনও কাটেনি। এই ভয়াবহ বিস্ফোরণ আরেকবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল, শিল্পায়নের দৌড়ে নিরাপত্তা কতটা উপেক্ষিত হচ্ছে।