ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: প্রশান্ত মহাসাগরের ছোট্ট দ্বীপরাষ্ট্র তাইওয়ান যেন এক অনিশ্চয়তার ধোঁয়াশায় ঘেরা। চারপাশে উত্তেজনা, মাথার উপর অনবরত চেপে বসে আছে চিনা ড্রাগনের নিঃশ্বাস (China Taiwan Conflict)। তাইওয়ানের স্বাধীন অস্তিত্বকে বারবার অস্বীকার করে আসা বেজিং দ্বীপটিকে নিজেদের অবিচ্ছেদ্য অংশ বলে দাবি জানিয়ে রেখেছে দীর্ঘদিন ধরেই। এমন পরিস্থিতিতে একদিকে তাইওয়ান ঘিরে সামরিক মহড়া, অন্যদিকে আকাশসীমায় প্রায় নিয়মিত প্রবেশ করে দাদাগিরি চালানো—চীনের এই আগ্রাসনকে ঘিরে দ্বীপরাষ্ট্রে আতঙ্কের ছায়া আরও ঘনীভূত হয়েছে।
আত্মবিশ্বাস ফিরেছে তাইওয়ানের (China Taiwan Conflict)
তবে এবার যুক্তরাষ্ট্রের সক্রিয় সহযোগিতায় নতুন আশার আলো দেখতে শুরু করেছে তাইপে (China Taiwan Conflict)। যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে অত্যাধুনিক এফ-১৬ ভাইপার যুদ্ধবিমান পেয়ে যেন খানিকটা আত্মবিশ্বাস ফিরে পেয়েছে দ্বীপরাষ্ট্রটির সরকার ও সেনাবাহিনী। তাইওয়ানের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের মহাসচিব জোসেফ উ একটি এফ-১৬ ভাইপারের সামনে দাঁড়িয়ে বলেন, “আকাশ রক্ষার জন্য এবার আমাদের বহরে যুক্ত হচ্ছে ৬৬টি যুদ্ধবিমান।”
এফ-১৬ ভাইপার (China Taiwan Conflict)
এই এফ-১৬ ভাইপার যুদ্ধবিমানগুলো তৈরি করেছে যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত প্রতিরক্ষা প্রতিষ্ঠান লকহিড মার্টিন (China Taiwan Conflict)। প্রথম ধাপে কয়েকটি জেট সরবরাহ করা হয়েছে দক্ষিণ ক্যারোলিনার একটি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে। শুধু তাই নয়, তাইওয়ানের বিমানবাহিনীর জন্য নতুন একটি ইউনিট গঠন করা হয়েছে পূর্ব উপকূলের আকাশসীমা রক্ষার্থে, যেখানে এই বিমানগুলো ব্যবহৃত হবে।
আরও পড়ুন: Putin’s Shadow Fleets : নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে জ্বালানি রফতানির গোপন কৌশল দেখাচ্ছে রাশিয়ার ‘ছায়া নৌবহর
পঞ্চম প্রজন্মের জে-২০ (China Taiwan Conflict)
চীনের প্রতিরক্ষা শক্তি যে ভয়ংকর তা অস্বীকারের উপায় নেই (China Taiwan Conflict)। পিপলস লিবারেশন আর্মি (PLA)-র হাতে রয়েছে প্রায় ১৫০০-এরও বেশি যুদ্ধবিমান, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো পঞ্চম প্রজন্মের জে-২০ “মাইটি ড্রাগন” ও নতুন প্রজন্মের জে-৩৫ ও জে-৫০। তবে বিশ্লেষকদের মতে, চিনা যুদ্ধবিমানগুলোর বাস্তব যুদ্ধ অভিজ্ঞতা খুবই সীমিত। অন্যদিকে, এফ-১৬ এর রয়েছে দীর্ঘ ও প্রমাণিত যুদ্ধ ইতিহাস—পাকিস্তান, ইজরায়েলসহ বহু দেশের বায়ুসেনাই এই যুদ্ধবিমান ব্যবহার করে আসছে।
ইনফ্রারেড ট্র্যাকিং সিস্টেম (China Taiwan Conflict)
তবে চিন শুধু যুদ্ধবিমান দিয়েই নয়, সমুদ্রপথেও তাইওয়ানকে চেপে ধরার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। উভচর যুদ্ধজাহাজ, দ্রুতগামী জলযান ও উপকূল আক্রমণের প্রস্তুতি সবই তার অংশ। এ কারণে যুক্তরাষ্ট্র শুধু যুদ্ধবিমান নয়, ২০২৩ সালে তাইওয়ানকে ইনফ্রারেড ট্র্যাকিং সিস্টেমও সরবরাহের অনুমোদন দেয়, যাতে স্টেলথ প্রযুক্তির জে-২০ ও জে-৩৫ এর অবস্থান শনাক্ত করা সম্ভব হয়।
মিসাইল (China Taiwan Conflict)
এদিকে, নতুন এফ-১৬ ভাইপারগুলো অত্যাধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত (China Taiwan Conflict)। এতে রয়েছে AGM-84 হারপুন মিসাইল, AGM-88 অ্যান্টি রেডিয়েশন মিসাইল এবং জয়েন্ট স্ট্যান্ডঅফ ওয়েপন, যা ইলেকট্রনিক জ্যামিংয়ের মধ্যেও কার্যকর। এমনকি যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রশিক্ষণও নিচ্ছে তাইপের বায়ুসেনা, ফলে প্রযুক্তিগত দক্ষতাও অর্জন করছে তারা।তবে এ প্রতিযোগিতা এখানেই থেমে নেই। যুক্তরাষ্ট্রও ষষ্ঠ প্রজন্মের যুদ্ধবিমান তৈরি করছে—এফ-৪৭। এই বিমান একসঙ্গে বহু ড্রোন নিয়ে শত্রু অঞ্চলে ঢুকে আক্রমণ করতে পারবে। ফলে সামরিক ভারসাম্য রক্ষায় আমেরিকাও প্রস্তুত।
আরও পড়ুন: Pakistan Dependency on China : সমরাস্ত্রে ড্রাগেনের উপর ভরসা কাল হবে পাকিস্তানের?
সামরিক বিশ্লেষকদের মতামত (China Taiwan Conflict)
চীনের ‘গ্লোবাল টাইমস’ দাবি করেছে, এফ-১৬ ভাইপার দিয়েও জে-২০-কে রুখে দেওয়া যাবে না। তাদের মতে, যুদ্ধবিমান ওঠার আগেই ধ্বংস করে দেওয়া সম্ভব চীনের দূরপাল্লার মিসাইল দিয়ে। যদিও বাস্তব পরিস্থিতি এতটা একমুখী নয়। সামরিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, প্রকৃত দ্বন্দ্ব হলে তাইওয়ানের পাশে মার্কিন বাহিনী দাঁড়াবে—আর তখন সামনে আসবে এফ-৩৫ লাইটনিং বা বি-২ স্পিরিট বোমারু বিমানের মতো মারাত্মক অস্ত্র।এ লড়াই শুধু অস্ত্রশস্ত্রের নয়, এটি এক রণনীতি, প্রযুক্তি আর জোট গঠনের কৌশলের লড়াই। তাইওয়ান এখন শুধু একটি দ্বীপ নয়, এটি হয়ে উঠেছে বিশ্বশক্তির সংঘর্ষের কেন্দ্রবিন্দু। আর এই উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে এফ-১৬ ভাইপার যেন তাইপের আকাশে এক নতুন প্রতিরক্ষার প্রতীক।