ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: চিনে একদলীয় শাসনের অব্যাহত ধারায় টানা তৃতীয় বারের জন্য ক্ষমতায় আসীন হয়ে শাসক কমিউনিস্ট পার্টির সর্বময় নেতা হিসেবে নিজের কর্তৃত্ব আগেই প্রতিষ্ঠিত করেছেন প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং (Communist Party of China)। এবার তাঁর সামনে আরও এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়—চিনের আগামী পাঁচ বছরের সামগ্রিক উন্নয়ন পরিকল্পনা ঘোষণা। সেই লক্ষ্যে আগামী অক্টোবরে বসতে চলেছে দেশের সর্বোচ্চ আইনসভার বিশেষ অধিবেশন—‘ন্যাশনাল পিপলস কংগ্রেস’-এর ‘চতুর্থ প্লেনাম’।
রাজনৈতিক পরিকল্পনার মোড়কে অর্থনৈতিক কৌশল (Communist Party of China)
সরকারি সংবাদ সংস্থা শিনহুয়া জানিয়েছে, এই বিশেষ অধিবেশনেই আগামী পাঁচ বছর (২০২৬-২০৩১) সময়কালের জন্য দেশের অর্থনীতি, প্রযুক্তি ও বিদেশ নীতির রূপরেখা ঘোষণা করবেন শি জিনপিং(Xi Jinping) (Communist Party of China)। পরিকল্পনাটিকে বলা হচ্ছে পঞ্চদশ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা। চিনের ইতিহাসে পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা নতুন নয়, তবে এইবারের রূপরেখা আগের তুলনায় অনেক বেশি রাজনৈতিক ও কৌশলগত বলেই মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা।
শাসক কমিউনিস্ট পার্টির ২৪ সদস্যের পলিটব্যুরোতে ইতিমধ্যেই এই পরিকল্পনা নিয়ে প্রাথমিক আলোচনা সম্পন্ন হয়েছে। বুধবার শেষ হয়েছে সেই বৈঠক। এবার এই খসড়া পাঠানো হবে পার্টির ৪০০ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটিতে, যেখানে হবে এই পরিকল্পনার চূড়ান্ত রূপদান।
‘মেড ইন চায়না ২০২৫’ ও প্রযুক্তিনির্ভর অর্থনীতির লক্ষ্যে (Communist Party of China)
এই পরিকল্পনার অন্যতম স্তম্ভ হল—‘মেড ইন চায়না ২০২৫’ (Communist Party of China)। এই প্রকল্পের মাধ্যমে চিন এমন একটি প্রযুক্তি-কেন্দ্রিক উৎপাদন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে চাইছে, যার মাধ্যমে তারা বিশ্বে উচ্চমানের ইলেকট্রনিকস, রোবোটিক্স, ক্লিন এনার্জি ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মতো ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলতে সক্ষম হয়। শিনহুয়া জানিয়েছে, এই প্রকল্পের খসড়া তৈরিতে জিনপিংয়ের ব্যক্তিগত ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
চিনের লক্ষ্য—উন্নত প্রযুক্তির সাহায্যে স্থানীয় উৎপাদন বাড়িয়ে আমদানির উপর নির্ভরতা কমানো, এবং একইসঙ্গে বিশ্ব বাজারে চিনা পণ্যের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা।

আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে নতুন ভূমিকা (Communist Party of China)
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, আমেরিকার সঙ্গে দীর্ঘদিনের শুল্কযুদ্ধ এবং বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতার প্রেক্ষাপটে, এই পরিকল্পনা চিনের জন্য একটি ‘রিসেট বাটন’। ব্লুমবার্গ-এর এক বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, বাণিজ্যচুক্তির পর চিন এখন নিজের প্রভাব দ্রুত পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে চাইছে—বিশেষত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, আফ্রিকা এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নে।
শুধু তাই নয়, কৌশলগত এই পরিকল্পনা চিনের কূটনৈতিক অবস্থানকেও প্রভাবিত করতে চলেছে। অর্থনৈতিক উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে জিনপিং তাঁর আন্তর্জাতিক কৌশলগুলিকেও আরও পরিশীলিত করতে চাইছেন বলে মনে করা হচ্ছে।

আরও পড়ুন: Tmc Meghalaya : মেঘালয়ে বিধায়কের দলবদলে বিরোধী দলের তকমা হারাবে তৃণমূল?
শক্তি ও স্থায়িত্বের বার্তা (Communist Party of China)
‘চতুর্থ প্লেনাম’ একাধারে উন্নয়নের রূপরেখা এবং রাজনৈতিক ক্ষমতার পুনর্ব্যাখ্যা (Communist Party of China)। এই পরিকল্পনার মাধ্যমে শি জিনপিং একদিকে দেশবাসীকে দিচ্ছেন অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার আশ্বাস, অন্যদিকে আন্তর্জাতিক পরিসরে চিনকে তুলে ধরছেন একটি আত্মনির্ভর ও সুসংগঠিত শক্তি হিসেবে।
এখন দেখার, অক্টোবরের প্লেনাম শেষে প্রকাশিত নীতি-নির্দেশ চিনকে সত্যিই ‘উন্নয়ন ও আধিপত্যের যুগে’ প্রবেশ করাতে পারে কি না। বিশ্ববাসীর চোখ এখন বেজিংয়ের দিকেই।