ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: ডিএ রাজ্য সরকারি (DA Issue) কর্মচারীদের মৌলিক অধিকার নয়, মানল সব পক্ষ। তবে এটা আইনি অধিকার বলে দাবি মামলাকারীদের। ‘দয়া করে কিছু অন্তত দিন’- রাজ্যের আইনজীবীর উদ্দেশ্যে মন্তব্য সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতির। মঙ্গলবার গোটা শুনানিতে নিজেদের বক্তব্য পেশ করে রাজ্য। আগামীকাল তথা বুধবার আদালত রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের বক্তব্য শুনবে।
মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টে ডিএ মামলার শুনানি (DA Issue)
মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টে ডিএ মামলার শুনানি (DA Issue) হল। এদিন বিচারপতি সঞ্জয় কারোল এবং বিচারপতি প্রশান্ত কুমার মিশ্রের বেঞ্চে নিজেদের বক্তব্য পেশ করল রাজ্য। এদিন শুনানিতে রাজ্যের আইনজীবী আদালতে মূলত তিনটে দাবি করেন। রাজ্যের দাবি, মহার্ঘ্য ভাতা রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের মৌলিক অধিকার নয়। ডিএ নিয়ে রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের কোনও আইনি অধিকার নেই। পরিস্থিতি বিবেচনা করে রাজ্য সরকার সেই মতো ডিএ দেয়।
“কিসের ভিত্তিতে রাজ্য সরকার ডিএ দেয়” (DA Issue)
তখনই আদালত রাজ্যের আইনজীবীর থেকে জানতে চান, কিসের ভিত্তিতে রাজ্য সরকার ডিএ দেয় (DA Issue)। বিচারপতি সঞ্জয় কারোল প্রশ্ন করেন, ‘কনজিউমার প্রাইস ইনডেক্স মেনে না দিলে, কোন অংকের ভিত্তিতে ডিএ দিতে চায় রাজ্য?’ তারপরই রাজ্যের আইনজীবী কপিল সিব্বলের উদ্দেশ্যে বিচারপতি কারোল তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য করেন, ‘আপনারা যে কোনও পরিমাণ ডিএ দিতে পারেন।ওঁরা তো আপনাদেরই কর্মী। কোথাও পালিয়ে যাচ্ছেন না। কিন্তু দয়া করে দিন। আপনার মক্কেলকে সেটা বলুন।’
কেন্দ্রীয় বঞ্চনা নিয়ে সরব (DA Issue)
এদিনের শুনানিতেও কেন্দ্রীয় বঞ্চনা নিয়ে সরব হন রাজ্যের আইনজীবী কপিল সিব্বল। তিনি বলেন, ‘বকেয়া ডিএ-এর ২৫ শতাংশ দেওয়ার সুপ্রিম কোর্টের অন্তর্বর্তী নির্দেশ সম্পূর্ণ সাংবিধানিক এক্তিয়ার ভুক্ত। কিন্তু ডিএ দিতে গেলে রাজ্যকে আর্থিক দিকটাও নজর রাখতে হবে। মূল্যবৃদ্ধি, রাজ্যের অর্থনৈতিক অবস্থা দেখেই ডিএ-এর হার ঠিক করে রাজ্য। এটা তাদের এক্তিয়ারের মধ্যে পড়ে। কেন্দ্রীয় হারে ডিএ দিতে হবে বলে রাজ্যকে বাধ্য করতে পারে না রাজ্য সরকারি কর্মচারীরা। কোভিড হয়েছে। মনরেগার প্রাপ্য টাকা এখনও কেন্দ্রের থেকে পায়নি রাজ্য। সেই টাকা রাজ্য সরকারকে দিতে হচ্ছে। রাজ্য কোথা থেকে এত টাকা দেবে?

সেক্ষেত্রে রাজ্যকে ঋণ করতে হবে। তার জন্য রাজ্যকে রিজার্ভ ব্যাঙ্কে আবেদন করতে হবে। ঋণ পাওয়ার ক্ষমতা দেখে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক আমাদের ঋণ দেবে। তারপর বিধানসভায় বিল আনতে হবে। তারপর টাকা হাতে আসবে। এই গোটা প্রক্রিয়াটা যথেষ্ট সময় সাপেক্ষ। এভাবে টাকা দিতে পারি না আমরা। বাজারদরের ভিত্তিতে ডিএ দিতে হবে, এই কথা কোথাও বলা নেই। কেন্দ্রীয় ইনডেক্স মেনে ডিএ দেওয়ার কথা ট্রাইব্যুনাল বলতে পারেনা। ট্রাইব্যুনালের এক্তিয়ারের বাইরে গিয়ে এই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’
অন্য রাজ্যের প্রসঙ্গও টেনে আনেন
নিজেদের বক্তব্যের স্বপক্ষে যুক্তি দিতে গিয়ে রাজ্যের আইনজীবী কপিল সিব্বাল অন্য রাজ্যের প্রসঙ্গও টেনে আনেন। এদিন তিনি বলেন, ‘কেন্দ্রের থেকে রাজ্যের নিরিখে ডিএ-এর হার আলাদা। দেশে ১৩টি রাজ্য আছে যারা কেন্দ্রীয় হারে ডিএ দেয় না। নিজেদের আর্থিক ক্ষমতা অনুযায়ী ডিএ-এর হার নির্ধারণ করে সেই রাজ্যগুলো। পশ্চিমবঙ্গ সরকার ও তার সাধ্যমত ডিএ দিচ্ছে।’
আরও পড়ুন: Calcutta HC: ভোট পরবর্তী হিংসা মামলায় জামিন দুই পুলিশ কর্মীর, হাইকোর্টে জোর ধাক্কা CBI-এর
ডিএ রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের মৌলিক অধিকার নয়। রাজ্যের এই দাবি শোনার পর, বিচারপতি সঞ্জয় কারোল বলেন, ‘কলকাতা হাইকোর্ট ডিএ-কে মৌলিক অধিকার বলেছে। এই পর্যবেক্ষণ নিয়ে আমাদেরও সন্দেহ আছে। এমন কিছু পাওয়া যাচ্ছে না, যার ভিত্তিতে ডিএ মৌলিক অধিকারের মধ্যে পড়ে বলে বলা যাচ্ছে না।’ তখন রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য্য আদালতের সেই বক্তব্য মেনে নিয়ে বলেন, ‘পাসিং রেফারেন্স হিসেবেই কলকাতা হাইকোর্ট ওই মন্তব্য করেছিল। ডিএ রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের মৌলিক অধিকার নয়, এটা ঠিক। কিন্তু এটা তাদের আইনি অধিকার।’
মঙ্গলবার গোটা শুনানিতেই নিজেদের বক্তব্য আদালতকে জানায় রাজ্য। আগামীকাল তথা বুধবার মামলাকারী রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের বক্তব্য শুনবে সুপ্রিম কোর্ট।