ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: শপথের আগেই শুরু বিতর্ক (Rekha Gupta Controversy)। পুরনো পস্ট নিয়ে তুলকালাম দিল্লির রাজনৈতিক মহল। কিন্তু কী ঘটেছে আসলে?
পুরনো সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট ঘিরে আলোড়ন (Rekha Gupta Controversy)
দিল্লির নতুন মুখ্যমন্ত্রী রেখা গুপ্তা-র পুরনো সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট নিয়ে সমর্থক ও সমালোচকদের মধ্যে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে (Rekha Gupta Controversy)। বুধবার সন্ধ্যায় আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁর মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার ঘোষণা আসার পর থেকেই তাঁর পুরনো টুইট ও পোস্ট নিয়ে আলোচনার ঝড় বয়ে যাচ্ছে।
৫০ বছর বয়সী রেখা গুপ্তা বিজেপি-র প্রথমবার নির্বাচিত বিধায়ক। তাঁর পুরনো পোস্টে তিনি প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে নানা ধরনের ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ করেছিলেন। বিজেপির সমর্থকরা সেই পোস্ট শেয়ার করে কেজরিওয়ালের পরাজয়কে উপহাস করছেন, অন্যদিকে আপ (AAP) সমর্থকরা বলছেন, রেখা গুপ্তা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে আক্রমণ করতে অনুপযুক্ত ভাষা ব্যবহার করেছেন।
বিজেপি সমর্থকদের মতে, রেখা গুপ্তা বরাবরই কেজরিওয়ালের কড়া সমালোচক (Rekha Gupta Controversy)
বিজেপি সমর্থকদের দাবি, রেখা গুপ্তা দীর্ঘদিন ধরেই কেজরিওয়াল ও আপ সরকারকে সমালোচনা করেছেন এবং তার ভাষা বরাবরই ছিল তীব্র (Rekha Gupta Controversy)। সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁর পুরনো পোস্ট দেখে বোঝা যায়, তিনি আপ সরকারের নানা নীতির বিরুদ্ধে সরব ছিলেন। তিনি কেজরিওয়ালকে বিদ্রুপ করতে একাধিক মিম ব্যবহার করতেন।
আরও পড়ুন: Fact Check: পুরনো, অসম্পর্কিত ভূমিকম্পের দৃশ্য দিল্লির বলে দেখাল আনন্দবাজার, সংবাদ প্রতিদিন
ইউটিউবার তুষার গুপ্তা, যিনি ‘The Atom’ নামে একটি রাজনৈতিক চ্যানেল চালান, এক্স-এ (পূর্বে টুইটার) লিখেছেন, “হেটাররা এখন রেখা গুপ্তার পুরনো টুইট ঘেঁটে তাকে আক্রমণ করছে। তারা ভাষার জন্য নয়, বরং এই কারণে ক্ষুব্ধ যে, তিনি তখন কেজরিওয়ালকে জবাব দিচ্ছিলেন, যখন আপ ছিল দিল্লির সবচেয়ে জনপ্রিয় দল।”
পুরনো পোস্ট নিয়ে আপ সমর্থকদের অভিযোগ
বিরোধী দল ও আপের সমর্থকরা দাবি করেছেন, রেখা গুপ্তার (Rekha Gupta Controversy) পুরনো সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে অরবিন্দ কেজরিওয়ালের বিরুদ্ধে কটূক্তি ও অবমাননাকর ভাষা ব্যবহার করা হয়েছে। কিছু পোস্ট ইতিমধ্যেই মুছে ফেলা হয়েছে, কিন্তু তার স্ক্রিনশট এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল।
তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ সাগরিকা ঘোষ এই বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে এক্স-এ লিখেছেন, “দিল্লির নতুন মুখ্যমন্ত্রী রেখা গুপ্তার অতীতের অশ্লীল ভাষা ও বিশৃঙ্খল আচরণ নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় উদ্বেগজনক প্রতিবেদন দেখা যাচ্ছে। এক সময় দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন পরিশ্রমী ও মার্জিত শীলা দীক্ষিত, সংসদে ছিলেন সুবক্তা সুষমা স্বরাজ। আর এখন বিজেপির নতুন সংস্কৃতি হল কুরুচিকর ভাষা ও বিদ্বেষ ছড়ানো।”
আরও পড়ুন: Karnataka CM Siddaramaiah: জমি দুর্নীতি মামলায় মুক্ত কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া
তবে বিজেপি সমর্থকরা পাল্টা বলছেন, রেখা গুপ্তার ভাষা ছিল “দুর্নীতিগ্রস্ত নেতাদের বিরুদ্ধে ন্যায়সঙ্গত প্রতিক্রিয়া” এবং তা কোনোভাবেই অপ্রাসঙ্গিক নয়।
“হম্বা হম্বা” মন্তব্যের প্রসঙ্গ টানলেন নেটিজেনরা
একজন এক্স ব্যবহারকারী নিয়াক্ষা তৃণমূল সাংসদ সাগরিকা ঘোষকে কটাক্ষ করে লেখেন, “দুর্নীতিগ্রস্ত নেতাদের বিরুদ্ধে যে ভাষা ব্যবহৃত হয়েছে, তা যথাযথ। আর সেটা ‘হম্বা হম্বা, বাম্বা বাম্বা, খাম্বা খাম্বা’র চেয়ে অনেক ভালো।”
২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর দল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়া নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে “হম্বা হম্বা” বলে কটাক্ষ করেছিলেন। তাঁর মন্তব্যটি একটি গরুর হাঁটার আওয়াজের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছিল। সেই মন্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে এনে বিজেপি সমর্থকরা এবার নিজেদের অবস্থান জোরদার করছেন।
২৬ বছর পর দিল্লির ক্ষমতায় বিজেপি
দীর্ঘ ২৬ বছর পর দিল্লির ক্ষমতায় ফিরেছে বিজেপি (Rekha Gupta Controversy)। নির্বাচনে ৭০টি আসনের মধ্যে ৪৮টি জয়লাভ করেছে বিজেপি, যা আপের ১০ বছরের শাসনের অবসান ঘটিয়েছে। আপের আসন সংখ্যা নেমে এসেছে ২২-এ, যা গতবারের তুলনায় বিশাল পতন। এই বিপর্যয় অনেকটাই অপ্রত্যাশিত ছিল আপের সমর্থকদের কাছে।
বিজেপির প্রথম লক্ষ্য কী?
নতুন সরকার গঠনের পর বিজেপি যে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিতে চলেছে, তার মধ্যে রয়েছে, নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পূরণ করা এবং আপ সরকারের জনপ্রিয় জনকল্যাণমূলক প্রকল্পগুলো চালিয়ে যাওয়া। পাশাপাশি দিল্লির দূষণ ও পরিকাঠামো সমস্যা সমাধানের উপায় খুঁজে বের করা এবং যমুনা নদী পরিষ্কার করার জন্য নতুন পরিকল্পনা গ্রহণ।
নতুন দিল্লির নতুন মুখ, বিতর্ক পিছু ছাড়ছে না
রেখা গুপ্তার মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার কথা ঘোষণা হওয়ার পর থেকেই বিতর্ক চলছে। বিরোধীরা বলছেন, একজন মুখ্যমন্ত্রীর ভাষা আরও সংযত হওয়া উচিত, অন্যদিকে সমর্থকরা বলছেন, তিনি আপ নেতাদের মতো ভাষাতেই জবাব দিয়েছেন।
তবে বিজেপির সামনে এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হল দিল্লির শাসনকার্য সফলভাবে পরিচালনা করা। দিল্লির মানুষের প্রত্যাশা অনেক, আর সেই প্রত্যাশা পূরণ করতে পারলেই হয়তো এই বিতর্কও একসময় ধামাচাপা পড়বে।