ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: আজ আলিপুরদুয়ারে দলীয় কর্মসূচি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির। কিন্তু সেই সভাতেই থাকছেন না এক সময়ের সবচেয়ে প্রভাবশালী বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষ। ডাকই পাননি! এই অনুপস্থিতি নিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে নতুন করে জল্পনার সৃষ্টি হয়েছে।
দিলীপ ঘোষ (Dilip Ghosh) নিজে এদিন সকালে নিউটাউনের ইকোপার্কে প্রাতঃভ্রমণে বেরিয়ে মুখ খুলেছেন এই প্রসঙ্গে। তাঁর স্পষ্ট বক্তব্য, “উত্তরবঙ্গের কর্মসূচি ওখানকার কর্মীরা সামলাবে। কলকাতায় যখন আসবেন, আমরা থাকব। আমি সাধারণ কর্মী, কোনও পদাধিকারী নই—তাই আমার জন্য প্রোটোকল প্রযোজ্য নয়।”
‘দূরত্ব’ নিয়ে কী বলছেন প্রাক্তন সাংসদ? (Dilip Ghosh)
দিলীপ ঘোষ সরাসরি না বললেও তাঁর কথায় আক্ষেপের সুর স্পষ্ট। “আমি কোনও পদে নেই, তাই আমাকে ডাকা হয়নি। যখন কলকাতায় আসবেন, আমি থাকব।” দীর্ঘদিনের দলীয় দায়িত্বে থাকা নেতাকে প্রধানমন্ত্রী মোদির মতো গুরুত্বপূর্ণ সফর থেকে বাদ দেওয়া নিঃসন্দেহে এক রাজনৈতিক বার্তা, বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
আরও পড়ুন: Narendra Modi: উত্তরবঙ্গ সফরে প্রধানমন্ত্রী মোদি, সিকিম দিবসে গ্যাংটক, তারপর আলিপুরদুয়ার জনসভা
দলের রাজ্য নেতারা কি দিলীপ ঘোষকে ব্রাত্য করতে চাইছে? প্রশ্নের জবাবে নিজস্ব মেজাজে ব্যাট চালান দিলীপ। বলেন, “কে স্বীকার করল, কে করল না, তাতে কিছু যায় আসে না। পার্টি আমাকে দায়িত্ব দিয়েছিল, আমি নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করেছি।”
রাজ্য বিজেপির সঙ্গে দূরত্ব ক্রমেই বেড়ে চলেছে? (Dilip Ghosh)
একুশের বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকেই দলের রাজ্য নেতৃত্বের সঙ্গে দিলীপ ঘোষের দূরত্ব লক্ষ্য করা যাচ্ছিল। তারপর চব্বিশের লোকসভা ভোটে আসন বদল, এবং সম্প্রতি তাঁর বিয়ে ও দিঘার জগন্নাথ মন্দিরে মুখ্যমন্ত্রীর পাশে বসে সৌজন্য সাক্ষাৎ—সব মিলিয়ে দিলীপ ঘোষকে নিয়ে রাজ্য বিজেপিতে অস্বস্তির সৃষ্টি হয়েছে।
এই ঘটনায় তাঁর বিরুদ্ধে দলের একাংশের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে বলেই দাবি রাজনৈতিক মহলের। এমনকি, দিলীপ ঘোষকে ঘিরে দলীয় কর্মীদের একাংশও খোলাখুলি অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন বিভিন্ন সময়ে।
রাজনৈতিকভাবে কোণঠাসা, না কি নিজের সিদ্ধান্তে দূরত্ব? (Dilip Ghosh)
দিলীপ ঘোষ অবশ্য নিজেকে ব্রাত্য ভাবছেন না। তিনি বলেন, “দল আমাকে মর্যাদা দিয়েছে, পদ দিয়েছে। নতুন কমিটি গঠন হচ্ছে, কে কোথায় থাকবে সেটাও দেখা যাবে। দল যদি দায়িত্ব দেয়, অবশ্যই পালন করব।” নিজের অভিজ্ঞতা ও জনপ্রিয়তার ভিত্তিতে তিনি এখনও যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে প্রস্তুত, সে বার্তাও দিয়ে রাখলেন তিনি।
এছাড়াও তিনি বলেন, “আমি কারও সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নেই। আমি কোনও জায়গার জন্য লড়ি না, তাই ভয়ও পাই না।”
দলীয় অন্তর্দ্বন্দ্ব কি প্রকাশ্যে আসছে? (Dilip Ghosh)
রাজ্য বিজেপিতে দীর্ঘদিন ধরেই নেতৃত্ব নিয়ে অসন্তোষের গুঞ্জন শোনা যাচ্ছিল। অনেকেই মনে করেন, দিলীপ ঘোষকে সাংগঠনিক নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে দিয়ে দল কার্যত তাঁকে ‘সাইডলাইনে’ ঠেলে দিয়েছে। অথচ, একসময় তাঁর নেতৃত্বেই বিজেপি বাংলায় প্রথমবারের মতো ১৮টি লোকসভা আসন দখল করেছিল।
দিলীপ ঘোষ নিজে অবশ্য জানান, “রাজ্য নেতাদের অনেকেই যোগাযোগ রাখেন। মতভেদ থাকতেই পারে। তবে যারা নিজের জায়গা নিয়ে চিন্তায় থাকে, অস্তিত্ব সংকটে থাকে, তারাই ভয় পায়। আমি বয়কটের রাজনীতিতে বিশ্বাস করি না।”
দলীয় ঐক্যের সংকট না কি নেতৃত্বের দৌড় শুরু? (Dilip Ghosh)
এই মুহূর্তে রাজ্য বিজেপি বড় রাজনৈতিক রদবদলের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। নতুন করে কমিটি গঠন, সাংগঠনিক রদবদল, কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের হস্তক্ষেপ—সব মিলিয়ে নেতৃত্বের নতুন দৌড় শুরু হয়ে গিয়েছে বলেই মনে করা হচ্ছে। সেই দৌড়ে দিলীপ ঘোষকে ইচ্ছাকৃতভাবেই পিছনে ফেলে দেওয়া হচ্ছে, এমন আশঙ্কা অনেক কর্মী-সমর্থকদের মনেও জায়গা করে নিচ্ছে।
দিলীপ ঘোষের রাজনৈতিক পরিচিতি, সংগঠনের প্রতি তাঁর নিষ্ঠা, ও মাঠে সক্রিয়তার প্রমাণ বারবার মিলেছে। তাই তাঁকে প্রধানমন্ত্রীর সফরের মতো বড় মঞ্চ থেকে দূরে রাখা নিছক কাকতালীয় নয়, বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। ভবিষ্যতে বিজেপির রাজ্য রাজনীতিতে তিনি আবার কেন্দ্রে ফিরবেন, না কি ধীরে ধীরে প্রান্তে চলে যাবেন—তা সময়ই বলবে। তবে আপাতত তাঁর অনুপস্থিতি অনেক প্রশ্ন তুলে দিয়েছে।