ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: অবশেষে ‘পারস্পরিক শুল্ক’ (Discounted Reciprocal Tariff) নীতি আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। যদিও সম্পূর্ণ পারস্পরিক শুল্ক আরোপের পরিবর্তে কিছু ছাড় দেওয়া হয়েছে, তাই একে তিনি ‘ছাড়যুক্ত পারস্পরিক শুল্ক’ হিসেবে অভিহিত করেছেন।
২৬ শতাংশ শুল্ক ধার্য (Discounted Reciprocal Tariff)
ট্রাম্পের (Donald Trump) ঘোষণায় ভারতকে বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, যা আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকদের মতে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ (Discounted Reciprocal Tariff)। নতুন নীতি অনুযায়ী, ভারতীয় পণ্যের ওপর ২৬ শতাংশ শুল্ক ধার্য করেছে মার্কিন প্রশাসন। যুক্তরাষ্ট্রের দাবি, ভারত ও চীন আমেরিকার পণ্যের ওপর যে হারে শুল্ক আরোপ করে, তার অর্ধেক হারে আমেরিকাও শুল্ক নেবে। ফলে ভারতের ক্ষেত্রে এই কর ২৬ শতাংশ এবং চীনের ক্ষেত্রে ৩৪ শতাংশ ধার্য করা হয়েছে।
কী বললেন ট্রাম্প? (Discounted Reciprocal Tariff)
ওয়াশিংটনের ঐতিহ্যবাহী ‘হোয়াইট হাউস’ গোলাপ বাগানে নতুন শুল্কনীতি (Discounted Reciprocal Tariff) ঘোষণার সময় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন,“অনেক দেশ দীর্ঘদিন ধরে আমাদের দুর্বল শুল্কনীতির সুযোগ নিচ্ছে। তবে এই পরিস্থিতির অবসান ঘটবে। ২ এপ্রিল চিরকাল মুক্তির দিন হিসেবে পরিচিত থাকবে।” তিনি আরও বলেন,“প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী (Narendra Modi) আমার ভালো বন্ধু। কিছুদিন আগেই তিনি এখানে এসেছিলেন। আমি তাঁকে বলেছিলাম, ‘বন্ধু হওয়া সত্ত্বেও আপনি আমাদের সঙ্গে সঠিক ব্যবহার করছেন না।’ ভারতে মার্কিন পণ্যের ওপর ৫২ শতাংশ শুল্ক নেওয়া হয়, কিন্তু আমরা ভারতীয় পণ্যের ওপর তার অর্ধেক, অর্থাৎ ২৬ শতাংশ কর আরোপ করব।”

আরও পড়ুন: US Tariff War : ‘মুক্তি দিবসে’ পাল্টা আমদানি শুল্ক ঘোষণা ট্রাম্পের! ভারতের উপর চাপলো ২৬ শতাংশ শুল্ক
কোন দেশের ওপর কত শুল্ক? (Discounted Reciprocal Tariff)
ভারতের পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের ওপরও নতুন শুল্কহার ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্র (Discounted Reciprocal Tariff)।
দেশ | পূর্বের শুল্ক (%) | ছাড়যুক্ত শুল্ক (%) |
ভারত | ৫২ | ২৬ |
চীন | ৬৭ | ৩৪ |
ইউরোপীয় ইউনিয়ন (EU) | ৪০ | ২০ |
ব্রিটেন | ২০ | ১০ |
জাপান | ৪৮ | ২৪ |
বাংলাদেশ | ৭৪ | ৩৭ |
পাকিস্তান | ৫৮ | ২৯ |
শ্রীলঙ্কা | ৪৪ | ২২ |
তাইওয়ান | ৪৬ | ২৩ |
ভিয়েতনাম | ৩২ | ১৬ |
দক্ষিণ কোরিয়া | ২৫ | ১২.৫ |
মালয়েশিয়া | ২৪ | ১২ |
কম্বোডিয়া | ৪৯ | ২৪.৫ |
এছাড়া ব্রাজিল, সিঙ্গাপুর, চিলি, অস্ট্রেলিয়া, তুরস্ক ও কলম্বিয়ার ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন ১০ শতাংশ শুল্ক ধার্য করা হয়েছে। ইজরায়েল ও ফিলিপিন্সের জন্য এই হার ১৭ শতাংশ।

আরও পড়ুন: Bimstec Summit : মোদী-ইউনূস বৈঠক নিয়ে আশাবাদী বাংলাদেশ! জানিয়েছেন সে দেশের বিদেশ সচিব
ভারতীয় অর্থনীতিতে কী প্রভাব পড়বে? (Discounted Reciprocal Tariff)
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই শুল্কনীতির (Discounted Reciprocal Tariff) কারণে ভারতের বাণিজ্যে প্রভাব পড়তে পারে, বিশেষত—
১) গাড়ি ও যন্ত্রাংশ খাত: ভারতীয় গাড়ি নির্মাতারা যুক্তরাষ্ট্রে রফতানি করে থাকে, যাদের ওপর নতুন কর চাপবে।
২) ঔষধ শিল্প: ভারত প্রতি বছর ৮০০ কোটি ডলারের ঔষধ রফতানি করে, যা নতুন শুল্কের কারণে ব্যয়বহুল হতে পারে।
৩) খাদ্য ও কৃষিপণ্য: ভারতের কৃষিপণ্য আমেরিকায় কম রফতানি হয়, ফলে শুল্কবৃদ্ধি ক্ষতির কারণ হতে পারে না।
ভারতের পাল্টা প্রতিক্রিয়া কী? (Discounted Reciprocal Tariff)
ভারত ইতিমধ্যেই মার্কিন পণ্যের ওপর গড়ে ১১ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে রেখেছে। ট্রাম্পের নতুন ঘোষণার পর নয়াদিল্লি নতুন বাণিজ্য কৌশল নির্ধারণ করতে পারে। সূত্র অনুযায়ী, ভারত সরকার এই শুল্কনীতির আনুষ্ঠানিক নির্দেশিকা পাওয়ার পর পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে।বিশ্লেষকদের মতে, ভারত যদি পাল্টা শুল্ক আরোপ করে, তাহলে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য উত্তেজনা বাড়তে পারে। তবে প্রযুক্তি, প্রতিরক্ষা ও নবায়নযোগ্য শক্তির ক্ষেত্রে দুই দেশ একসঙ্গে কাজ করায়, এই খাতগুলিতে শুল্কবৃদ্ধির সম্ভাবনা কম।
ভারতের লোকসান কত? (Discounted Reciprocal Tariff)
- ২০২৪ সালে ভারত-আমেরিকা বাণিজ্যের পরিমাণ: ১৩,০০০ কোটি ডলার
- ভারতের উদ্বৃত্ত: ৪,৫০০ কোটি ডলার
- যুক্তরাষ্ট্রের মূল আমদানি খাত: মুক্তা ও রত্ন (৮৫০ কোটি ডলার), ওষুধ (৮০০ কোটি ডলার), পেট্রোপণ্য (৪০০ কোটি ডলার)
ট্রাম্পের ‘ছাড়যুক্ত পারস্পরিক শুল্ক’ নীতি বাস্তবায়িত হলে ভারতের বার্ষিক লোকসান হতে পারে প্রায় ৭০০ কোটি ডলার। তবে চূড়ান্ত প্রভাব নির্ভর করবে ভারতের পরবর্তী কৌশল ও প্রতিক্রিয়ার ওপর।
বৈশ্বিক বাণিজ্যে পরিবর্তন
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্কনীতি বৈশ্বিক বাণিজ্যে বড় পরিবর্তন আনতে পারে। ট্রাম্প প্রশাসনের মতে, এই নীতি যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করবে, কিন্তু ভারত-সহ উন্নয়নশীল দেশগুলির জন্য এটি একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে।বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভবিষ্যতে ভারতের উচিত তার রফতানিকৃত পণ্যের বৈচিত্র্য বৃদ্ধি করা, যাতে মার্কিন শুল্কের চাপ কমানো যায়। একই সঙ্গে, নয়াদিল্লি হয়তো নতুন কৌশল গ্রহণ করে মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনায় বসতে পারে, যাতে পারস্পরিক বাণিজ্যে ভারসাম্য বজায় থাকে।