ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: ইরানের পর এ বার কি আমেরিকার টার্গেটে পাকিস্তান? মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাম্প্রতিক মন্তব্য ঘিরে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে শুরু হয়েছে জোর জল্পনা (Donald Trump on Pakistan)। যদিও ট্রাম্প সরাসরি পাকিস্তানের নাম উল্লেখ করেননি, কিন্তু তাঁর কড়া মন্তব্যের নেপথ্যে ইসলামাবাদের পরমাণু অস্ত্র ভাণ্ডার নিয়েই উদ্বেগ বেড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
ট্রাম্পের মন্তব্য (Donald Trump on Pakistan)
চলতি মাসেই ইরানের সঙ্গে পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ চুক্তির দ্বিতীয় দফার আলোচনা শুরু হওয়ার কথা রয়েছে ইতালির রোম শহরে। সেই প্রেক্ষাপটে ট্রাম্প বলেন, “কট্টরপন্থীদের হাতে কখনওই পরমাণু অস্ত্র থাকতে পারে না।” তাঁর এই বিবৃতি শুধু ইরান নয়, পাকিস্তানকেও নিশানায় নিয়েছে বলে ধারণা তৈরি হয়েছে কূটনৈতিক মহলে।
গোপন রিপোর্ট (Donald Trump on Pakistan)
আমেরিকার স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলির দাবি, ট্রাম্পের (Donald J. Trump) পূর্বসূরি জো বাইডেন প্রশাসন হস্তান্তরের সময়েই পাকিস্তানের পারমাণবিক অস্ত্রভাণ্ডার নিয়ে একটি গোপন রিপোর্ট হোয়াইট হাউসকে দিয়েছিল (Donald Trump on Pakistan)। সেই রিপোর্টে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছিল— রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং চরমপন্থার প্রসারের কারণে পাকিস্তানের পারমাণবিক অস্ত্র ভবিষ্যতে সন্ত্রাসবাদীদের হাতে পৌঁছাতে পারে।২০১৭ সালে পেন্টাগনের এক উচ্চপদস্থ কর্তা জানান, “পাকিস্তানের পরমাণু অস্ত্রের অবস্থান সম্পর্কে আমরা মোটামুটি ওয়াকিবহাল। যদি প্রয়োজন হয়, খুব দ্রুত অভিযান চালিয়ে সেগুলির দখল নেওয়া সম্ভব।” তাঁর মতে, ইসলামাবাদের রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং সেনা শাসনের ইতিহাস উদ্বেগ বাড়িয়ে তুলেছে।

আরও পড়ুন: US Iran Nuclear Talks : পরমাণু চুক্তিকে ঘিরে ফের উত্তেজনা! ইরান সফরে IAEI-প্রধান, জেদে অনড় তেহরান
বড় মাথাব্যথার নাম ইজ়রায়েল (Donald Trump on Pakistan)
বিশ্লেষকদের দাবি, ওয়াশিংটনের আরেকটি বড় মাথাব্যথার নাম ইজ়রায়েল। কারণ, পাকিস্তান এখনও ইজ়রায়েলকে স্বীকৃতি দেয়নি (Donald Trump on Pakistan)। উপরন্তু, হামাস, হিজ়বুল্লাহ এবং হুথিদের মতো গোষ্ঠীগুলিকে পাকিস্তানের মদতের অভিযোগও রয়েছে। গত ফেব্রুয়ারিতে পাক অধিকৃত কাশ্মীরে হামাস নেতাদের অংশগ্রহণে একটি সভা হয়, যা নিয়ে কড়া নজর ছিল মার্কিন প্রশাসনের। এর পরই গাজায় ইজ়রায়েলি আক্রমণ বেড়ে যায়, আর তাতে যুক্তরাষ্ট্রের মদতের গন্ধ পাচ্ছেন অনেকেই।

পাকিস্তানের পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ (Donald Trump on Pakistan)
‘দ্য গার্ডিয়ান’-এর একটি রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০০৭ সাল থেকেই পেন্টাগন পাকিস্তানের পরমাণু নিরস্ত্রীকরণের বিষয়ে চিন্তাভাবনা শুরু করে। ‘স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট’ বলছে, পাকিস্তানের কাছে অন্তত ১৭০টি পরমাণু অস্ত্র রয়েছে। অন্য দিকে, মার্কিন প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক ক্রিস্টোফার ক্ল্যারি দাবি করেন, পাকিস্তান চাইলে যুদ্ধের সময় ২০০ থেকে ৩০০টি পর্যন্ত পরমাণু বোমা তৈরি করতে পারে।

আরও পড়ুন: Russia Ukraine War : ধৃত রুশপক্ষের চিনা সেনাদের পরিচয় প্রকাশ করলো ইউক্রেন! প্রতিবাদে সরব বেজিং
পাকিস্তানের পরমাণু অস্ত্র মজুত (Donald Trump on Pakistan)
সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয়, পাকিস্তানের পরমাণু অস্ত্রের বেশিরভাগই মজুত রয়েছে বালোচিস্তানে ও খাইবার-পাখতুনখোয়ায়—যেখানে বিচ্ছিন্নতাবাদী ও তালিবান-ঘনিষ্ঠ বিদ্রোহীদের প্রভাব ক্রমেই বাড়ছে (Donald Trump on Pakistan)। আমেরিকার আশঙ্কা, এই অস্ত্র সন্ত্রাসবাদীদের হাতে পড়লে তা ঘুরপথে আফগান তালিবান বা তাদের মিত্রদের হাতে পৌঁছোতে পারে।২০১৭ সালের এক আলোচনায় ইমরান খান নিজেই বলেছিলেন, “দেশকে টুকরো করার পরিকল্পনা চলছে। প্রথমেই পরমাণু অস্ত্র ছিনিয়ে নেওয়া হবে।” বর্তমান রাজনৈতিক পটভূমিতে সেই আশঙ্কা ফের সামনে এসেছে।
কড়া পদক্ষেপ (Donald Trump on Pakistan)
ইরানের সঙ্গে দ্বিতীয় দফার আলোচনা শুরুর প্রাক্কালে পাকিস্তান নিয়েও আমেরিকার অবস্থান স্পষ্ট হতে শুরু করেছে। ট্রাম্প প্রশাসন যদি পাকিস্তানের পরমাণু অস্ত্রভাণ্ডার নিয়ে কড়া পদক্ষেপ নেয়, তা হলে তা দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তা ও কূটনীতি—উভয়ের পক্ষেই বড়সড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠবে