ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল : আজকাল, স্মার্টফোন হাতে নিলেই রিলস দেখার অভ্যেস (Reels Addiction) অনেকের জন্য একধরনের নেশায় পরিণত হয়েছে। কেউ রিলস বানাতে ব্যস্ত, আবার কেউ রিলস দেখেই সময় পার করছেন। কখনও বাসে, ট্রেনে যেতে যেতে দেখছেন, কখনও আবার রাতে ঘুমানোর আগে। কিন্তু এই রিলস দেখার প্রবণতা (Reels Addiction) ধীরে ধীরে চরম বিপদের দিকে ঠেলে দিচ্ছে আমাদের।
পুরস্কার গ্রহণের অভ্যাসে পরিবর্তন (Reels Addiction)
যে রিলস বা শর্ট ভিডিওগুলোর (Reels Addiction) দৃশ্য দ্রুত বদলাচ্ছে, সেগুলো আমাদের মস্তিষ্কে এক ধরনের ‘পুরস্কৃত’ অনুভূতি সৃষ্টি করে। একে বলা যেতে পারে মস্তিষ্কের ‘রিওয়ার্ড সিস্টেম’। যখন আমরা এই ধরনের উদ্দীপনার অভ্যস্ত হয়ে যাই, তখন আমাদের মস্তিষ্ক আরও এরকম উদ্দীপনা চায়। ফলে ভিডিও দেখা একটি আসক্তির রূপ নিতে শুরু করে।
মস্তিষ্কের কার্যকারিতায় পরিবর্তন (Reels Addiction)
শর্ট ভিডিও বা রিলসের প্রতি আসক্তি (Reels Addiction) মস্তিষ্কে বেশ কিছু পরিবর্তন আনতে পারে। বিশেষত, আবেগ নিয়ন্ত্রণ ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে। অর্থাৎ, শর্ট ভিডিও বা রিলস আমাদের মস্তিষ্ককে সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত করে না, তবে এটি মস্তিষ্কের কার্যকারিতাকে প্রভাবিত করে।
মনোযোগের অভাব
আমাদের মস্তিষ্কের ‘প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্স’ অংশটি পরিকল্পনা ও আত্মনিয়ন্ত্রণের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বারবার শর্ট ভিডিও দেখার ফলে এই অংশের কার্যক্ষমতা কমে যেতে পারে, যার ফলে ভিডিও দেখা নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়ে এবং কোন বিষয়ে পরিকল্পনা করা বেশ কঠিন হয়ে পরে।

তথ্য গ্রহণের ধরণ পরিবর্তন
মস্তিষ্ক ধীরে ধীরে ছোট ভিডিও ও খণ্ডিত তথ্য গ্রহণে অভ্যস্ত হয়ে যেতে পারে। এর ফলে দীর্ঘ ও জটিল বিষয়বস্তুতে মনোযোগ ধরে রাখা কঠিন হয়ে যায়। ধীরগতির তথ্য প্রক্রিয়াকরণেও সমস্যা দেখা দিতে পারে।
আবেগ নিয়ন্ত্রণে সমস্যা
অনেকে নেতিবাচক আবেগ যেমন দুঃখ বা ঈর্ষা থেকে মুক্তি পেতে শর্ট ভিডিও দেখেন। তবে, এটি স্বল্প মেয়াদে কাজ করলেও দীর্ঘ মেয়াদে নেতিবাচক আবেগকে আরও বাড়িয়ে দেয়, যা পরবর্তী সময়ে সমস্যা আরও বাড়াতে পারে।
আরও পড়ুন : Spring Disease: ভরা বসন্তে তীব্র গরম, শরীরে বাসা বাঁধতে পারে এসব রোগ!
হাইপারটেনশনের ঝুঁকি
রাতে ঘুমানোর আগে যারা রিলস দেখেন, তাদের মধ্যে হাইপারটেনশনের (Hypertension) ঝুঁকি বেশি থাকে। বিশেষ করে তরুণ ও মধ্যবয়সীদের মধ্যে এটি বেশি দেখা যায়। উচ্চ রক্তচাপের কারণে অল্প বয়সীদের মধ্যে হৃদরোগের ঝুঁকিও বাড়ছে দিন দিন।
অনিদ্রার সমস্যা
ঘুমানোর আগে মোবাইলের স্ক্রিনে দীর্ঘ সময় রিলস দেখলে এটি নার্ভাস সিস্টেম এবং স্মৃতিশক্তির ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। মোবাইলের নীল আলো চোখের মাধ্যমে মস্তিষ্কে প্রবেশ করে, যা মেলাটোনিনের ক্ষরণ কমিয়ে দেয়। মেলাটোনিন হল একটি হরমোন, যা ঘুমের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তাই রাতের বেলায় স্ক্রিন টাইম সীমিত রাখার পরামর্শ দিচ্ছেন গবেষকরা।
আরও পড়ুন : Fatty Liver: মদ্যপান না করেও লিভারে মেদ! আপনি ভুগছেন না তো? কী ভাবে বুঝবেন?
গবেষণায় দেখা গেছে, স্বল্পদৈর্ঘ্যের ভিডিও দেখার কিছু ইতিবাচক দিক থাকতে পারে, তবে অতিরিক্ত দেখা অভ্যাসগত পরিবর্তন আনতে পারে। তবে এই অভ্যাসের প্রভাব সবার ওপর একইভাবে পড়ে না। এটি ব্যক্তির বৈশিষ্ট্য ও ব্যবহারের উপর নির্ভর করে, এবং তাই এটি প্রতিটি মানুষের জন্য আলাদা হতে পারে।