ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: রাজনৈতিক ও আদর্শগত ঘনিষ্ঠতা কখন যে দূরত্বে পরিণত হয়, তার সাম্প্রতিক উদাহরণ হয়ে উঠেছে ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ইলন মাস্কের সম্পর্ক(Elon Musk)। সদ্য ঘোষিত ‘ব্যয় সংক্রান্ত বিল’কে কেন্দ্র করে দুই প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বের মধ্যে যে মতবিরোধ তৈরি হয়েছে, তা আমেরিকার রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক চর্চার বিষয় হয়ে উঠেছে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই বিলকে “বড় সুন্দর” আখ্যা দিলেও, টেসলা কর্তা ইলন মাস্ক এই বিলকে তুলনা করেছেন ‘ঋণের দাসত্ব’-এর সঙ্গে। মাস্কের মতে, এই বিল আইনে পরিণত হলে আমেরিকার অর্থনীতির উপর বিরাট ঋণের বোঝা পড়বে, এবং শেষপর্যন্ত সাধারণ নাগরিকদেরই তার মূল্য দিতে হবে।
মাস্কের খোলা আহ্বান (Elon Musk)
বৃহস্পতিবার নিজের এক্স হ্যান্ডলে মাস্ক লেখেন, “নিজের সেনেটরকে বলুন, কংগ্রেস সদস্যদের বলুন — আমেরিকাকে দেউলিয়া করে তোলা ঠিক নয়! এই বিল বাতিল করুন(Elon Musk)।” পরে আরও একটি পোস্টে মাস্ক দাবি করেন, “এই বিল আমেরিকার ইতিহাসে সর্বাধিক ঋণ বৃদ্ধিকারী বিল হবে। এটা আসলে ঋণের দাসত্বের বিল।” মাস্কের এই বক্তব্য শুধু সামাজিক মাধ্যমেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। তিনি প্রকাশ্যে সাধারণ নাগরিকদের কংগ্রেস সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিল বাতিলের জন্য চাপ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
অতীতের বন্ধুত্বের ইতি? (Elon Musk)
ট্রাম্পের দ্বিতীয় প্রেসিডেন্সির শুরুতে ইলন মাস্ককে প্রায় ‘ঘনিষ্ঠ পরামর্শদাতা’ হিসাবেই দেখা গিয়েছিল। সরকারি দক্ষতা বিষয়ক দফতর-এর গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন মাস্ক(Elon Musk)। তাঁর কাজ ছিল সরকারি ব্যয় সাশ্রয়ে পরামর্শ দেওয়া ও বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা। কিন্তু মাস্কের মতে, “এই একটি বিল আমাদের দীর্ঘদিনের সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে দেবে।” অনেকে মনে করছেন, এই বিলের বিরোধিতা থেকেই মাস্কের পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

বিলের মূল বিষয়বস্তু (Elon Musk)
১,১১৬ পাতার এই বিল মূলত কর কাঠামোর পুনর্গঠনের উপর জোর দিয়েছে(Elon Musk)। এর ফলে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়বেন মার্কিন নাগরিক নন, অথচ কাজ বা ব্যবসার সূত্রে সেখানে বসবাসকারী ব্যক্তি। বিশেষত এইচ-১বি ভিসাধারী ও গ্রিনকার্ডধারীদের উপর বাড়তি করের বোঝা চাপবে। সবচেয়ে বিতর্কিত প্রস্তাব, আমেরিকায় উপার্জিত অর্থ যদি কোনও বিদেশি নাগরিক তাঁর নিজ দেশে পাঠাতে চান, তবে তার উপর ৫ শতাংশ কর আরোপ করা হবে। করের কোনও ন্যূনতম সীমা ধরা হয়নি, অর্থাৎ যতই অর্থ পাঠানো হোক, ততই কর দিতে হবে। মার্কিন নাগরিকদের ক্ষেত্রে এই কর প্রযোজ্য হবে না, যা অভিবাসী সম্প্রদায়ের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে।

আরও পড়ুন: Earthquake In Karachi : ভূমিকম্পে ফাটলো করাচি জেলের দেয়াল ! জেল থেকে পালালো দু-শোর বেশি বন্দি
প্রশাসনের প্রতিক্রিয়া (Elon Musk)
হোয়াইট হাউস প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লিভিট স্পষ্ট জানিয়েছেন, “প্রেসিডেন্ট জানেন মাস্কের অবস্থান কী(Elon Musk)। কিন্তু এই ধরনের সমালোচনায় প্রেসিডেন্ট তাঁর সিদ্ধান্ত বদলাবেন না। তিনি এই বিলের বিষয়ে অটল।” তবে প্রশাসনের অন্দরেই অনেকে মনে করছেন, ইলন মাস্কের মতো উচ্চপ্রোফাইল সমালোচকের বিরোধিতা এই বিলের রাজনৈতিক ভবিষ্যতের উপর প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষ করে, বিরোধী ডেমোক্র্যাটরা ইতিমধ্যেই মাস্কের মন্তব্যকে হাতিয়ার করে ট্রাম্প প্রশাসনের উপর চাপ বাড়াতে শুরু করেছে।
আমেরিকার কর ব্যবস্থা (Elon Musk)
ট্রাম্প-মাস্ক সম্পর্কের এই টানাপড়েন ভবিষ্যতের রাজনৈতিক সমীকরণে বড় রদবদল আনতে পারে(Elon Musk)। প্রযুক্তি ও ব্যবসা জগতের অন্যতম মুখপাত্র মাস্কের এই অবস্থান আমেরিকার কর ব্যবস্থা, অভিবাসন নীতি ও রাজনৈতিক মেরুকরণের আলোচনায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে। ট্রাম্প এই বিলকে রাজনৈতিক পুঁজি হিসেবে ব্যবহার করছেন ঠিকই, কিন্তু মাস্কের মতপ্রকাশ তা চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলতে পারে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞেরা।