ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: এই মুহূর্তে খবরের শিরোনামে হরিয়ানার ইউটিউবার জ্যোতি মলহোত্রা (Ex-Diplomat Madhuri Gupta)। পাকিস্তানি গুপ্তচরদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছেন জ্যোতিকে। তারপরেই ভারতের বুকে ছড়িয়ে থাকা অসংখ্য পাক গুপ্তচরের কিছু অংশ এসেছে পুলিশের হাতে। কিন্তু এরাই কি প্রথম? এর আগেও কি বিশ্বাসঘাতকতার ছবি দেখেনি ভারত? বর্তমান পরিস্থিতে দাঁড়িয়ে ফিরল দেশের প্রাক্তন কূটনীতি মাধুরী গুপ্তার স্মৃতি। সুফিবাদ আর ঊর্দু কবিতার লোভ তাঁকে পরিণত করেছিল দেশপ্রেমী থেকে দেশদ্রোহীতে।
দেশপ্রেমী থেকে দেশদ্রোহী (Ex-Diplomat Madhuri Gupta)
২০১০ সালের গোড়ার দিক। মাত্র দেড় বছর আগেই দেশে ঘটে গিয়েছে ২৬/১১’র সেই ভয়াবহ হামলা(Ex-Diplomat Madhuri Gupta)। এমন এক সময়ে তৎকালীন গোয়েন্দা প্রধান রাজীব মাথুরের কাছে একটি খবর আসে। জানা যায়, ইসলামাবাদ হাইকমিশনে মাধুরী গুপ্তা নামে এক আধিকারিক রয়েছেন। তিনি হাই কমিশনে নিযুক্ত মধ্য স্তরের কূটনীতিক। মাধুরী ইন্টার সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্স অর্থাৎ আইএসআইয়ের সঙ্গে গোপনে যোগাযোগ করছেন। এই ‘গোপন যোগাযোগ’-ই ভাবিয়ে তোলে গোয়েন্দা প্রধানকে। সদ্য ২৬/১১ হয়েছে, তার জন্য দায়ী করা হয়েছে গোয়েন্দা ব্যর্থতাকে। কিন্তু আর কোনও গোয়েন্দা ব্যর্থতার ভার বহনের ক্ষমতা তখন ভারতের ছিল না। তাই এই বিষয়ে জোর কদমে কাজ শুরু করেন রাজীব মাথুর।
অভিযোগ প্রমাণিত (Ex-Diplomat Madhuri Gupta)
মাধুরীকে নিয়ে প্রাথমিক কিছু তথ্য পেতেই মাথুর রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস উইং প্রধান কেসি ভার্মা এবং স্বরাষ্ট্র সচিব জি কে পিল্লাইকে জানান(Ex-Diplomat Madhuri Gupta)। সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় আরও ২ সপ্তাহ মাধুরীর উপর নাজরদারি চালানো হবে। এই সময়ের মধ্যে তাঁরা মাধুরীর কাছে ইচ্ছাকৃত ভুল তথ্য পৌঁছে দেন। সেই সব তথ্য ওই আধিকারিক আইএসআইকে দিলে তা ভুল প্রমাণিত হয়।এরমধ্যেই ২০১০-এর শেষের দিকে ভুটানে অনুষ্ঠিত হতে চলা সার্ক শীর্ষ সম্মেলনে মিডিয়া সম্পর্কিত সহায়তার অজুহাতে দিল্লিতে তলব করা হয় মাধুরীকে। ২১ এপ্রিল দিল্লিতে আসেন তিনি। রাতে ওয়েস্ট দিল্লির বাসভবনে থাকেন, পরের দিন সকালে এমইএ অফিসে রিপোর্ট করেন। আগে থেকেই প্রস্তুত ছিলেন পুলিশ ও গোয়েন্দারা। তাঁরা তৎক্ষণাৎ মাধুরী গুপ্তাকে আটক করে।
আরও পড়ুন- Ashoka University professor:সুপ্রিম কোর্টে স্বস্তি অশোকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকের, তদন্তে সিট
হানিট্র্যাপের শিকার (Ex-Diplomat Madhuri Gupta)
২০১০ সালের ২২ এপ্রিল মাধুরীকে গ্রেফতার করা হয়(Ex-Diplomat Madhuri Gupta)। অনেক জিজ্ঞসাবাদের পর গোয়েন্দারা জানতে পারেন, মাধুরী হানিট্র্যাপের শিকার। এক পাকিস্তানি যুবকের প্রেমে পড়ে তিনি এই কাণ্ড ঘটিয়েছেন। ৩০ বছর বয়সী সুদর্শন জামশেদ ওরফে জিম ছিল পাক অপারেটিভ।তার প্রতি ভাললাগা থেকেই মাধুরীর এহেন পতন।জিজ্ঞাসাবাদে উঠে আসে আরও এক হ্যান্ডলার মুদাসসর রাজা রানার নাম। যিনি তৎকালীন পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রেহমান মালিকের ব্যাচমেট ছিলেন। তিনি এই হানিট্র্যাপের সমন্বয় ঘটিয়েছিলেন। প্রথমে একজন মহিলা সাংবাদিকের মাধ্যমে মাধুরীর সঙ্গে যোগাযোগ, তারপর সন্ত্রাসী সংগঠন জৈশ-ই-মহম্মদের প্রধান মৌলানা মাসুদ আজহারের একটি বিরল বই খুঁজে পেতে মাধুরীকে সাহায্য করে আস্থা অর্জন করেছিল জিম।
আরও পড়ুন- Indian-Origin Entrepreneur: আমেরিকায় স্বদেশীয়র হামলায় নিহত ভারতীয় বংশোদ্ভূত উদ্যোক্তা
সুফিবাদ ও ভালোবাসা (Ex-Diplomat Madhuri Gupta)
তদন্তে আরও জানা যায়, জামশেদের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে মাধুরী সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে তাকে বিয়ে করবেন। বেড়াতে যাবেন ইস্তানবুলে। তাঁর চিঠিপত্র প্রায়শই সুফিবাদ, রুমি এবং উর্দু সম্পর্কে আবর্তিত হত, যা জামশেদ কাজে লাগাতেন।রানার নির্দেশে মাধুরী গুপ্তা ২০১০ সালের মার্চ মাসে জম্মু ও কাশ্মীর গিয়ে বার্ষিক পরিকল্পনা প্রতিবেদন এবং প্রস্তাবিত ৩১০ মেগাওয়াট জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের বিবরণ সংগ্রহ করার চেষ্টা করেছিলেন। মাধুরী গুপ্তাকে ২০১২ সালে প্রথমবারের জন্য অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টের ৩ এবং ৫ নম্বর ধারায় অভিযুক্ত করা হয়। প্রাথমিকভাবে তিনি ২১ মাস তিহার জেলে কাটিয়ে জামিন পান। এরপর ২০১৮ সালে সিটি আদালত তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করে। ২০২১ সালের অক্টোবরে ৬৪ বছর বয়সে মারা যান মাধরী গুপ্তা।