ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: গ্রেফতার প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী (Ex-Mauritius PM Arrested)। মরিশাসের পুলিশ রবিবার প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী প্রবীন্দ জুগনাথকে মানি লন্ডারিং মামলায় গ্রেফতার করেছে। একইসঙ্গে অন্যান্য অভিযুক্তদের কয়েকজনের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে বিপুল পরিমাণ নগদ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে।
৬৩ বছর বয়সী প্রবীন্দ জুগনাথকে শনিবার তার স্ত্রী কবিতা জুগনাথের সঙ্গে আটক করা হয়। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, তাদের কয়েক ঘণ্টা ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। পরে কবিতা জুগনাথকে ছেড়ে দেওয়া হলেও রবিবার ভোরে প্রবীন্দ জুগনাথকে আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রেফতার করা হয়।
জুগনাথের আইনজীবীর প্রতিক্রিয়া (Ex-Mauritius PM Arrested)
প্রবীন্দ জুগনাথের আইনজীবী রউফ গুলবুল সাংবাদিকদের জানান, তার মক্কেল সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন (Ex-Mauritius PM Arrested)। তিনি বলেন, “তিনি তার অবস্থান পরিষ্কার করেছেন এবং সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।” প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর রবিবার আদালতে তোলা হয় বলে জানা গেছে।
বিপুল পরিমাণ নগদ টাকা ও বিলাসবহুল সামগ্রী উদ্ধার (Ex-Mauritius PM Arrested)
এএফপির হাতে আসা এক পুলিশ রিপোর্ট অনুযায়ী, এক সন্দেহভাজনের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে পুলিশ বিপুল পরিমাণ নগদ টাকা ও বিলাসবহুল সামগ্রী উদ্ধার করেছে (Ex-Mauritius PM Arrested)। ওই ব্যক্তি একটি স্থানীয় বিনোদন সংস্থার কর্মী বলে জানা গেছে। পুলিশের দাবি, উদ্ধার হওয়া নথিপত্রে প্রবীন্দ ও কোবিতা জুগনাথের নাম রয়েছে। এছাড়া দামী ঘড়ি ও বিভিন্ন দেশের মুদ্রার বান্ডিলও উদ্ধার হয়েছে। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, একজন রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ীর বাড়িতেও তল্লাশি চালিয়ে স্যুটকেস ভর্তি টাকা উদ্ধার করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: Dhaka Theatre Festival: লালন স্মরণোৎসব, বসন্ত উৎসবের পর এবার বন্ধ বাংলাদেশে নাট্য উৎসব?
আর্থিক অপরাধ কমিশনের নির্দেশ (x-Mauritius PM Arrested)
মরিশাসের আর্থিক অপরাধ কমিশন (Financial Crimes Commission) পুলিশকে আগেই নির্দেশ দিয়েছিল যে, যদি জুগনাথ দম্পতি ও অন্য দুই অভিযুক্ত দেশ ছাড়ার চেষ্টা করেন, তাহলে তাদের আটক করা হবে (Ex-Mauritius PM Arrested)। শনিবার কমিশনের পক্ষ থেকে এই নির্দেশ জারি করা হয়। কমিশন জানিয়েছে, তারা মানি লন্ডারিং সংক্রান্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ মামলার তদন্ত করছে।
চাগোস দ্বীপপুঞ্জ নিয়ে বিতর্কিত আলোচনা
২০১৭ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত মরিশাসের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন প্রবীন্দ জুগনাথ (x-Mauritius PM Arrested)। তার পরিবার দেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। তিনি ব্রিটেনের সঙ্গে একটি ঐতিহাসিক চুক্তি করেছিলেন, যার ফলে মরিশাস চাগোস দ্বীপপুঞ্জের ওপর সার্বভৌমত্ব পুনরুদ্ধার করে। তবে ২০২৪ সালের নভেম্বরের সাধারণ নির্বাচনে প্রবীণ জুগনাথ ও তার দল ‘সোশ্যালিস্ট মুভমেন্ট’ পরাজিত হয়। এই নির্বাচনে মধ্য-বামপন্থী নেতা নবীন রামগুলাম জয়ী হন এবং তৃতীয়বারের জন্য মরিশাসের প্রধানমন্ত্রী হন। নতুন সরকার চাগোস দ্বীপপুঞ্জ নিয়ে ব্রিটেনের সঙ্গে নতুন করে আলোচনায় বসেছে। তারা আরও বেশি আর্থিক ক্ষতিপূরণ চাইছে এবং চুক্তির শর্ত পুনরায় নির্ধারণের চেষ্টা করছে।
ডিয়েগো গার্সিয়া দ্বীপে সামরিক ঘাঁটি চুক্তি
এই চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, ডিয়েগো গার্সিয়া দ্বীপে অবস্থিত সামরিক ঘাঁটি ব্রিটেনের অধীনে থাকবে। মরিশাস ও ব্রিটেন উভয়েই জানিয়েছে, এই চুক্তির চূড়ান্ত শর্ত নির্ধারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতামত গুরুত্বপূর্ণ হবে। বর্তমানে ব্রিটেন এই ঘাঁটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে লিজ দিয়েছে এবং এটি এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে আমেরিকার অন্যতম প্রধান সামরিক ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
নির্বাচনী প্রচারে অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি
গত নির্বাচনী প্রচারের সময়, উভয় রাজনৈতিক দলই সাধারণ মানুষের জীবনের মান উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। দেশের অর্থনৈতিক বৃদ্ধি ভালো হলেও খরচের চাপ বেড়ে যাওয়ায় সাধারণ মানুষ সমস্যায় রয়েছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে, নবীন রামগুলামের সরকার এখন অর্থনৈতিক নীতিগুলি পুনর্বিবেচনা করছে এবং চাগোস দ্বীপপুঞ্জ সংক্রান্ত চুক্তি নিয়ে পুনরায় আলোচনার জন্য উদ্যোগী হয়েছে।
গ্রেফতার নিয়ে রাজনৈতিক অস্থিরতা
প্রবীন্দ জুগনাথের গ্রেফতারের পর দেশজুড়ে রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। তার দল দাবি করেছে, এই গ্রেফতার রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। অনেকে মনে করছেন, নতুন সরকার রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে এই পদক্ষেপ নিয়েছে।
অন্যদিকে, সরকারি সূত্র বলছে, এটি একটি স্বচ্ছ তদন্ত এবং আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এখন দেখার বিষয়, আদালতে প্রবীন্দ জুগনাথের ভাগ্য কী হয় এবং এই মামলা মরিশাসের রাজনীতিতে কী প্রভাব ফেলে।