ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: অবসরপ্রাপ্ত আইডিএফ ডেপুটি চিফ অফ স্টাফ এবং নবগঠিত রাজনৈতিক দল দ্য ডেমোক্র্যাটসের প্রধান ইয়ার গোলান ইজরায়েলকে (Feiglin Shocking Remarks) “শখের বশে শিশু হত্যা” করার অভিযোগে অভিযুক্ত করার পর এই মন্তব্য এসেছে।
গাজার শিশুদের বিরুদ্ধে ঘৃণ্য মন্তব্য (Feiglin Shocking Remarks)
ইজরায়েলের কট্টর ডানপন্থী রাজনীতিবিদ মোশে ফেইগলিন (Feiglin Shocking Remarks) বুধবার এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে বলেন, “গাজার প্রতিটি শিশু, প্রতিটি নবজাতকই শত্রু।” ইজরায়েলি টিভি চ্যানেল ১৪-এ তিনি বলেন, “আমাদের শত্রু হামাস নয়, এমনকি হামাসের সামরিক শাখাও নয়। গাজার প্রতিটি শিশু আমাদের শত্রু। গাজা দখল করতে হবে, সেখানে বসতি গড়ে তুলতে হবে এবং একজন গাজার শিশুও বেঁচে থাকতে দেওয়া যাবে না। এটাই একমাত্র জয়।”
ফেইগলিনের এই উস্কানিমূলক মন্তব্য সামনে আসে এমন এক সময়ে, যখন ইজরায়েলের প্রাক্তন সেনা উপপ্রধান ও ‘দ্য ডেমোক্র্যাটস’ নামে নতুন গঠিত রাজনৈতিক দলের প্রধান ইয়াইর গোলান বলেন, “ইজরায়েল এখন বাচ্চাদের হত্যা করছে নেশার মতো।”
ইজরায়েল সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র সমালোচনা (Feiglin Shocking Remarks)
এক সাংবাদিক সম্মেলনে গোলান (Feiglin Shocking Remarks) বলেন, “ইজরায়েল এখন এমন এক পথে এগোচ্ছে, যাতে এটি দক্ষিণ আফ্রিকার মতো একটি একঘরে রাষ্ট্রে পরিণত হবে, যদি আমরা সুস্থবুদ্ধি নিয়ে চলতে না শুরু করি।” তিনি আরও বলেন, “একটি সুস্থ দেশ কখনো সাধারণ নাগরিকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে না, বাচ্চাদের হত্যা করে না, বা লক্ষ লক্ষ মানুষকে উচ্ছেদ করে না।” তিনি বর্তমান নেতাদের দায়ী করেন “প্রতিহিংসাপরায়ণ, নৈতিকতাবিহীন এবং সংকটে দেশ পরিচালনার অযোগ্য” হওয়ার জন্য। তাঁর মতে, এর ফলে ইজরায়েলের অস্তিত্বই আজ বিপন্ন।
আরও পড়ুন: Canada Slashes Permit: কানাডায় ভারতীয়দের জন্য স্টাডি পারমিটে বড় পরিবর্তন, ৩১% কমেছে অনুমোদন
নেতানিয়াহুর পাল্টা প্রতিক্রিয়া
ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু, ইয়াইর গোলানের বক্তব্যকে “উসকানিমূলক” এবং “রক্তচাপ বৃদ্ধি করার মতো” বলে তীব্র নিন্দা করেন। তিনি বলেন, “আমি ইয়াইর গোলানের এই বেপরোয়া উসকানির তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি, যা আমাদের বীর সৈন্যদের এবং ইজরায়েল রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বলা হয়েছে। আইডিএফ পৃথিবীর সবচেয়ে নৈতিক সেনাবাহিনী, এবং আমাদের সেনারা আমাদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য লড়াই করছে।”
গাজায় হামলা ও মৃত্যুর মিছিল
নেতানিয়াহু সোমবার বলেন, গাজা পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনবে ইজরায়েল, যাতে হামাসকে পরাস্ত করে সব বন্দীকে উদ্ধার করা যায়। গত চার দিনে গাজায় ইজরায়েলি হামলায় ৬০০-র বেশি প্যালেস্তিনিয় নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন গাজার ফিল্ড হাসপাতালগুলোর প্রধান ডঃ মারওয়ান আল-হামস।
প্যালেস্টাইনের স্বাস্থ্য মন্ত্রকের দাবি, ৭ অক্টোবরের হামলার পর ইজরায়েল যে অভিযান শুরু করেছে, তাতে এখন পর্যন্ত প্রায় ৫৩,০০০ মানুষ নিহত হয়েছেন গাজায়। আহত এবং পঙ্গু হয়ে যাওয়া মানুষের সংখ্যাও বিপুল।
আন্তর্জাতিক মহলের প্রতিক্রিয়া
গাজার ক্রমবর্ধমান বেসামরিক হতাহতের কারণে ইজরায়েলের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সমালোচনা বাড়ছে। ব্রিটেন মঙ্গলবার ইজরায়েলের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য আলোচনা বন্ধ রেখেছে, ইজরায়েলি রাষ্ট্রদূতকে ডেকে পাঠিয়েছে এবং ওয়েস্ট ব্যাঙ্কের বসতিগুলোর বিরুদ্ধে নতুন নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করেছে।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার বলেছেন, সাম্প্রতিক সামরিক উত্তেজনা দেখে তিনি “ভীত”। ব্রিটেনের বিদেশমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি বলেন, এই হামলা বন্দীদের উদ্ধার করতেও কোনও সাহায্য করছে না। তিনি ইজরায়েলকে গাজায় মানবিক ত্রাণ প্রবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার আহ্বান জানান।
অবরোধে খাদ্য ও ওষুধ সংকট
আন্তর্জাতিক চাপে সোমবার পাঁচটি জাতিসংঘের সাহায্যবাহী ট্রাক গাজায় প্রবেশ করে, যেগুলিতে শিশুখাদ্য ছিল। ২ মার্চ থেকে গাজায় খাদ্য ও ত্রাণ সামগ্রী প্রবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। লক্ষ লক্ষ গাজাবাসী আজ খাদ্য, ওষুধ ও নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর অভাবে দিন কাটাচ্ছেন।