ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: মার্কিন-চীন শুল্ক বিরোধের ফলে বিশ্বব্যাপী বাজারে ধস নেমেছে, এশিয়া ও আমেরিকা ব্যাপক পতনের সম্মুখীন হচ্ছে (Global Markets Shaken)। জাপানে ফিউচার ট্রেডিং বন্ধ রয়েছে, অপরিশোধিত তেল, সোনা ও রূপার দাম কমেছে।
ভারতীয় শেয়ারবাজারে প্রবল ধস (Global Markets Shaken)
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যকার শুল্ক যুদ্ধ নতুন মাত্রা নেওয়ার পর সারা বিশ্বের আর্থিক বাজারে এক নজিরবিহীন টালমাটাল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে (Global Markets Shaken)। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নতুন শুল্ক ঘোষণা করার পর চীনের পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় বাজারে ব্যাপক ধস নেমেছে।
এপ্রিল ৭ তারিখ সকালেই ভারতের শেয়ারবাজারে বড়সড় পতন দেখা যায়। সেনসেক্স ও নিফটি দুই সূচকই প্রায় ৩ শতাংশ করে পড়ে যায়। চীনের পাল্টা শুল্ক ঘোষণার পরে বিশ্ব বাণিজ্য যুদ্ধের আশঙ্কা ফের জেগে ওঠে, যার জেরে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে প্রবল আতঙ্ক ছড়ায়।
সকাল থেকেই শেয়ারবাজারে অস্থিরতা ছিল চোখে পড়ার মতো। সেনসেক্স প্রায় ৩,৯০০ পয়েন্ট পড়ে যায়, যা প্রায় ৫ শতাংশের পতন। নিফটি সূচক ৫ শতাংশ পড়ে গিয়ে দাঁড়ায় ২১,৭৪৩-এ, যা গত ১০ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। নিফটি ৫০-র সব শেয়ার লাল চিহ্নে শেষ করে। প্রতি একটিতে দাম বাড়লেও, তিনটি শেয়ার পড়ে যায়।
এশিয়ার শেয়ারবাজারে নজিরবিহীন পতন (Global Markets Shaken)
শুধু ভারত নয়, গোটা এশিয়াতেই এক ঐতিহাসিক পতনের সাক্ষী থাকল বাজার (Global Markets Shaken)। বিভিন্ন সূচক ৮ শতাংশের বেশি পড়ে যায়। নিফটি ৫০ সূচক প্রায় ৯০০ পয়েন্ট পড়ে যায়, যা ভারতের বাজারের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ বাড়িয়েছে। হংকং-এর হ্যাং সেং সূচক ১০ শতাংশের বেশি ভেঙে পড়ে। শাংহাই কম্পোজিট সূচক পড়ে যায় ৫ শতাংশ। সিঙ্গাপুর ও জাপানের বাজারেও ৮ শতাংশের বেশি পতন হওয়ায় জাপানের নিক্কেই ফিউচারস ট্রেডিং বন্ধ করে দেওয়া হয়, কারণ তা নিম্নসীমায় পৌঁছে গিয়েছিল।
আরও পড়ুন: Apple I Phone: ট্রাম্পের শুল্ক-বাণে দামবৃদ্ধির সম্ভাবনা, আমেরিকায় পাঁচটি বিমানে করে উড়ে গেল আইফোন!
মার্কিন বাজারে কোভিড-পরবর্তী সবচেয়ে খারাপ অবস্থা (Global Markets Shaken)
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও শেয়ারবাজারে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে (Global Markets Shaken)। ডাও ফিউচারস ১,০০০ পয়েন্ট পড়ে যায়। এসঅ্যান্ডপি ও ন্যাসডাক ফিউচারস পড়ে ৩ শতাংশ করে। মাত্র দুই দিনে মার্কিন বিনিয়োগকারীদের প্রায় ৪২০ লক্ষ কোটি ডলারের ক্ষতি হয়েছে। ডাও সূচক পড়েছে ২ শতাংশ, ন্যাসডাক তার ৫২-সপ্তাহের সর্বনিম্ন স্তরের মাত্র ৩০০ পয়েন্ট দূরে। রাসেল ২০০০ সূচক মন্দার পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছে, এবং ডলার ইনডেক্স এসে ঠেকেছে ১০৩-এ। দশ বছরের মার্কিন ট্রেজারি বন্ডে সুদের হার ৩.৯৮ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
পণ্যের বাজারেও ধস, তেলের দাম পড়ল ২০২১ সালের নিচে
শুল্ক যুদ্ধের প্রভাব পণ্যের বাজারেও পড়েছে। ব্রেন্ট ক্রুডের দাম নেমে এসেছে ব্যারেল প্রতি ৬৩.০৩ ডলারে, যা ২০২১ সালের পর সর্বনিম্ন। WTI ক্রুড-এর দাম পড়ে গিয়ে দাঁড়িয়েছে ৬১ ডলার। গত চার দিনে তেলের দাম ১৬ শতাংশের বেশি পড়ে গিয়েছে। সোনা ও রূপোর দামেও পতন দেখা গিয়েছে। COMEX গোল্ড নেমে এসেছে ৩,০০০ ডলারে, যা এক মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। রূপোর দাম পড়ে দাঁড়িয়েছে ৩০ ডলার, যা চার মাসের সর্বনিম্ন।
চীনের কড়া জবাব, নতুন শুল্ক আরোপ ও রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ
ট্রাম্পের শুল্ক ঘোষণার পাল্টা জবাব হিসেবে চীন মার্কিন পণ্যের ওপর ৩৪ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে, যা এপ্রিল ১০ থেকে কার্যকর হবে। একই সঙ্গে চীন সাতটি বিরল খনিজের রপ্তানি নিষিদ্ধ করেছে, অ্যান্টি-ডাম্পিং তদন্ত শুরু করেছে এবং ১১টি মার্কিন প্রতিরক্ষা সংস্থাকে কালো তালিকাভুক্ত করেছে। আরও ১৬টি মার্কিন সংস্থার ওপর রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়েছে, এবং মার্কিন বার্লি আমদানি বন্ধ করে দিয়েছে।
আরও পড়ুন: PM Modi: লঙ্কার মাটিতে ভারতবিরোধী কার্যকলাপ নয়, মোদীকে আশ্বাস দিশানায়েকের
ট্রাম্পের হুঁশিয়ারি ও ফেডারেল রিজার্ভকে তোপ
চীনের এই পদক্ষেপে ট্রাম্প প্রকাশ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দেন, তিনি কোনও শুল্ক প্রত্যাহার করবেন না। উল্টে তিনি ফেডারেল রিজার্ভকে সুদের হার কমানোর দাবি জানিয়েছেন। তবে ফেড প্রধান জেরোম পাওয়েল হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, ট্রাম্পের এই শুল্কনীতির ফলে মুদ্রাস্ফীতি বাড়তে পারে ও অর্থনৈতিক বৃদ্ধি ব্যাহত হতে পারে।
বিশ্বনেতাদের প্রতিক্রিয়া, সমালোচনায় ট্রাম্প
বিশ্বের একাধিক প্রভাবশালী ব্যক্তি ট্রাম্পের শুল্কনীতির কড়া সমালোচনা করেছেন। ওয়ারেন বাফেট ও এলন মাস্ক, দুই অর্থনৈতিক বিশ্লেষক ও উদ্যোক্তাই ট্রাম্পের নীতিকে বিশ্ববাণিজ্যের পক্ষে বিপজ্জনক বলে মন্তব্য করেছেন। হংকং সরকারের পক্ষ থেকেও এই শুল্ক যুদ্ধের নিন্দা করে বলা হয়েছে, এটা বিশ্ববাণিজ্যের স্থিতিশীলতার পক্ষে হুমকি।
এই মুহূর্তে বিশ্ববাজারে যে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে, তা যে আরও কিছুদিন চলতে পারে, সে বিষয়ে নিশ্চিত বিশ্লেষকরা। আর এই সংঘাতের প্রভাব কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, এখন সেটাই দেখার।