Last Updated on [modified_date_only] by Debu Das
ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: ভারতীয় সেনাবাহিনীর (INDIAN ARMY) ইতিহাসে যে কয়েকটি রেজিমেন্ট অসাধারণ সাহসিকতা, অনমনীয়তা এবং শত্রুপক্ষের হৃদয়ে ভয় সঞ্চারের জন্য বিশেষভাবে খ্যাত, তাদের মধ্যে অন্যতম হলো গোর্খা রেজিমেন্ট (Gorkha Regiment)। “যে দেশের জন্য লড়ি, প্রাণ দিতেও প্রস্তুত” — এই মূলমন্ত্রে বিশ্বাসী গোর্খারা শুধু একজন সৈনিক নয়, একেকজন জীবন্ত যুদ্ধযন্ত্র। ভারতীয় ভূখণ্ডের পাহাড়ি সীমান্তরেখা হোক বা মরুভূমি, শত্রুর মুখোমুখি হয়ে দৃষ্টান্ত গড়ার ইতিহাস রচনা করেছে এই সাহসী যোদ্ধারা।
গোর্খা রেজিমেন্টের ইতিহাস (Gorkha Regiment)
গোর্খা রেজিমেন্টের সূচনা হয় ১৮১৫ সালে, যখন ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এবং নেপালের গোর্খাদের মধ্যে আঙ্গ্ল-নেপাল যুদ্ধ শেষ হয়(Gorkha Regiment)। সেই যুদ্ধের পর ব্রিটিশরা গোর্খাদের অদম্য সাহসিকতায় মুগ্ধ হয়ে তাদের নিজেদের সেনাবাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেয়। প্রথম গোর্খা ইউনিট হিসেবে ১৮১৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় Nasiri Regiment, যা পরবর্তীতে 1st Gorkha Rifles-এ রূপান্তরিত হয়। স্বাধীনতার আগে পর্যন্ত গোর্খা রেজিমেন্ট ব্রিটিশ ভারতীয় সেনার অংশ ছিল এবং প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে এদের অসামান্য অবদান স্মরণীয় হয়ে আছে।ভারত স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৪৭ সালে নেপাল, ভারত এবং ব্রিটেনের মধ্যে হওয়া এক চুক্তি অনুযায়ী ব্রিটিশ সেনায় ৪টি এবং ভারতীয় সেনায় ৬টি গোর্খা রেজিমেন্ট রাখা হয়। পরবর্তীতে ভারত ৭ম ও ৯ম গোর্খা রেজিমেন্ট প্রতিষ্ঠা করে। বর্তমানে ভারতের সেনাবাহিনীতে ১st থেকে 11th Gorkha Rifles পর্যন্ত মোট ৭টি গোর্খা রেজিমেন্ট রয়েছে।
‘কায়লা না মারো, ঘুসি দিও!’ – যুদ্ধক্ষেত্রে গোর্খাদের পরিচয়(Gorkha Regiment)
গোর্খাদের একটাই পরিচয়—তারা ভয় পান না, পিছু হঠেন না(Gorkha Regiment)। তাঁদের সবচেয়ে পরিচিত অস্ত্র হলো খুকরি — একটি বাঁকানো ছুরি যা তাদের সাহসিকতার প্রতীক হয়ে উঠেছে। বলা হয়, খুকরি একবার খোলা হলে তা রক্ত পান না করে ফের গুটানো হয় না।গোর্খা রেজিমেন্টের সৈন্যদের শারীরিক সক্ষমতা, পাহাড়ি পরিবেশে অভিযোজিত জীবনধারা এবং অবিশ্বাস্য যুদ্ধদক্ষতা তাঁদের ভারতীয় সেনাবাহিনীর এক অন্যতম ফ্রন্টলাইন ফোর্সে পরিণত করেছে।

বিশ্বযুদ্ধ থেকে কার্গিল সর্বত্র গোর্খা বীর(Gorkha Regiment)
প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে গোর্খাদের অসাধারণ ভূমিকার কারণে তাঁদের বহু আন্তর্জাতিক সম্মান প্রদান করা হয়, যার মধ্যে রয়েছে বহু Victoria Cross — ব্রিটিশ সেনার সর্বোচ্চ সাহসিকতার পুরস্কার।স্বাধীন ভারতের ইতিহাসেও গোর্খাদের অবদান অনস্বীকার্য(Gorkha Regiment)। ১৯৬২-র ভারত-চীন যুদ্ধ, ১৯৬৫ ও ১৯৭১ সালের ভারত-পাক যুদ্ধ, এবং সর্বশেষ ১৯৯৯-এর কার্গিল যুদ্ধে গোর্খা রেজিমেন্টের সাহসিকতা প্রশংসনীয়। কার্গিল যুদ্ধের সময় ১/১১ গোর্খা রাইফেলস (১st Battalion, 11th Gorkha Rifles) ‘হামরেজ’, ‘খালুবার’, ও ‘তোলোলিং’ পাহাড় পুনরুদ্ধারে মুখ্য ভূমিকা পালন করে। এই যুদ্ধে লেফটেন্যান্ট বিক্রম বাত্রা (যিনি পরবর্তীতে মরণোত্তর পরমবীর চক্র পান) গোর্খা রেজিমেন্টের সঙ্গে অভিযানে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।

পুরস্কার ও সম্মান(Gorkha Regiment)
ভারতীয় সেনাবাহিনীর সর্বোচ্চ সম্মান পরমবীর চক্র-সহ মহাবীর চক্র, বীর চক্র প্রভৃতি একাধিক সাহসিকতার পুরস্কার গোর্খা রেজিমেন্টের সেনানীদের প্রাপ্য(Gorkha Regiment)।
১) পরমবীর চক্র: ৩ জন
২) মহাবীর চক্র: ৩২ জন+
৩) বীর চক্র: শতাধিক
এই পরিসংখ্যানই বলে দেয়, মাঠে ও পাহাড়ে গোর্খারা কতটা ভয়হীন।

গোর্খা রেজিমেন্টের জীবনযাপন ও ট্রেনিং(Gorkha Regiment)
গোর্খা রেজিমেন্টে যোগদান করার জন্য শারীরিক, মানসিক এবং কৌশলগত দিক থেকে কঠিন প্রশিক্ষণের মধ্য দিয়ে যেতে হয়(Gorkha Regiment)। প্রশিক্ষণ চলে দেহাতি কায়দায় — পাহাড় চড়ানো, ভারী ব্যাগ নিয়ে দৌড়, হাতে-হাতে যুদ্ধ প্রশিক্ষণ, এবং অবিচল মানসিক দৃঢ়তার প্রশিক্ষণ।এদের অধিকাংশই নেপালের পাহাড়ি অঞ্চল, দার্জিলিং, কালিম্পং, সিকিম, উত্তরাখণ্ড এবং আসামের গোর্খা জনগোষ্ঠী থেকে আসেন।
গর্ব ও ঐতিহ্য(Gorkha Regiment)
গোর্খা রেজিমেন্ট শুধু এক রেজিমেন্ট নয়, এটা এক সাহসিকতা ও জাতীয়তার ঐতিহ্য(Gorkha Regiment)। এই রেজিমেন্টের প্রতিটি সদস্য বিশ্বাস করেন,”কাফের হুন্নু ভান্ডা মারনু রামরো” অর্থাৎ, “Better to die than to be a coward”—এই বিশ্বাসই তাঁদের জীবনদর্শন। প্রাক্তন সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল স্যাম মানেকশ বলেন, “If a man says he is not afraid of dying, he is either lying or he is a Gorkha.”
ঐতিহাসিক স্লোগান
ভারতের গোর্খা রেজিমেন্ট শুধু একটি সামরিক ইউনিট নয়, এটি এক অনন্য গর্ব, ইতিহাস, এবং আত্মত্যাগের প্রতীক(Gorkha Regiment)। এই রেজিমেন্ট প্রতিবার প্রমাণ করেছে যে তারা শুধু পাহাড়ে নয়, যে কোনও যুদ্ধক্ষেত্রে লড়াই করার জন্য প্রস্তুত।তাদের ঐতিহাসিক স্লোগান “जय महाकाली, आयो गोर्खाली” আজও ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রতিটি শত্রুর মনে ভীতির সঞ্চার করে। সীমান্তে দাঁড়িয়ে এই সাহসীরা আজও পাহাড়ের মতো অবিচল। তাঁদের সাহসিকতা, কর্তব্যপরায়ণতা এবং আত্মত্যাগ ভারতবাসীর কাছে চিরকাল স্মরণীয় থাকবে (Indian Air Force)।