HAMMER Missile : ‘অপারেশন সিন্দুর’-এ পাকিস্তানের ত্রাস ছিল HAMMER ক্ষেপণাস্ত্র! কীভাবে লক্ষ্যভেদ করে?

ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: ভারতের প্রতিরক্ষা কৌশলে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা ঘটিয়েছে HAMMER  মিসাইল, যা সম্প্রতি ‘অপারেশন সিন্দুর’-এ ব্যবহার করা হয় বলে সূত্র মারফত জানা গিয়েছে(HAMMER Missile)। এই ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তি ভারতের আকাশ থেকে ভূমিতে নিখুঁত ও দূরপাল্লার আঘাত হানার সক্ষমতা বহুগুণ বাড়িয়েছে।বিশেষজ্ঞদের মতে, HAMMER-এর সফল ব্যবহার ভারতের স্ট্র্যাটেজিক ডিটারেন্স বা প্রতিরোধ ক্ষমতাকে নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছে। HAMMER (Highly Agile Modular Munition Extended Range) মিসাইল ভারতের রাফাল ফাইটার (Indian Air Force) জেটের সঙ্গে যুক্ত হয়ে উঠেছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অস্ত্র। এর প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতা, নিখুঁত লক্ষ্যভেদ ক্ষমতা এবং কৌশলগত নমনীয়তা একে আধুনিক যুদ্ধক্ষেত্রে অত্যন্ত কার্যকরী করে তুলেছে। 

HAMMER কী? (HAMMER Missile)

HAMMER হল একটি স্মার্ট, মডুলার, এয়ার-টু-গ্রাউন্ড প্রিসিশন গাইডেড মিসাইল সিস্টেম, যেটি ফরাসি প্রতিরক্ষা সংস্থা Safran Electronics & Defense দ্বারা তৈরি। এটি মূলত সাধারণ বোমাকে একটি স্মার্ট মিসাইলে রূপান্তরিত করে। অর্থাৎ এটি একটি “kit”, যা একটি dumb bomb বা সাধারণ বোমার সঙ্গে যুক্ত হয়ে সেটিকে long-range, precision strike অস্ত্রে রূপ দেয়।

প্রযুক্তিগত বৈশিষ্ট্য(HAMMER Missile)

• ধরন: Precision-guided air-to-ground missile
• পরিসর (Range): প্রাথমিক মডেলে প্রায় ৭০ কিমি, উন্নত সংস্করণে ৭০–৭০৫ কিমি পর্যন্ত
• ওজন: বিভিন্ন সংস্করণে ২৫০ কেজি থেকে ১০০০ কেজি পর্যন্ত বোমা বহনে সক্ষম
• নির্দেশনা পদ্ধতি: GPS, Inertial Navigation System (INS), এবং Electro-optical guidance
• Strike Accuracy: CEP (Circular Error Probability) মাত্র কয়েক মিটারের মধ্যে — যার মানে অত্যন্ত নিখুঁত

HAMMER-এর সবচেয়ে বড় শক্তি এর modular design, অর্থাৎ পরিস্থিতি অনুসারে এটি বিভিন্ন টাইপের গাইডেন্স ও প্রপালশন ইউনিটের সঙ্গে কাস্টমাইজ করা যায়।

আরও পড়ুন:SCALP Missile : ‘অপারেশন সিন্দুর’-এ আঘাত হানে ঘাতক মিসাইল SCALP! কতটা ভয়ঙ্কর মিসাইল?

ভারতের হাতে HAMMER এল কীভাবে?(HAMMER Missile)

২০২০ সালে ভারত যখন চীন সীমান্তে পূর্ব লাদাখে উত্তেজনার মুখে পড়ে, তখন রাফাল ফাইটার জেট দ্রুত ফ্রান্স থেকে আনা হয়(HAMMER Missile)। সেই সময়েই একটি জরুরি ভিত্তিক চুক্তিতে HAMMER মিসাইলের একটি ব্যাচ ফ্রান্স থেকে কেনা হয়, যাতে এই নতুন যুদ্ধবিমানগুলিকে সর্বোচ্চ অস্ত্র ক্ষমতায় সজ্জিত করা যায়।২০২১ সালের প্রথমদিকে এই মিসাইল ভারতীয় বায়ুসেনার অস্ত্রাগারে যুক্ত হয় এবং তাৎক্ষণিকভাবে লাদাখ ও অরুণাচল প্রদেশ সংলগ্ন এলাকা সহ সীমান্ত অঞ্চলে মোতায়েন করা হয়।

আরও পড়ুন: Shahbaz Sharif : ‘অপারেশন সিন্দুর’ ঘিরে ব্যাপক উত্তেজনা! পাক প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ বললেন, “act of war”

কেন গুরুত্বপূর্ণ HAMMER মিসাইল?(HAMMER Missile)

ভারতের কাছে এর আগে SPICE 2000, SCALP, এবং ব্রহ্মোস-এর মতো শক্তিশালী অস্ত্র থাকলেও, HAMMER একটি ভিন্ন ঘরানার সমাধান প্রদান করে(HAMMER Missile)। এটি মূলত নিম্ন থেকে মধ্যপাল্লার লক্ষ্যবস্তুতে অত্যন্ত নির্ভুলভাবে আঘাত হানার জন্য ব্যবহৃত হয় — বিশেষ করে যেসব এলাকায় জিপিএস জ্যামিং, স্যাম প্রতিরক্ষা বা প্রতিকূল আবহাওয়া রয়েছে।HAMMER মিসাইল নিম্ন উচ্চতায় লক্ষ্যভেদে পারদর্শী হওয়ায় এটি পাহাড়ি অঞ্চল বা জনবহুল এলাকায় নির্দিষ্ট স্থানে আঘাত হানার উপযোগী।

জঙ্গি দমনে ‘স্মার্ট অস্ত্রের’ ভূমিকা(HAMMER Missile)

৭ মে ২০২৫-এ ভারত ‘অপারেশন সিন্দুর’-এ পাকিস্তান ও পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরে (PoK) অবস্থিত জঙ্গি ঘাঁটিতে হামলা চালায়(HAMMER Missile)। সামরিক সূত্রের দাবি, এই অভিযানে SCALP-এর পাশাপাশি HAMMER মিসাইলও ব্যবহৃত হয়, বিশেষ করে পাহাড়ি ও সুরক্ষিত লক্ষ্যবস্তুতে।পাহেলগামে জঙ্গি হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার পর ভারত এই প্রতিক্রিয়া নেয়। রাফাল থেকে উৎক্ষেপিত HAMMER মিসাইল দিয়ে কোটলি ও মুজাফ্‌ফরাবাদ অঞ্চলের কয়েকটি নির্দিষ্ট জঙ্গি ঘাঁটি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়।

আরও পড়ুন: Turkey Backs Pakistan : পাকিস্তানের পাশে তুরস্ক, দীর্ঘ সংঘর্ষের আশঙ্কা! ‘অপারেশন সিন্দুর’-এর পর কী প্রতিক্রিয়া তুরস্কের?

HAMMER বনাম অন্যান্য অস্ত্র(HAMMER Missile)

এই তুলনা থেকে স্পষ্ট যে, HAMMER একটি মাঝারি পাল্লার নিখুঁত আঘাত হানার অস্ত্র, যা tactical এবং urban scenario-তে দারুণ কার্যকর।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও কূটনৈতিক গুরুত্ব(HAMMER Missile)

HAMMER মিসাইলের ব্যবহার ভারতের কাছে শুধু একটি প্রতিরক্ষা অগ্রগতি নয়, বরং কূটনৈতিক বার্তাও(HAMMER Missile)। সন্ত্রাসবাদকে আশ্রয় দেওয়া অঞ্চলে surgical strike চালানোর জন্য এটি আদর্শ অস্ত্র — যা collateral damage কমিয়ে দেয়, অথচ কার্যকরভাবে সন্ত্রাসী পরিকাঠামো ধ্বংস করে। বিশ্বে এই ধরনের প্রযুক্তির মালিক হাতে গোনা কয়েকটি দেশ — ফ্রান্স, ইসরায়েল, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং এখন ভারত। এটি ভারতের ‘প্রতিরক্ষায় আত্মনির্ভরতা’ নীতিকে আরও এগিয়ে নিয়ে যায় এবং দেশের বিমানবাহিনীর ‘precision strike capability’-কে সুরক্ষিত করে।

কঠোর বার্তা (HAMMER Missile)

HAMMER মিসাইল ভারতের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত সংযোজন। সীমান্তের উত্তেজনাপূর্ণ প্রেক্ষাপটে এবং ক্রমবর্ধমান হুমকির মুখে, এই স্মার্ট অস্ত্র ভারতীয় বিমানবাহিনীকে প্রদান করছে নিখুঁততা, নমনীয়তা এবং প্রতিক্রিয়ার দ্রুততা। এই মিসাইলের অস্তিত্বই যেন প্রতিপক্ষের কাছে এক কঠোর বার্তা — সীমান্ত পার করে সন্ত্রাস ছড়ালে, প্রতিক্রিয়াও আসবে আকাশ থেকে, নিখুঁত ও নির্দয়ভাবে।