Last Updated on [modified_date_only] by Suparna Ghosh
ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: বাংলা বলার জন্য বাংলাদেশি সন্দেহে বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকদের(Migrant Workers)ওড়িশা ও দিল্লিতে আটক করা এবং পুশব্যাক করে বাংলাদেশে পাঠানোর মামলায় আগামী ২৮ জুলাইয়ের মধ্যে কেন্দ্রের কাছে হলফনামা তলব করলেন বিচারপতি তপব্রত চক্রবর্তী এবং বিচারপতি ঋতব্রতকুমার মিত্রের ডিভিশন বেঞ্চ।
হাইকোর্টের প্রশ্নের মুখে কেন্দ্র(Migrant Workers)
বুধবার শুনানিতে এই মামলায় কেন্দ্রের উদ্দেশ্যে একাধিক প্রশ্ন তুলেছে হাইকোর্ট(Calcutta High Court)। সারা দেশ জুড়ে কেন একই সময়ে বাংলাদেশি চিহ্নিতকরণের কাজ শুরু হল? সমস্ত রাজ্যের জন্য কেন জুন মাসকেই বেছে নেওয়া হল? এটা কি পূর্ব পরিকল্পিত? এর পিছনে কারণ কী? তা জানতে চান দুই বিচারপতি। বিচারপতি তপব্রত চক্রবর্তী কেন্দ্রের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘পুলিশ বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি অভিযানে যায়। একই সময়ে তল্লাশি শুরু হতে পারে। এর পিছনে একটি কারণ থাকে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে কী কারণ রয়েছে? পূর্ব পরিকল্পিত ভাবেই কি এটা করা হচ্ছে? অভিযোগ উঠছে, বাংলায় কথা বলার জন্য পরিযায়ী শ্রমিকদের(Migrant Workers)আটক করা হচ্ছে এবং বাংলাদেশে পাঠানো হচ্ছে। তাই আমি অনুরোধ করব এই বিষয়টি জানানো হোক। কারণ, এটা না হলে ভুল বার্তা যেতে পারে। কোনও ভুল পদক্ষেপ হতে পারে।’
উদ্বেগপ্রকাশ রাজ্যের আইনজীবীর(Migrant Workers)
রাজ্যের আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বুধবার শুনানিতে বলেন, ‘আমরা বীরভূমে খোঁজ নিয়ে দেখেছি। তাঁরা শ্রমিক। তাঁদের বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। অথচ তাদের পরিবার কিছুই জানেনা।’ কেন্দ্রের ডেপুটি সলিসিটর জেনারেল ধীরজ ত্রিবেদী আদালতকে জানান, পহেলগাঁওে জঙ্গি হামলার পর থেকে সন্দেহজনক গতিবেতি দেখলেই ডেকে পাঠানো হচ্ছে। বাংলা বললেই সবাইকে কাউকে আটক করা হচ্ছে না। সন্দেহজনক কারণে ১৬৫ জনকে আটক করা হয়েছিল। তার মধ্যে ৫ জনকে নির্দিষ্ট কারণেই বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। ওই পাঁচজনই স্বীকার করেছেন যে তাঁরা বাংলাদেশী। এবং বাকিদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
তথ্য গোপনের অভিযোগ সিবিআই-এর আইনজীবীর(Migrant Workers)
এদিন মামলার শুনানিতে মামলাকারীদের বিরুদ্ধে তথ্য গোপন করার অভিযোগ তোলেন সিবিআই-এর আইনজীবী। তিনি হাইকোর্টকে জানান, দিল্লি হাইকোর্টে আগেই এই ৬ মামলাকারীর পক্ষ থেকে মামলা করা হয়েছে। গত ২৪ জুন, দিল্লি হাইকোর্ট তাঁদের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতেই বাংলাদেশে পাঠানোর নির্দেশ দেয়। কারণ তাঁরা অবৈধ অভিবাসী। গত ২৬ জুন তাঁদের বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। দিল্লি হাইকোর্টের সেই নির্দেশের বিষয়টি না জানিয়েই ফের কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করা হয়েছে।
হাইকোর্টকে ভুল তথ্য দেওয়ার অভিযোগ কেন্দ্রের আইনজীবীর
মামলায় তথ্য গোপন করার অভিযোগ তুলে কেন্দ্রের অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল অশোককুমার চক্রবর্তী এই মামলার গ্রহণযোগ্যতা নিয়েই প্রশ্ন তোলেন। এদিন তিনি আদালতে বলেন, এই মামলা শোনার এক্তিয়ার কলকাতা হাইকোর্টের নেই। কারণ একই বিষয়ে আগেই দিল্লি হাইকোর্টে মামলা দায়ের হয়েছে। সেখানে মামলা বিচারাধীন রয়েছে। একই ব্যক্তির নামে কলকাতা হাইকোর্টেও মামলা দায়ের করা হয়েছে। কলকাতা হাইকোর্টকে ভুল তথ্য দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেন কেন্দ্রের আইনজীবী। আদালতকে তথ্য না জানানোর কথা শুনে বিচারপতি তপব্রত চক্রবর্তী মামলাকারীদের আইনজীবীকে তীব্র ভর্ৎসনা করেন। এবং কেন্দ্রকে গোটা বিষয়ে আগামী ২৮ জুলাইয়ের মধ্যে হলফনামা জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে ডিভিশন বেঞ্চ। তার পরেই এ বিষয়ে পরবর্তী প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেওয়া হবে বলে জানায়েছে ডিভিশন বেঞ্চ।।আগামী ৪ আগস্ট এই মামলার পরবর্তী শুনানি রয়েছে।
কেন্দ্রের আইনজীবীকে কটাক্ষ কল্যাণের
এদিন রাজ্যের আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় আদালতে বলেন, বাংলায় কথা বলার জন্য অনেককে হেনস্থা করা হচ্ছে বলে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ কথা হল, কে ভারতীয় নাগরিক, আর কে নয়! তা কীভাবে নির্ধারণ করা হল? কতজনকে আটক করা হয়েছে, আর কতজনকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে, তা তথ্য দিয়ে জানাক কেন্দ্র।’ কেন্দ্রের আইনজীবী ধীরজ ত্রিবেদীকেও কটাক্ষ করতে ছাড়েননি? কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। ধীরজ ত্রিবেদীর উদ্দেশ্যে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘এরপর হয়তো দ্বিবেদী, ত্রিবেদী, পান্ডেরাই থাকবে। আমাদের হয়তো চলে যেতে বলা হবে।’
কেন্দ্রের থেকে হলফনামা তলব হাইকোর্টের(Migrant Workers)
উল্লেখ্য, বাংলা বলার কারণে দিল্লি পুলিশ আটক করে বাংলাদেশে পুশবব্যাক করা হয় বীরভূমের ৬ পরিযায়ী শ্রমিককে(Migrant Workers)। তাঁদের পরিবার কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন। সেই মামলায় গত শুনানিতে রাজ্যের মুখ্যসচিব ও দিল্লির মুখ্যসচিবকে সমন্বয়সাধন করে বিষয়টি নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে রিপোর্ট পেশের নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি তপব্রত চক্রবর্তীর ডিভিশন বেঞ্চ। এছাড়াও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রককে বিস্তারিত রিপোর্ট পেশ করতেও নির্দেশ দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি তপব্রত চক্রবর্তীর ডিভিশন বেঞ্চে। এবার কেন্দ্রকে সমস্ত পরিস্থিতি নিয়ে কেন্দ্রের থেকে হলফনামা তলব করল হাইকোর্ট।