ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: হিমাচলের মন্ডী জেলার সিয়াথি গ্রামে (Himachal Flash Floods) কয়েক সেকেন্ডের ব্যবধানেই ঘটে যেতে পারত ভয়াবহ এক বিপর্যয়। ৩০ জুন গভীর রাতে গ্রামের মানুষ তখন ঘুমের মধ্যে। রাত তখন প্রায় ১টা। বাইরে প্রবল বৃষ্টি চলছে। চারপাশ নিঃস্তব্ধ, হঠাৎই গ্রামের এক কুকুর দোতলায় উঠে বিকট শব্দে চিৎকার করতে থাকে।
কুকুরের ডাকেই ভাঙে ঘুম (Himachal Flash Floods)
ঘুম ভেঙে যায় স্থানীয় বাসিন্দা (Himachal Flash Floods) নরেন্দ্রর। প্রথমে বিরক্ত হলেও কিছুক্ষণের মধ্যে কুকুরের ডাকের স্বর বদলাতে থাকে তাতে একটা অদ্ভুত উৎকণ্ঠা জন্মায়। তিনি তিনতলা থেকে নিচে নেমে এসে চারদিক পর্যবেক্ষণ করতে শুরু করেন। তখনই তাঁর কানে আসে ঘড়ঘড় করে কিছু এগিয়ে আসার ভয়ঙ্কর শব্দ। দেওয়ালের দিকে তাকাতেই দেখেন ফাটল ধরছে, এবং সেই ফাটল দ্রুত চওড়া হয়ে উঠছে।
ক্রমাগত চিৎকার করে চলছিল (Himachal Flash Floods)
তৎক্ষণাৎ তিনি বুঝতে পারেন, এটা সাধারণ কোনও ঘটনা নয় বিপদ (Himachal Flash Floods) আসছে। তিনি পরিবারের সদস্যদের জাগিয়ে তুলে বাইরে বেরিয়ে যান। এরপর শুরু হয় গোটা গ্রামে সতর্কবার্তা পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা। চিৎকার করে তিনি গ্রামের বাকি ২০টি পরিবারকে ঘর থেকে বের করে আনেন। উল্লেখযোগ্যভাবে, সেই কুকুরটিও নরেন্দ্রর সঙ্গে সঙ্গে ছুটছিল, ক্রমাগত চিৎকার করে চলছিল।
মর্মান্তিক ঘটনা
সবাই মিলে গ্রাম সংলগ্ন একটি উঁচু মন্দিরে আশ্রয় নেন। আর ঠিক কয়েক মিনিটের মধ্যেই ঘটে সেই মর্মান্তিক ঘটনা পাহাড় থেকে নেমে আসে ভয়ঙ্কর হড়পা বান। বিশাল জলরাশি আর পাথরের তোড়ে একের পর এক বাড়ি মাটির সঙ্গে মিশে যায়। চোখের সামনে ভেসে যায় বছরের পর বছর ধরে গড়ে তোলা সংসার।

ভয়াবহ দৃশ্য
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, এই ভয়াবহ দৃশ্য কেউ ভুলতে পারছেন না। কেউ কেউ মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন, অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। গোটা গ্রাম প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। বাড়ির কিছু টিন আর ইট ছাড়া আর কিছুই পড়ে নেই। নরেন্দ্র জানিয়েছেন, যদি কুকুরটি সেই রাতে এমনভাবে চিৎকার না করত, তাহলে হয়তো তাঁদের মধ্যে একজনও বেঁচে থাকতেন না। ৬৭ জনের প্রাণ বাঁচানোর পিছনে ছিল শুধুমাত্র একটি পশুর সচেতনতা। আজ তাঁদের একমাত্র ঠিকানা সেই মন্দির, যেখানে তাঁরা গত এক সপ্তাহ ধরে আশ্রয় নিয়েছেন।
আরও পড়ুন: Petrol Diesel Price: শীঘ্রই কমতে পারে পেট্রোল-ডিজেলের দাম, স্বস্তিতে গ্রাহকরা
হিমাচল প্রদেশে এবারের বর্ষা যেন দুর্যোগের রূপে দেখা দিয়েছে। মন্ডী জেলা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। মেঘভাঙা বৃষ্টি, হড়পা বান সব মিলিয়ে রাজ্যে এখনও পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ৭৮ ছাড়িয়েছে। নিখোঁজ বহু মানুষ। ভয়াবহ এই দুর্যোগের মধ্যে কুকুরের তৎপরতা ও এক ব্যক্তির সাহসিকতাই রক্ষা করল একটি গোটা জনপদকে।