ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: ইউক্রেনীয় সাংবাদিক ভিক্টোরিয়া রোশচিনা ২০২৩ সালে রাশিয়া-অধিকৃত জাপোরিঝিয়ায় একটি রিপোর্টিং মিশনে গিয়েছিলেন (Horrifying Tale of Viktoriia Roshchyna)। তবে, ২৭ বছর বয়সী এই তরুণীকে রাশিয়ানরা ধরে ফেলে এবং সবচেয়ে নৃশংস আটক কেন্দ্রগুলির মধ্যে একটিতে রাখা হয়, যেখানে তাকে নির্যাতন করা হয় বলে জানা গিয়েছে। ফেব্রুয়ারিতে যখন রোশচিনার মৃতদেহ ইউক্রেনে ফিরিয়ে আনা হয় তখন তাতে ‘অসংখ্য নির্যাতনের চিহ্ন’ ছিল।
সাহসী সাংবাদিকের করুণ পরিণতি (Horrifying Tale of Viktoriia Roshchyna)
২৭ বছর বয়সী ইউক্রেনীয় সাংবাদিক ভিক্টোরিয়া রোশচিনা রাশিয়ার বন্দিদশায় নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন (Horrifying Tale of Viktoriia Roshchyna)। ২০২৩ সালের আগস্ট মাসে রাশিয়া-অধিকৃত ইউক্রেনের জাপোরিঝিয়া অঞ্চলে রিপোর্টিং করতে গিয়ে তিনি নিখোঁজ হন। দীর্ঘ নয় মাস পর, ২০২৪ সালের মে মাসে রাশিয়া তার বন্দিত্বের বিষয়টি স্বীকার করে।
অমানবিক নির্যাতনের চিহ্ন (Horrifying Tale of Viktoriia Roshchyna)
২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে রোশচিনার (Horrifying Tale of Viktoriia Roshchyna) মরদেহ ইউক্রেনে ফেরত পাঠানো হয়। মরদেহটি “অজ্ঞাত পুরুষ” হিসেবে চিহ্নিত ছিল, কিন্তু ডিএনএ পরীক্ষায় তার পরিচয় নিশ্চিত হয়। ফরেনসিক পরীক্ষায় দেখা যায়, তার দেহে অসংখ্য নির্যাতনের চিহ্ন রয়েছে—ভাঙা পাঁজর, বৈদ্যুতিক শকের দাগ, ছুরির আঘাত এবং মাথার খুলি মুণ্ডিত। সবচেয়ে ভয়াবহ বিষয় হলো, তার চোখ, মস্তিষ্ক এবং শ্বাসনালী অনুপস্থিত ছিল, যা মৃত্যুর কারণ গোপন করতে ইচ্ছাকৃতভাবে সরানো হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বন্দিদশায় অমানবিক পরিস্থিতি
রোশচিনা প্রথমে এনারগোদারে আটক হন এবং পরে মেলিতোপোলের একটি গোপন বন্দিশিবিরে স্থানান্তরিত হন, যেখানে তিনি চার মাস ধরে অমানবিক নির্যাতনের শিকার হন। এরপর তাকে রাশিয়ার টাগানরোগের berüchtigte সিজো-২ কারাগারে পাঠানো হয়, যা তার বন্দিদশার শেষ গন্তব্য ছিল। সেখানে তিনি একাকী অবস্থায় মানসিক ও শারীরিকভাবে ভেঙে পড়েন। সাক্ষাৎকারে তার সহবন্দিরা জানান, রোশচিনা খাবার গ্রহণ বন্ধ করে দেন এবং তার ওজন মাত্র ৩০ কেজিতে নেমে আসে।
সাংবাদিকতার প্রতি অটল নিষ্ঠা
রোশচিনা ছিলেন একজন নির্ভীক সাংবাদিক, যিনি রাশিয়া-অধিকৃত অঞ্চলে সাধারণ মানুষের ওপর নির্যাতন ও গোপন বন্দিশিবির সম্পর্কে রিপোর্ট করতেন। তিনি হ্রোমাডস্কে টিভি, ইউক্রেইনস্কা প্রাভদা এবং রেডিও ফ্রি ইউরোপের জন্য কাজ করতেন। ২০২২ সালে তিনি ইন্টারন্যাশনাল উইমেন’স মিডিয়া ফাউন্ডেশন থেকে “কারেজ ইন জার্নালিজম” পুরস্কার লাভ করেন।
আন্তর্জাতিক তদন্তের দাবি
রোশচিনার মৃত্যুর পর ইউক্রেন সরকার এটিকে যুদ্ধাপরাধ হিসেবে তদন্ত শুরু করেছে। ফরাসি ফরেনসিক বিশেষজ্ঞদের সহায়তায় তদন্ত চলছে। রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থা তার মৃত্যুর পূর্ণাঙ্গ তদন্তের দাবি জানিয়েছে।
আরও পড়ুন: US-Ukraine Minerals Deal: যুক্তরাষ্ট্র-ইউক্রেন খনিজ সম্পদ চুক্তি! কিয়েভের পুনর্গঠনে নতুন দিগন্ত
সাংবাদিকতার জন্য চরম আত্মত্যাগ
ভিক্টোরিয়া রোশচিনার মৃত্যু সাংবাদিকতার জন্য এক চরম আত্মত্যাগের উদাহরণ। তিনি তার পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে নির্মম নির্যাতনের শিকার হন এবং প্রাণ হারান। তার এই আত্মত্যাগ বিশ্বজুড়ে সাংবাদিকদের জন্য এক অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।