ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: যদিও ইজরায়েলি পরিসংখ্যান বলছে যে এই অনুপ্রবেশের সাফল্যের হার সীমিত (Iran Penetrate Iron Dome), তবুও তারা সবচেয়ে উন্নত বিমান প্রতিরক্ষা নেটওয়ার্কের দুর্বলতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে।
আধুনিক প্রযুক্তির পরেও ইজরায়েল ভেদ করছে ইরানের হামলা (Iran Penetrate Iron Dome)
বিশ্বের অন্যতম উন্নত ও বহুস্তরীয় আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা থাকার পরেও ইরানের কিছু ক্ষেপণাস্ত্র ইজরায়েলের আকাশরক্ষাকে ভেদ করতে পেরেছে (Iran Penetrate Iron Dome)। সম্প্রতি সংঘর্ষের উত্তেজনা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই ঘটনা ঘন ঘন ঘটছে। ইজরায়েল দাবি করছে, এই অনুপ্রবেশের হার খুবই কম, তবে তাও এই ঘটনার ফলে প্রশ্ন উঠছে—প্রযুক্তিগতভাবে অত্যাধুনিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাও কি নির্ভরযোগ্য? যখন প্রতিপক্ষ কৌশলী ও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হয়, তখন প্রতিরক্ষার সীমাবদ্ধতাগুলো স্পষ্ট হয়ে যায়।
স্যাচুরেশন অ্যাটাক বা একযোগে ব্যাপক হামলা (Iran Penetrate Iron Dome)
ইরান মূলত ইজরায়েলের প্রতিরক্ষাকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে একসঙ্গে প্রচুর ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন ছুঁড়ে, যাকে বলা হয় স্যাচুরেশন অ্যাটাক (Iran Penetrate Iron Dome)। ইজরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কয়েকটি স্তরে বিভক্ত—ছোট রেঞ্জের রকেট আটকাতে আয়রন ডোম, মাঝারি রেঞ্জের জন্য ডেভিড’স স্লিং, এবং দূর পাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র আটকাতে অ্যারো-২ ও অ্যারো-৩, যারা উচ্চস্তরে এমনকি মহাকাশেও প্রতিরোধ করতে সক্ষম। এই প্রতিটি ব্যবস্থার নির্ধারিত লক্ষ্যবস্তু ঠেকানোর ক্ষমতা থাকলেও, যখন একসঙ্গে শত শত ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়, তখন তা প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে অতিরিক্ত চাপে ফেলে। ইরান ঠিক এই কৌশল নিয়েছে—একযোগে হামলা চালিয়ে ইজরায়েলের ইন্টারসেপ্টর ক্ষেপণাস্ত্রগুলো শেষ করে দেওয়া এবং প্রতিরক্ষার মধ্যে ফাঁক তৈরি করা।
হামলার ধরনে বৈচিত্র্য (Iran Penetrate Iron Dome)
ইরান কেবল সংখ্যায় নয়, ক্ষেপণাস্ত্রের ধরনেও বৈচিত্র্য এনেছে (Iran Penetrate Iron Dome)। তারা ব্যবহার করছে বিভিন্ন গতি ও উড়ান পথবিশিষ্ট ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন। ধীরগতির, নিচু দিয়ে উড়া ড্রোন যেমন প্রতিরক্ষাকে বিভ্রান্ত করে, তেমনি উচ্চ গতিসম্পন্ন ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রও রয়েছে। ইরানের হজ কাসেম ও সেজ্জিল নামের কিছু ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হাইপারসনিক গতিতে (ম্যাক ৫-এর উপরে) উড়ে প্রথমে মহাকাশের দিকে উঠে গিয়ে পরে আবার দ্রুত বায়ুমণ্ডলে ঢুকে পড়ে। এইরকম ক্ষেপণাস্ত্র আটকানোর সময় খুবই কম, ফলে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা চটজলদি প্রতিক্রিয়া জানাতে ব্যর্থ হয়। ভিন্ন ভিন্ন গতির ও ওড়ার পথের সংমিশ্রণ একটি জটিল পরিস্থিতি তৈরি করে, যার ফলে প্রতিরক্ষার সমন্বয় ভেঙে পড়তে পারে।
উন্নত কৌশল ও প্রযুক্তি
বিভিন্ন রিপোর্টে জানা যাচ্ছে, ইরান আরও উন্নত প্রযুক্তি ও কৌশল ব্যবহার করছে। ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পস (IRGC) দাবি করেছে, তারা এমন এক কৌশল ব্যবহার করছে যাতে ইজরায়েলের ইন্টারসেপ্টর ক্ষেপণাস্ত্র একে অপরকে আক্রমণ করে বসে, ফলে ইজরায়েলের সমন্বিত প্রতিরক্ষা বিভ্রান্ত হয়। এই ‘স্পুফিং’ কৌশলের সমস্ত বিবরণ এখনও প্রকাশ্যে আসেনি, তবে মনে করা হচ্ছে যে এটি ইজরায়েলের লক্ষ্য নির্ধারণ ও আক্রমণ লজিকের দুর্বলতা কাজে লাগানোর চেষ্টা। কিছু ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রে আছে ম্যানুভারেবল রি-এন্ট্রি ভেহিকল (MaRV) এবং কিছু আবার ভুয়ো লক্ষ্যবস্তু ছুঁড়ে দেয়, ফলে ক্ষেপণাস্ত্রের গতিপথ জটিল হয়ে যায় ও প্রতিরক্ষা বিভ্রান্ত হয়।
আকাশ প্রতিরক্ষার খরচ ও সীমাবদ্ধতা
ইজরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল এর খরচ। আয়রন ডোম তুলনামূলকভাবে সস্তা হলেও, অ্যারো বা ডেভিড’স স্লিং-এর ইন্টারসেপ্টর অত্যন্ত ব্যয়বহুল। যদি ইরান একটানা প্রচুর ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়ে দেয়, তাহলে ইজরায়েলকে এই ব্যয়বহুল অস্ত্র অনেক বেশি হারে ব্যবহার করতে হয়, যা ভবিষ্যতে অস্ত্রভান্ডারে টান ফেলতে পারে। এই কারণে, অনেক সময় ইজরায়েল সিদ্ধান্ত নেয় কিছু ক্ষেপণাস্ত্র যদি জনবসতিহীন এলাকায় গিয়ে পড়ে, তবে সেগুলো আটকানোর দরকার নেই। ফলে ইচ্ছাকৃতভাবে কিছু ক্ষেপণাস্ত্র ফাঁকি দিয়ে ঢোকার সুযোগ পায়।
আরও পড়ুন: Iran Israel Conflict : ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি দু’বছর পিছোল, দাবি ইজরায়েলের!
‘লিকেজ রেট’-এর বাস্তবতা
ইজরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা যতই উন্নত হোক, কোনও ব্যবস্থাই একশো শতাংশ সফল নয়। ইজরায়েল বলছে তাদের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধের হার ৮০-৯০ শতাংশ, কিন্তু এত বড় হামলার মধ্যে ৫-১০ শতাংশ ক্ষেপণাস্ত্র যদি ঢুকেও পড়ে, তাও তা বড় ক্ষতি করতে পারে। বিশেষ করে যদি লক্ষ্য হয় জনবহুল এলাকা বা গুরুত্বপূর্ণ সামরিক স্থাপনা—যেমন তেল আভিভের কিরিয়া কমপ্লেক্স, যা সম্প্রতি উল্লেখযোগ্য ক্ষতির মুখে পড়েছে।
এই সীমাবদ্ধতা এবং ইরানের দিন দিন উন্নত হওয়া ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তি ও কৌশলের ফলে কিছু ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ভেদ করে ঢুকছে। যার ফলে স্পষ্ট হচ্ছে—যুদ্ধক্ষেত্রে বড় আকারের ও বহুস্তরীয় ক্ষেপণাস্ত্র হামলার মোকাবিলা করা দিন দিন আরও কঠিন হয়ে উঠছে।